• ‘চমকে গিয়েছিলাম’, ভরা আদালতে জুতো কাণ্ডে অবশেষে মুখ খুললেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি...
    আজকাল | ১০ অক্টোবর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতের শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি বি.আর. গাভাইয়ের ওপর সম্প্রতি আদালতের ভিতরে হামলার চেষ্টা হয়েছিল। ভরা কক্ষে প্রধান বিচারপতিকে লক্ষ্য করে জুতো ছুঁড়ে মেরেছিলেন এক আইনজীবী। নিজের ওপর ঘটে যাওয়া সেই হামলার পর অবশেষে মুখ খুললেন প্রধান বিচারপতি। ঘটনাকে ‘ভুলে যাওয়া অধ্যায়’ বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

    ঘটনার দু’দিন পর প্রথমবারের মতো এই বিষয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য করলেন তিনি। বৃহস্পতিবার খোলা আদালতে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমার সহকর্মী বিচারপতি ও আমি সোমবার যা ঘটেছিল তা দেখে অত্যন্ত বিস্মিত হয়েছিলাম... আমাদের কাছে এটি এখন এক ভুলে যাওয়া অধ্যায়।’ তিনি সেদিন বিচারপতি উজ্জ্বল ভুঁইয়ার সঙ্গে বেঞ্চে বসে মামলার শুনানি করছিলেন।

    যদিও তিনি আর কোনও মন্তব্য করেননি, বিচারপতি ভুঁইয়া নিজের প্রতিক্রিয়া জানান। বিচারপতি ভুঁইয়া বলেন, ‘এই বিষয়ে আমার নিজস্ব মত রয়েছে। তিনি ভারতের প্রধান বিচারপতি। এটা কোনও রসিকতার বিষয় নয়। বিচারপতি হিসেবে আমরা এমন অনেক সিদ্ধান্ত নিই যা অন্যরা সবসময় ন্যায্য মনে নাও করতে পারেন, কিন্তু তাতে আমাদের বিশ্বাস বদলায় না।’

    সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা, যিনি সেদিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন, ঘটনাটিকে ‘অমার্জনীয়’ বলে নিন্দা করেন। তিনি বলেন, ‘প্রধান বিচারপতির মহত্ত্ব ও সহিষ্ণুতা, যে তিনি ঘটনাটিকে সমাপ্ত অধ্যায় হিসেবে মেনে নিয়েছেন, তা প্রশংসনীয়।’ ঘটনাটি ঘটে সোমবার সকালে। সেই সময় প্রধান বিচারপতি গাভাই কোর্ট নম্বর ওয়ানে দিনের প্রথম মামলার শুনানি শুরু করছিলেন।

    প্রত্যক্ষদর্শীদের মারফত জানা যায়, এক প্রবীণ আইনজীবী রাকেশ কিশোর, যিনি সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট পরিচয়পত্র ব্যবহার করে আদালতে প্রবেশ করেছিলেন, হঠাৎ জুতো খুলে বেঞ্চের দিকে ছুড়ে মারেন এবং চিৎকার করে বলেন, ‘সনাতনের অপমান সহ্য করা হবে না।’ তবে জুতোটি প্রধান বিচারপতি পর্যন্ত পৌঁছায়নি। আদালতের নিরাপত্তাকর্মীরা সঙ্গে সঙ্গে ওই আইনজীবীকে আটক করে বাইরে নিয়ে যান।

    মুহূর্তের মধ্যে পুরো আদালতকক্ষ নীরব হয়ে পড়ে। ঘটনার পর বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি গাভাইয়ের শান্ত ও সংযত প্রতিক্রিয়া বিচার বিভাগ ও আইন মহলে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। এই আক্রমণের সূত্র ধরা পড়ে খাজুরাহোর এক মন্দির সংক্রান্ত মামলায়। মধ্যপ্রদেশের খাজুরাহো মন্দিরে ভগবান বিষ্ণুর একটি ভগ্নপ্রায় মূর্তি পুনর্স্থাপনের দাবি জানিয়ে করা এক জনস্বার্থ মামলায় শুনানির সময় বিচারপতি গাভাই মন্তব্য করেছিলেন, ‘তোমরা যদি ভগবান বিষ্ণুর অগাধ ভক্ত হও, তবে প্রার্থনা করো, ধ্যান করো, তাকেই বলো ব্যবস্থা নিতে।’

    এই মন্তব্যের পর থেকেই হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলি সোশ্যাল মিডিয়ায় গাভাইয়ের বিরুদ্ধে প্রচার শুরু করে। যিনি জুতো ছোড়েন, সেই ড. রাকেশ কিশোর পরে সংবাদমাধ্যমে বলেন, তিনি ‘ঈশ্বরের নামে’ কাজটি করেছেন এবং ‘কোনও অনুশোচনা’ নেই তাঁর। এমনকি তিনি দাবি করেন, বিচারপতি গাভাই বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করায় আর ‘দলিত’ নন—’তিনি সনাতন ধর্ম ত্যাগ করেছেন, তাই দলিত পরিচয় হারিয়েছেন,’ বলেন কিশোর।

    এই বক্তব্যের পরও ডানপন্থী প্রভাবশালী ইউটিউবার অজিত ভারতী পোস্ট করেন, ‘এটাই শুরু। যদি অ্যান্টি-হিন্দু বিচারপতিরা হিন্দুদের অপমান করেন, তবে এরকমই প্রতিক্রিয়া পাবেন।’ পরে তাঁর টুইট মুছে ফেলা হলেও ‘মিশন অম্বেদকর’-এর প্রতিষ্ঠাতা সুরজ কুমার বৌদ্ধ অ্যাটর্নি জেনারেল আর. ভেঙ্কটরামানির কাছে অজিত ভারতী ও ধর্মীয় বক্তা অনিরুদ্ধাচার্যের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা চালুর অনুমতি চেয়ে চিঠি পাঠান।
  • Link to this news (আজকাল)