• সন্দেহের বশে নিজের প্রেমিকাকেই খুন যুবকের, ২৫০ টি সিসিটিভির ফুটেজ দেখে অপরাধীকে খুঁজে বার করল পুলিশ
    আজকাল | ১০ অক্টোবর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: সম্পর্ক শুরু হয়েছিল রাজস্থানের ধূসর প্রান্তরে, কিন্তু তার রক্তাক্ত সমাপ্তি ঘটল দিল্লির এক ঘিঞ্জি গলির ভাড়াবাড়িতে। প্রেমিকার অন্য সম্পর্কে জড়িত থাকার সন্দেহ এক যুবকের চোখে এমন হিংসার আগুন জ্বেলে দিয়েছিল যে, রান্নাঘরের সাধারণ ছুরিই হয়ে উঠল মারাত্মক অস্ত্র। দক্ষিণ দিল্লির কোটলার মুবারকপুর এলাকায় ২২ বছর বয়সি বান্ধবী সাক্ষীকে নৃশংসভাবে খুন করার অভিযোগে হরিয়ানা থেকে গ্রেপ্তার করা হল তাঁর প্রেমিক হিমাংশুকে। ২৫ বছর বয়সি ওই যুবকের বিরুদ্ধে আগেও অপরাধমূলক কাজের অভিযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

    ঘটনার সূত্রপাত মঙ্গলবার সন্ধ্যায়। পুলিশি তদন্তে জানা গিয়েছে, হরিয়ানার হিসারের বাসিন্দা হিমাংশু ওই দিন সন্ধ্যায় সাক্ষীর ভাড়াবাড়িতে আসেন। সাক্ষী গত এক বছর ধরে ওই বাড়িতে একাই থাকতেন। তিনি ওখলার একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত ছিলেন। তদন্তকারীরা মনে করছেন, সাক্ষীর অন্য কোনও সম্পর্ক রয়েছে, এই নিয়ে হিমাংশুর মনে দীর্ঘদিন ধরেই সন্দেহের মেঘ জমছিল। মঙ্গলবার এই বিষয় নিয়েই দু’জনের মধ্যে প্রথমে কথা কাটাকাটি এবং পরে তীব্র বচসা শুরু হয়। প্রতিবেশীরাও ঘর থেকে চিৎকারের আওয়াজ পেয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন।

    পুলিশের মতে, বচসা চলাকালীনই হিমাংশু নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। রাগের বশে তিনি রান্নাঘর থেকে একটি ছুরি নিয়ে এসে সাক্ষীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। সাক্ষীর মুখ এবং গলায় একাধিকবার কোপানো হয়। রক্তে ভেসে যায় ঘরের মেঝে। নৃশংস এই কাজ করার পরেও হিমাংশুর মধ্যে কোনও অনুশোচনা দেখা যায়নি। সাক্ষীর মৃত্যু নিশ্চিত জেনে সে ঘরের দরজায় বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে চম্পট দেয়, যাতে ঘটনাটি সহজে প্রকাশ্যে না আসে।

    কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। রাত সওয়া ন’টা নাগাদ ওই আবাসনের এক বাসিন্দা পুলিশ কন্ট্রোল রুমে ফোন করেন। তিনি জানান, ওপরের তলার ভাড়াটিয়ার ঘর থেকে কিছুক্ষণ আগে প্রচণ্ড ঝগড়ার আওয়াজ আসছিল আর এখন সিঁড়িতে রক্তের দাগ দেখা যাচ্ছে। খবর পেয়েই পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। বাইরে থেকে তালাবন্ধ ঘর দেখে সন্দেহ হয় পুলিশকর্মীদের। তালা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করতেই শিউরে ওঠেন পুলিশকর্মীরা। ঘরের মধ্যে সাক্ষীর রক্তাক্ত দেহ পড়ে ছিল। তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন।

    ঘটনার পর থেকেই পলাতক ছিলেন হিমাংশু। তাঁকে ধরতে কোমর বেঁধে নামে দিল্লি পুলিশ। দক্ষিণ দিল্লির ডিসিপি অঙ্কিত চৌহানের নেতৃত্বে একটি বিশেষ দল গঠন করা হয়। এলাকার প্রায় ২৫০টি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখা হয়। একইসঙ্গে প্রযুক্তিগত নজরদারির মাধ্যমে অভিযুক্তের মোবাইলের অবস্থান জানার চেষ্টা চলতে থাকে। অবশেষে বুধবার রাতে হরিয়ানায় তাঁর গোপন ডেরার সন্ধান মেলে এবং সেখান থেকেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।

    পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তকে জেরা করে খুনের আসল কারণ এবং ঘটনার মুহূর্তের খুঁটিনাটি জানার চেষ্টা চলছে। একটি প্রেমের সম্পর্ক যে সন্দেহের বশে এমন মর্মান্তিক পরিণতি ডেকে আনতে পারে, তা এই ঘটনা আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। আপাতত খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।
  • Link to this news (আজকাল)