নিতাই দে, আগরতলা: ত্রিপুরা প্রদেশ তৃণমূল কংগ্রেস ভবনে ভাঙচুর হয়েছিল মঙ্গলবার রাতে। ভাঙচুরের ঘটনার খবর পেয়ে পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেসের সুপ্রিম মমতা ব্যানার্জি ও দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জির নির্দেশে বুধবার দুপুরে রাজ্যে এসেছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের ছয় জনের একপ্রতিনিধি দল। ত্রিপুরার সফরে আসার পর আগরতলার বিমানবন্দরে প্রতিনিধি দলের সঙ্গে অশুভ আচরণের অভিযোগ উঠেছিল। পরবর্তী সময়ে বিমানবন্দরে তাঁরা প্রতিবাদ করার পর পুলিশের তরফ থেকে তাঁদেরকে গাড়ি দিয়ে আগরতলায় দলীয় কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। আক্রান্ত দলীয় কার্যালয় পরিদর্শন করে সেখানে সাংবাদিকদের সঙ্গে মিলিত হয়ে বিজেপি দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন তৃণমূল কংগ্রেসের ত্রিপুরা শহরে আসা প্রতিনিধিরা। তারপর সেখান থেকে ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দলটি পুলিশ মহানির্দেশকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং যারা দলীয় কার্যালয়ে আক্রমণ করেছেন তাদেরকে গ্রেপ্তার করে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়ার জন্য দাবি করেন।
বৃহস্পতিবার তৃণমূল কংগ্রেসের সদস্য প্রতিনিধি দলটি আগরতলা এনসিসি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পাঁচ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে। তৃণমূলের দাবি, ওই পাঁচজন দলীয় কার্যালয়ের উপর আক্রমণ শানিয়েছেন। এনসিসি থানায় মামলা দায়ের করার সময় উপস্থিত ছিলেন পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও থানার ওসি ও অন্যান্য পুলিশ আধিকারিকেরা।
থানা থেকে বেরিয়ে ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দলটি সোজা চলে যান রাজভবনের উদ্দেশ্যে। সেখানে রাজ্যপালের উদ্দেশ্যে রাজ্যপালের সচিবের কাছে স্মারকলিপি তুলে দেন প্রদেশ তৃণমূল কংগ্রেসের অফিসের উপর আক্রমণের বিরুদ্ধে। রাজভবন থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তৃণমূল প্রতিনিধি দলের সদস্য কুনাল ঘোষ বলেন, "রাজ্যপালের সঙ্গে সকালে কথা হয়েছে। রাজ্যপাল জানিয়েছেন জরুরি কাজে তাঁকে দিল্লি যেতে হবে, তাই তিনি উপস্থিত থেকে তাদের আমাদের স্মারকলিপি নিতে পারেননি।"
পাশাপাশি রাজ্যপালকে ধন্যবাদ ও জানিয়েছেন কুনাল ঘোষ। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে কুনাল ঘোষ বলেন, "আমরা রাজ্যপালের কাছে যে দাবিগুলো রেখেছি তা হল, যারা তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য পার্টি অফিস ভেঙেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ তৃণমূলের কাছে প্রমাণ রয়েছে। পুরনো ঘটনাগুলিতে যেমন অভিষেক ব্যানার্জি-সহ তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা কর্মীদের ওপর আক্রমণ করেছে যেসব দুষ্কৃতিকারীরা তাদের বিরুদ্ধে কি ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে জানাতে হবে। তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা কর্মীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করতে হবে।"
এদিন কুনালবাবু আরও বলেন যে, "ত্রিপুরার বিজেপি নেতারা পশ্চিমবঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কেউ তো আক্রান্ত হয়নি। ত্রিপুরাতে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা আসলে বিজেপি দলের একরকম ভয় তৈরি হয়ে যায়, সেই কারণেই পার্টি অফিস ভাঙাভাঙি হয়। আর এই পার্টি অফিস ভাঙার বিরুদ্ধে এবং এর প্রতিবাদ জানাতে দোষীদের গ্রেফতারের দাবি জানাতে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিনিধিরা ত্রিপুরাতে এসেছেন।"
কুনালের কথায়, আজও তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিনিধিদের সঙ্গে অশুভ আচরণ করা হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। তাদেরকে হোটেল থেকে পার্টি অফিসে যাওয়ার জন্য কোন গাড়ি দেওয়া হয়নি সে কারণে পার্টি অফিসে মিটিং থাকা সত্ত্বেও প্রতিনিধিরা যেতে পারেননি। পরবর্তী সময়ে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে গাড়ি দেওয়া হলে সেই গাড়ি করি তারা এন সি সি থানাতে এফআইআর করে এবং রাজভবনে যান। রাজভবন থেকে সোজা বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে চলে যান তৃণমূলের প্রতিনিধিরা। এই প্রতিনিধি দলে উপস্থিত ছিলেন সাংসদ সুস্মিতা দেব, সাংসদ সাইনি ঘোষ, সাংসদ প্রতিমা মন্ডল, পশ্চিমবঙ্গের বনমন্ত্রী বিরবাহা হাজরা, ছাত্রনেতা সুদীপ রাহা।