মোদির ব্রিটেন সফরের পরেই ভারতে কমতে চলছে স্কচ হুইস্কির দাম!
আজকাল | ১০ অক্টোবর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারত—বিশ্বের সর্বাধিক স্কচ হুইস্কি ভোক্তা দেশ—এবার দেখতে পেতে পারে প্রিমিয়াম ব্রিটিশ ব্র্যান্ডগুলির দামে বড় রকমের পতন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ভারতের সফরে এসেছেন ভারত-যুক্তরাজ্য বাণিজ্য চুক্তি আনুষ্ঠানিক করার জন্য, আর আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে স্কচ হুইস্কি। স্টারমারের জোরদার আগ্রহের ফলে ভারতের বাজারে বিলাসবহুল ব্রিটিশ হুইস্কির দাম দ্রুতই কমতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
ভারতের বাড়তে থাকা মধ্যবিত্ত শ্রেণি ও বিলাসপণ্যের প্রতি ক্রমবর্ধমান ঝোঁক দীর্ঘদিন ধরেই দেশটিকে বিশ্ব হুইস্কি উৎপাদকদের জন্য এক বিশাল বাজারে পরিণত করেছে। এবার জুলাই মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির লন্ডন সফরের সময় স্বাক্ষরিত “কমপ্রিহেনসিভ ইকোনমিক অ্যান্ড ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট” (CETA) বা সর্বাঙ্গীণ অর্থনৈতিক-বাণিজ্যিক চুক্তি বিলাসবহুল মদ্যপানের জিনিসকে আরও সাশ্রয়ী করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।এর ফলে কেবল বিদেশি স্কচ নয়, দেশীয় মিশ্রিত হুইস্কি (IMFL) ব্র্যান্ডগুলির দামেও প্রভাব পড়বে, কারণ সেগুলির উৎপাদন খরচ কমে যাবে।
তিন বছর ধরে চলা জটিল আলোচনার পর এই বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে শুরু হওয়া শুল্ক-সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চাপও এই প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করেছে। কিয়ার স্টারমার ভারত সফরে এসেছেন একটি বড় প্রতিনিধিদল নিয়ে—যার মধ্যে রয়েছেন স্কচ হুইস্কি অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য এবং ডিয়াজিও (জনি ওয়াকারের প্রস্তুতকারক)-র মতো সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। বাণিজ্য, ফিনটেক, প্রতিরক্ষা প্রভৃতি ক্ষেত্রেও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করার উদ্দেশ্য থাকলেও, বর্তমানে সর্বাধিক আলোচিত খাতটি হল মদ শিল্প—বিশেষত স্কচ হুইস্কি।
ডাউনিং স্ট্রিটের পূর্বাভাস অনুযায়ী, এই চুক্তির ফলে ভারতে স্কচ বিক্রি বছরে এক বিলিয়ন ইউনিটে পৌঁছাতে পারে। এতে স্কটল্যান্ডের বিভিন্ন ডিস্টিলারি ও বোতলজাত কারখানায় প্রায় এক হাজার নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হবে এবং যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে বছরে ১৯০ মিলিয়ন পাউন্ডেরও বেশি সংযোজন ঘটবে। দীর্ঘমেয়াদে দুই দেশের মধ্যে মোট বাণিজ্য ২০৪০ সালের মধ্যে ২৫.৫ বিলিয়ন পাউন্ডে উন্নীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এখন পর্যন্ত ভারতে স্কচ হুইস্কির উপর ১৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপিত ছিল, যা অনেক ক্রেতার নাগালের বাইরে ঠেলে দিয়েছিল এই প্রিমিয়াম পানীয়কে। নতুন চুক্তি কার্যকর হলে এই শুল্ক তাৎক্ষণিকভাবে ৭৫ শতাংশে নেমে আসবে—অর্থাৎ অর্ধেকেরও বেশি হ্রাস। আগামী এক দশকে এই হার আরও ধাপে ধাপে কমে ৪০ শতাংশে নামবে, যাতে দেশীয় উৎপাদকরা ধীরে ধীরে নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারেন।
জনি ওয়াকার, গ্লেনফিডিচ, চিভাস রিগাল, ব্যালান্টাইনস, গ্লেনলিভেট ও বুকানান্স-এর মতো বিখ্যাত ব্র্যান্ডগুলো এই চুক্তির সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী হতে চলেছে। ভারতের শহুরে উচ্চবিত্ত শ্রেণি এই ব্র্যান্ডগুলিকে দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক মর্যাদার প্রতীক হিসেবে দেখেছে। এখন দাম কমে গেলে আরও বৃহত্তর জনগোষ্ঠীও এগুলির নাগালে আসতে পারবে।
চিভাস ব্রাদার্সের চেয়ারম্যান ও সিইও জঁ-এতিয়েন গুর্গ বলেন, “এই চুক্তি আমাদের স্পেসাইড অঞ্চলের ডিস্টিলারি ও কিলমালিড বোতলজাত কারখানায় দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে। আগামী দশকে স্কটল্যান্ড ও ভারতের মধ্যে হুইস্কি শিল্পে স্থায়ী বৃদ্ধি দেখা যাবে।”
হুইস্কি বর্তমানে যুক্তরাজ্যের ভারতের কাছে পঞ্চম বৃহত্তম রপ্তানি পণ্য। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ২৬০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি। স্কচ হুইস্কি অ্যাসোসিয়েশন দীর্ঘদিন ধরে ভারতের বাজারে সহজ প্রবেশাধিকারের দাবি জানিয়ে আসছিল, কারণ ভারত কেবল পরিমাণের দিক থেকে নয়, রুচিশীল ও বৈচিত্র্যময় স্বাদের বাজার হিসেবেও তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।
অন্যদিকে, দেশীয় প্রস্তুতকারকদের জন্যও এটি সম্পূর্ণ নেতিবাচক নয়। কারণ অনেক ভারতীয় হুইস্কি স্কচ মাল্ট ব্যবহার করে মিশ্রণ তৈরি করে। ফলে আমদানি খরচ কমে গেলে উৎপাদন ব্যয়ও কমবে এবং বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়বে।
দিল্লি, মুম্বই ও বেঙ্গালুরুর মতো শহরের স্কচপ্রেমীদের জন্য এটি এক নতুন যুগের সূচনা হতে পারে—যেখানে গ্লেনফিডিচ ১৮ বা জনি ওয়াকার ব্লু লেবেলের বোতল আর শুধুই বিলাস নয়, মাঝেমধ্যেই উপভোগ করার মতো এক প্রাপ্তিযোগ্য আনন্দে পরিণত হবে।