কৃত্রিম মেধায় ছাত্রীদের ছবি বিকৃত করে হাতেনাতে ধরা পড়লেন! ছত্তিশগড়ে সাসপেন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া, চাঞ্চল্য ক্যাম্পাসে
আজকাল | ১০ অক্টোবর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: কৃত্রিম মেধা (এআই) ব্যবহার করে ৩০ জনেরও বেশি ছাত্রীর অশ্লীল ছবি তৈরির অভিযোগে ছত্তিশগড়ের এক বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের এক ছাত্রকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। এই ঘটনা ঘিরে সম্প্রতি কলেজ ক্যাম্পাসে চরম শোরগোল।
ছাত্রীদের অভিযোগ, ছত্তিশগড়ের ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ইনফরমেশন টেকনোলজি (আইআইআইটি)-র তৃতীয় বর্ষের ওই পড়ুয়া এআই ব্যবহার করে তাঁদের ছবি বিকৃত (মর্ফ) করে।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত বিলাসপুরের বাসিন্দা। জানা গিয়েছে ওই ছাত্রের কাছ থেকে প্রায় এক হাজারেরও বেশি ছবি ও ভিডিও উদ্ধার করা হয়েছে। নয়া রায়পুরে অবস্থিত ওই কলেজের ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের পড়ুয়া সে।
ইনস্টিটিউটের রেজিস্ট্রার, অধ্যাপক শ্রীনিবাস এবিষয়ে সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, গত ৬ অক্টোবর কয়েক জন ছাত্রী অভিযোগ জানানোর পরেই বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। এর পরেই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় এবং কলেজের কর্মীরা অভিযুক্ত ছাত্রের ঘরে তল্লাশি চালান। শ্রীনিবাস বলেন, "তদন্তের জন্য তিন সদস্যের একটি কমিটি গড়া হয়েছে, যার সব সদস্যই মহিলা।"
শ্রীনিবাস আরও জানান, তল্লাশির পর অভিযুক্তের ফোন, ল্যাপটপ এবং পেন ড্রাইভ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। যে ছাত্রীরা অভিযোগ জানিয়েছেন, তাঁদের অভিভাবকদের সঙ্গেও কথা বলা হচ্ছে। শ্রীনিবাসের কথায়, "কোনও ব্যক্তিগত তথ্য যাতে বাইরে ফাঁস না হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।"
কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ছবি বা ভিডিওগুলি সত্যিই ডিজিটাল পদ্ধতিতে তৈরি কি না এবং ক্যাম্পাসের বাইরে সেগুলি শেয়ার করা হয়েছে কি না, তা যাচাই করার জন্য সাইবার বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।
অন্য দিকে, পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার জেরে আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করার জন্য তারা লিখিত অভিযোগের অপেক্ষায় রয়েছে। রাখি থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক আশিস রাজপুত বলেন, কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ ঘটনার তথ্য খতিয়ে দেখছে। তিনি বলেন, "লিখিত অভিযোগ পেলেই আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু হবে।"
অভিযোগকারিণী ছাত্রীরা অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। কলেজ কর্তৃপক্ষও তাঁদের আশ্বাস দিয়েছে যে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে অশ্লীল ছবি তৈরি করার প্রবণতা মনস্তাত্ত্বিকদের মতে আধুনিক যুগের এক গভীর সামাজিক ও মানসিক সংকটের প্রতিফলন। বিশেষত তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এটি কৌতূহল, যৌন হতাশা এবং ক্ষমতা প্রদর্শনের এক বিকৃত রূপ হিসেবে দেখা যাচ্ছে। বাস্তব সম্পর্কের জটিলতা এড়িয়ে ভার্চুয়াল নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ইচ্ছাপূরণের প্রবণতা মানুষকে আরও বিচ্ছিন্ন ও অসংবেদনশীল করে তুলছে। মনস্তত্ত্ববিদরা বলেন, এই প্রবণতা কেবল ব্যক্তিগত বিকৃতি নয়, এটি প্রযুক্তি-নির্ভর এক নতুন ‘নৈতিক অবক্ষয়’-এর দিকেও ইঙ্গিত করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সহজলভ্য এই টুলের কারণে কল্পনা ও বাস্তবতার সীমানা ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে, যা যৌনতা, সম্মতি ও গোপনীয়তার ধারণাকে বিপন্ন করছে। তাই মনোবিজ্ঞানীরা শিক্ষা, নৈতিক প্রশিক্ষণ এবং প্রযুক্তি-নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এই মানসিক বিকৃতি রোধের আহ্বান জানিয়েছেন।