গাডোলে তুষারঝড়ে নিখোঁজ সেনাদের মধ্যে এক জনের মৃতদেহ উদ্ধার, আরেকজনের খোঁজে ব্যাপক তল্লাশি অভিযান...
আজকাল | ১০ অক্টোবর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: দক্ষিণ কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলার গাডোলে এলাকায় বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক নিখোঁজ জওয়ানের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সেনা সূত্রে জানা গেছে, মৃত জওয়ানের দেহের সঙ্গে তার অস্ত্র ও রুকস্যাকও উদ্ধার হয়েছে। তবে এখনো এক সেনা সদস্যের কোনো সন্ধান মেলেনি। তাকে উদ্ধারের জন্য তল্লাশি অভিযান জোরদার করা হয়েছে।
সেনাবাহিনীর তরফে বুধবার জানানো হয়েছিল যে, সোমবার (৬ অক্টোবর) রাতে দক্ষিণ কাশ্মীরের পাহাড়ি অঞ্চলে তীব্র তুষারঝড় ও ‘হোয়াইট-আউট’ অবস্থার মধ্যে একটি দলে থাকা দুই সেনা সদস্য নিখোঁজ হয়ে পড়েন। একই অভিযানে এক জওয়ান কর্তব্যরত অবস্থায় প্রাণ হারান। সেনাবাহিনীর দাবি, তারা কিশ্তোয়ারে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চালাচ্ছিলেন, যখন এই দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
সেনার চিনার কর্পস বুধবার এক্স-এ পোস্ট করে জানিয়েছিল, “নিখোঁজ সেনাদের উদ্ধারে ব্যাপক অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান চলছে, তবে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে তা ব্যাহত হচ্ছে।”
ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে গাডোলে ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর বড়সড় তল্লাশি অভিযান শুরু হয়েছে। এটি সেই একই এলাকা, যেখানে গত বছর (১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩) সেনার এক কমান্ডিং অফিসার, এক মেজর এবং জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের এক ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে শহিদ হন। ওই অভিযানের পর প্রায় মাসব্যাপী গাডোলে এলাকায় বড়সড় এনকাউন্টার হয়েছিল।
এই ঘটনার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে বৃহস্পতিবার দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জম্মু ও কাশ্মীরের সামগ্রিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য একটি উচ্চস্তরের বৈঠকের আহ্বান করেন। বৈঠকে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে জম্মু ও কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহা, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব গোবিন্দ মোহন, আইবি-র পরিচালক তপন দে, জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল নলিন প্রভাতসহ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের।
এদিকে, গত তিন দিন ধরে জম্মু ও কাশ্মীরের উঁচু পার্বত্য এলাকাগুলিতে অকাল তুষারপাত হয়েছে, যা কৃষিক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলেছে। বিশেষত, আপেল চাষিদের ফসল কাটার সময় ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। খারাপ আবহাওয়ার কারণে শ্রীনগর-জম্মু জাতীয় সড়কও বন্ধ ছিল, যা বুধবার আংশিকভাবে খুলে দেওয়া হয়।
এ বছরের মে মাসেও (৬-৭ মে রাতে) গাডোলে পাহাড়ি অঞ্চলে ভারতীয় বিমানবাহিনীর এক ফাইটার জেট দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছিল। ওই সময় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা তীব্র হয়ে ওঠে, যখন ভারত সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটিগুলিতে মিসাইল হামলা চালায় পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীর অঞ্চলে। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে পারমাণবিক সংঘাতের আশঙ্কাও তৈরি হয়েছিল।
এদিকে সেনাবাহিনী বুধবার আরও একটি পোস্টে জানায়, “অপারেশনাল ডিউটির সময় সুবেদার শৈলেন্দ্র সিং চৌহানের অকাল ও দুঃখজনক মৃত্যুর জন্য আমরা গভীর শোক প্রকাশ করছি। তাঁর সাহস ও কর্তব্যনিষ্ঠা আমাদের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।” তবে সেনা কর্তৃপক্ষ চৌহানের মৃত্যুর স্থান ও তারিখ সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানায়নি।
সেনার বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, “চিনার ওয়ারিয়র্স এই সাহসী শহিদের বীরত্ব ও ত্যাগকে স্যালুট জানাচ্ছে। আমরা তাঁর পরিবারের পাশে আছি এবং তাঁদের কল্যাণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
অন্যদিকে, রাজৌরির কান্ডি থানা এলাকার বীরানথুব গ্রামে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় (৭ অক্টোবর) সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলি বিনিময় হয় বলে জানিয়েছেন জম্মু জোনের আইজিপি ভীম সেন তুতি।
তুতির বক্তব্য অনুযায়ী, “বীরানথুব এলাকায় স্পেশাল অপারেশন গ্রুপের দল এবং সন্ত্রাসবাদীদের মধ্যে গুলির লড়াই হয়েছিল। পরে জঙ্গিরা সুযোগ বুঝে পালিয়ে যায়।” জম্মু ও কাশ্মীরে সাম্প্রতিক দিনগুলিতে হইংসা ও সংঘর্ষের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠককে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশেষ করে শীত আসার আগেই সীমান্ত এলাকায় অনুপ্রবেশ ও জঙ্গি কার্যকলাপের আশঙ্কা বাড়ছে বলে গোয়েন্দা সংস্থাগুলি সতর্কবার্তা জারি করেছে।