খেলনা নিয়ে খালের পাড়ে খেলাধুলা, হঠাৎ ভেসে গেল ২ শিশু, মর্মান্তিক পরিণতি এক শিশুকন্যার, কেষ্টপুরে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ...
আজকাল | ০৯ অক্টোবর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: খেলতে গিয়ে মর্মান্তিক পরিণতি। কেষ্টপুরের খালে পড়ল দুই শিশু। ঘটনাস্থলেই এক শিশুর মৃত্যু। আরেক শিশুর অবস্থা আশঙ্কাজনক। আজ, বুধবার সকালে ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় শোকস্তব্ধ কেষ্টপুর ও নিউটাউন সংলগ্ন চণ্ডীবেড়িয়া এলাকা।
খেলার ছলে খাল পাড়ে গিয়ে জলে পড়ে যায় দুই শিশু। জানা গেছে, একজন আট বছরের নাবালক ও আরেকজন চার বছরের শিশুকন্যা। স্থানীয়দের তৎপরতায় দু'জনকে উদ্ধার করা গেলেও, শেষরক্ষা হল না শিশুকন্যার। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তার চিকিৎসা শুরু করেন তড়িঘড়ি। তবে শেষ পর্যন্ত তার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়। এবং হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালীন মৃত্যু হয় শিশুকন্যার। অন্যদিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছে অপর নাবালক।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বাগজোলা খাল পাড়ের বাসিন্দা ওই দুই শিশু প্রতিদিনই সকালে একসঙ্গে খেলতে বের হত। আজ বুধবার সকালেও তারা অন্যদিনের মতো খালের ধারে পাতা ও ছোট খেলনা নিয়ে খেলছিল। হঠাৎ করেই তারা খালে পড়ে যায় বলে জানা গিয়েছে। প্রথমে কেউ ঘটনাটি টের পাননি। কিছুক্ষণ পর খাল পাড়ের কয়েকজন বাসিন্দা দেখেন, দুই শিশু জলে ভেসে যাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় চিৎকার-চেঁচামেচি।
চিৎকার শুনে ছুটে আসেন শিশুকন্যার মা। চার বছরের শিশুকন্যার মা বলেন, 'রোজ ওরা এখানে খেলে। আজও খেলছিল। অনেকক্ষণ সাড়া না পেয়ে আমি ডাকতে শুরু করি। তখনই শুনি লোকে চিৎকার করছেন। বলাবলি করছেন, দুটি বাচ্চা জলে ভেসে যাচ্ছে।'
স্থানীয়রা খালে নেমে উদ্ধার অভিযান চলান। কিছুক্ষণের চেষ্টায় নাবালককে উদ্ধার করা সম্ভব হয়। কিন্তু শিশুকন্যার আর খোঁজ মিলছিল না। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে নিউটাউন থানার পুলিশ। দ্রুত ডুবুরি নামিয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টার চেষ্টার পর সকাল সাড়ে ১১টার দিকে শিশুকন্যাকেও উদ্ধার করা যায়।
দু’জনকেই আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, দুই শিশুরই ফুসফুসে জল ঢুকে গিয়েছিল। দীর্ঘ সময় জলে থাকার কারণে শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ে একটা গভীর সমস্যা তৈরি হয়েছে। চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ চেষ্টার পরও শিশুকন্যাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। এমনটাই হাসপাতাল ও পুলিশ সূত্রে খবর।
স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, 'খালপাড়ের জল এখন খুব গভীর। টানা বৃষ্টির ফলে জল অনেক বেড়েছে। বাচ্চারা প্রতিদিনই এখানে খেলে, কিন্তু এভাবে বিপদ হবে, ভাবিনি। তার উপরে কোনওরকম কোনও ব্যারিকেড নেই। যার কারণে যেকোনও সময়ে যেকোনও বড় বিপদ ঘটে যেতে পারে।'
দুর্ঘটনার পর কান্নায় ভেঙে পড়ে দুই শিশুর পরিবার। এলাকায় নেমেছে শোকের ছায়া। স্থানীয়দের দাবি, খাল পাড়ে কোনও রেলিং বা সুরক্ষা ব্যবস্থা না থাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। ভবিষ্যতে যেন এমন ঘটনা না ঘটে, সেই দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। পুলিশ জানিয়েছে, গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে প্রশাসনের তরফে খাল পাড়ে সুরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
এক মুহূর্তের খেলা, আর ফিরল না এক শিশুকন্যা। শোকস্তব্ধ কেষ্টপুর সহ পুরো এলাকা। বিজয়া দশমীর পরেই দুই শিশুর এ ধরনের ভয়াবহ পরিণতি ও এক শিশুর মৃত্যু, যা পুজোর আনন্দকে সম্পূর্ণ মাটি করে এলাকায় গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে।