‘লিভ-ইন করলেই হবে ৫০ টুকরো’, রাজ্যপালের বার্তায় সর্বত্র শোরগোল ...
আজকাল | ০৯ অক্টোবর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: উত্তর প্রদেশের রাজ্যপাল আনন্দীবেন প্যাটেল আবারও এক বিতর্কিত মন্তব্য করে শোরগোল ফেলেছেন। বুধবার বারাণসীর মহাত্মা গান্ধীকাশী বিদ্যাপীঠের ৪৭তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়ে তিনি তরুণীদের উদ্দেশে বলেন, “লিভ-ইন সম্পর্ক থেকে দূরে থাকো, না হলে ৫০ টুকরো হয়ে পাওয়া যাবে।” তাঁর এই মন্তব্য মুহূর্তেই রাজ্যজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।
এর আগের দিনই বলিয়া জেলার জননায়ক চন্দ্রশেখর বিশ্ববিদ্যালয়ের সপ্তম সমাবর্তনে একই ইস্যুতে মন্তব্য করে তিনি বিতর্কে জড়িয়েছিলেন। সেখানেও তিনি বলেন, “যদি লিভ-ইন সম্পর্কের পরিণতি দেখতে চাও, অনাথ আশ্রমে যাও। পনেরো-বিশ বছর বয়সী মেয়েরা এক বছরের বাচ্চা নিয়ে সারিতে দাঁড়িয়ে আছে।”
বারাণসীর অনুষ্ঠানে রাজ্যপাল বলেন, সাম্প্রতিক কালে নারী নির্যাতনের ঘটনাগুলি উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে চলেছে। তাই মেয়েদের নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আরও সতর্ক ও বিচক্ষণ হতে হবে। তিনি বলেন, “আমাদের মেয়েরা যেন কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভালোভাবে চিন্তা করে। এমন কোনও সম্পর্কে না জড়ায় যা তাদের শোষণ বা বিপদের মুখে ফেলতে পারে”।
আনন্দীবেন প্যাটেল বলেন, “আমার মেয়েদের জন্য শুধু একটি বার্তা, লিভ-ইন এখন ফ্যাশনে আছে ঠিকই, কিন্তু এটা করো না। নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত নিজে নাও, কিন্তু এমন পথে যেও না যার পরিণতি ভয়ঙ্কর হতে পারে। তোমরা দেখেছো কী হয়— ৫০ টুকরো হয়ে পাওয়া যায়। গত দশ দিনে এমন বহু ঘটনার রিপোর্ট পেয়েছি, প্রতিটি খবরেই আমার মন ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে।”
তিনি আরও বলেন, শিশু সুরক্ষা আইন অনুযায়ী তিনি বহু ক্ষতিগ্রস্ত মেয়ের সঙ্গে নিজে দেখা করেছেন। প্রত্যেকের গল্পই ভয়ঙ্কর ও বেদনাদায়ক। “এই মেয়েরা যে যন্ত্রণা পেরিয়ে এসেছে, তা শুনলে যে কেউ শিউরে উঠবে”।
রাজ্যপাল জানান, এক বিচারপতির সঙ্গে আলোচনার সময় তিনিও একই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে আহ্বান জানিয়েছেন মেয়েদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য উদ্যোগ নিতে। তাঁর মতে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির উচিত তরুণীদের বাস্তব জীবনের ঝুঁকি ও আত্মরক্ষার বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া।
বলিয়ায় দেওয়া আগের বক্তৃতায় আনন্দীবেন বলেন, “এই লিভ-ইন সম্পর্কের পেছনে লোভ কাজ করছে। ছেলেরা মেয়েদের হোটেলে নিয়ে যায়, প্রলুব্ধ করে, সন্তান জন্মের পর তাদের ফেলে যায়। এটি আমাদের সংস্কৃতি নয়, আমাদের মূল্যবোধ নয়। তবুও এসব হচ্ছে।”
তিনি তরুণীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “নিজেদের জীবনকে মহান উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করো। তোমাদের ভবিষ্যৎ যেন এমন সম্পর্ক বা সিদ্ধান্তে নষ্ট না হয় যা একদিন অনুশোচনার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।”
আনন্দীবেন প্যাটেলের এই ধারাবাহিক মন্তব্য রাজনৈতিক মহলেও তোলপাড় ফেলেছে। কেউ কেউ তাঁর বক্তব্যকে “নারীর নিরাপত্তা ও আত্মসম্মানের পক্ষে সতর্কবার্তা” বলে ব্যাখ্যা করেছেন, আবার অনেকে বলেছেন, “রাজ্যপালের এই ধরনের মন্তব্য ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও নারীর সিদ্ধান্তগ্রহণের অধিকারে হস্তক্ষেপ।”
তবে বিতর্ক যাই হোক, রাজ্যপালের বক্তব্যে সমাজের এক গভীর উদ্বেগই প্রতিফলিত হয়েছে। আধুনিকতার ছদ্মবেশে তরুণ প্রজন্ম কতটা বিপজ্জনক পথে এগোচ্ছে, তা নিয়ে চিন্তা করার সময় এসেছে।