• প্রশ্নের মুখে নির্বাচন কমিশন...
    আজকাল | ০৯ অক্টোবর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিহারে নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগে ২০২৫ সালের জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলা ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (Special Intensive Revision – SIR) প্রক্রিয়ায় মুসলমানদের নাম বাদ পড়ার হার অন্যান্যদের তুলনায় অনেক বেশি হয়েছে বলে সাম্প্রতিক তথ্য বিশ্লেষণে জানা গেছে।

    নির্বাচন কমিশনের এই বিশাল কর্মসূচিতে মোট ৬৫ লাখ ৭৫ হাজারেরও বেশি ভোটারকে প্রাথমিকভাবে যাচাইয়ের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছিল। এর মধ্যে প্রায় ২৪.৭ শতাংশের নাম ছিল মুসলিম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যারা স্থায়ীভাবে তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন, সেই ৩ লাখ ২৩ হাজার ৩৭২ জন ভোটারের মধ্যে মুসলমানদের অংশ ৩২.১ শতাংশ। অর্থাৎ, যাচাইয়ের তালিকায় নাম উঠলে মুসলমান ভোটারের ভোটাধিকার হারানোর সম্ভাবনা অন্যদের তুলনায় ৫০ শতাংশেরও বেশি ছিল।

    দুই ধাপে বাদ যাওয়া ভোটারদের পরিসংখ্যান

    নির্বাচন কমিশনের এই বিশেষ সংশোধন প্রক্রিয়া মূলত দুই ধাপে সম্পন্ন হয়।

    প্রথম ধাপ:প্রাথমিকভাবে কর্মকর্তারা ৬৫,৭৫,২২২ জন ভোটারের নাম যাচাইয়ের জন্য চিহ্নিত করেন। এদের মধ্যে—

    অমুসলিম ভোটার: ৪৮,৭৫,৭৩৮ জন

    মুসলমান ভোটার: ১৬,২৬,৯৯০ জন (মোটের ২৪.৭%)

    দ্বিতীয় ধাপ:দাবি-আপত্তি ও মাঠপর্যায়ের পুনঃযাচাই শেষে যাদের নাম স্থায়ীভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে, তাদের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩,২৩,৩৭২ জন। এর মধ্যে—

    অমুসলিম ভোটার বাদ পড়েছেন: ২,০৩,৬৫১ জন

    মুসলমান ভোটার বাদ পড়েছেন: ১,০৩,৭২৪ জন (মোট বাদ পড়াদের ৩২.১%)

    বাদ পড়ার হার কী দেখায়

    পরিসংখ্যান বলছে, যেসব ভোটার যাচাইয়ের তালিকায় এসেছিলেন, তাঁদের মধ্যে অমুসলিম ভোটারের ৪.১৮ শতাংশ শেষ পর্যন্ত বাদ গেছেন। অন্যদিকে মুসলমান ভোটারদের মধ্যে এই হার ৬.৩৮ শতাংশ। অর্থাৎ, মুসলমান নামযুক্ত ভোটারের ভোটাধিকার হারানোর ঝুঁকি ছিল অন্যদের তুলনায় অন্তত দেড়গুণ।

    সীমাঞ্চলে সর্বাধিক বৈষম্য

    এই বৈষম্য রাজ্যের সর্বত্র সমান ছিল না। সর্বাধিক চোখে পড়েছে সীমাঞ্চল (Seemanchal) এলাকায়, যেখানে মুসলমান জনসংখ্যা তুলনামূলক বেশি। কিশনগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্র (AC 54)-এ দেখা গেছে, মুসলমান ভোটারদের বাদ পড়ার হার ৩.৭ শতাংশ, যা অমুসলিমদের ১.৯ শতাংশের প্রায় দ্বিগুণ। একইভাবে আরারিয়া, সিক্তা, কাটিহার ও জোখিহাট এই চার কেন্দ্রেই প্রায় ১৪ হাজার মুসলমান ভোটারের নাম স্থায়ীভাবে ভোটার তালিকা থেকে মুছে দেওয়া হয়েছে—

    আরারিয়া: ৪,১৮২ জন

    সিক্তা: ৪,০৪০ জন

    কাটিহার: ৩,৬৪৪ জন

    জোখিহাট: ২,৮৩৬ জন

    জনসংখ্যাগত কারণে মুসলমানদের নাম বেশি বাদ পড়া স্বাভাবিক হলেও, তাঁদের বাদ পড়ার শতাংশ বেশি হওয়াই বিশেষ উদ্বেগের কারণ বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। যদি প্রক্রিয়াটি নিরপেক্ষ হতো, তবে মুসলমান ও অমুসলিম—দুই শ্রেণির মধ্যে বাদ পড়ার হার প্রায় একই হওয়ার কথা ছিল।

    কমিশনের দাবি ও প্রশ্ন

    নির্বাচন কমিশন ৩০ সেপ্টেম্বরের এক বিবৃতিতে এই বিশেষ নিবিড় সংশোধন অভিযানকে “একটি বিশাল সাফল্য” বলে ঘোষণা করে এবং জানায় যে রাজ্যের ১২টি প্রধান রাজনৈতিক দলের মোট ১.৬ লক্ষ বুথ লেভেল এজেন্ট (BLA) এতে অংশ নিয়েছিলেন। তবে তথ্য বলছে, এই ‘সাফল্য’-এর আড়ালে এক বিশেষ সম্প্রদায়ের ভোটারদের অস্বাভাবিক হারে বাদ পড়া হয়েছে, যা কমিশনের “কোনও যোগ্য ভোটার বাদ না পড়বে” এই মূল নীতির পরিপন্থী।

    পরবর্তী পদক্ষেপ

    এখন প্রশ্ন উঠছে—কেন এমন বৈষম্যমূলক ফলাফল দেখা গেল? তালিকা তৈরির মাঠপর্যায়ের যাচাই কি সত্যিই নিরপেক্ষ ছিল? নাম যাচাই ও মুছে ফেলার পদ্ধতিতে কোনও সম্প্রদায় বিশেষকে টার্গেট করা হয়েছে কি না—এ বিষয়ে তদন্তের দাবি উঠছে বিভিন্ন মহল থেকে। পর্যবেক্ষক মহলের বক্তব্য, এই ধরনের বিচ্যুতি গণতন্ত্রের ভিত্তিকেই নাড়া দেয়। নির্বাচন কমিশনের উচিত হবে দ্রুত একটি স্বাধীন তদন্তের ব্যবস্থা করে দেখা, কীভাবে ও কেন এই প্রক্রিয়ায় মুসলমানদের ভোটাধিকারে এমন অসম প্রভাব পড়ল।
  • Link to this news (আজকাল)