আজকাল ওয়েবডেস্ক: নির্বাচন, নির্বাচন প্রাক্কালে এসআইআর তোড়জোড়। উত্তরের দুর্যোগ সামলেছেন এর মাঝেই। ফের সোমবার উত্তরবঙ্গে যাবেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। তার মাঝেই সাংবাদিক সম্মেলন। পরপর একাধিক তথ্য তুলে প্রকাশ করলেন আশঙ্কা, বোঝালেন, এই বাংলা পৃথক। একদিকে যেমন প্রশ্ন করলেন, এসআইআর-এর নেপথ্যে কি এনআরসি? অন্যদিকে মনে করালেন, যা বিহারে করা গিয়েছে, তা বাংলায় করা যায় না। রবীন্দ্রনাথ, নেতাজী, নজরুল, মাতঙ্গিনীর নাম উল্লেখ করে বললেন, 'বুঝতে হবে বাংলা একটু আলাদা। এই বাংলা অধিকারের জন্য শেষ পর্যন্ত লড়াই করে, ছাড়ে না। যদি মনে করেন, এজেন্সিকে দিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেবেন, আমরা সব অ্যাকশনের জন্য প্রস্তুত। সব অ্যাকশনের পরেই কিন্তু রিঅ্যাকশন থাকে।' মমতা মনে করালেন, আহত বাঘ, সুস্থ বাঘের থেকেও ভয়ঙ্কর।
নির্বাচনের আগে এসআইআর তোড়জোড়? যদিও বাংলায় এখনও ভোটের নির্ঘন্ট দূর, কিছুই ঘোষণা হয়নি। তার আগে তোড়জোড় শুরু হতেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বললেন, 'বিহারে করতে পেরেছিলেন, কারণে সেখানে বিজেপি সরকার। কিন্তু বাংলা আলাদা। বাংলায় নানা জাতির, নানা ধর্মের মানুষের বাস।' এসআইআরের নেপথ্যে কি এনআরসি-র উদ্দেশ্য লুকিয়ে রয়েছে? বৃহস্পতিবার এই প্রশ্ন তুললেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর প্রশ্ন, 'এসআইআর-এর নামে ভোট কাটার চক্রান্ত চলছে। অসম সরকার কী করে বাংলার বাসিন্দাদের নোটিস পাঠাতে পারে? দ্বিতীয় প্রশ্ন, এসআইএর কাজ শুরু হওয়ার আগে, বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কী করে বলেন, দেড় কোটি ভোটার বাদ দিতে হবে? তাহলে কি পরিকল্পনা হচ্ছে পার্টি অফিসে?'
চারদিকে দুর্যোগ, দুর্ভোগ, উৎসবের আমেজ, এই অবস্থায় দু' মাসের মধ্যে প্রতিটি মানুষের সম্পূর্ণ তথ্য দেওয়া কি সম্ভব? এদিন সেও প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। মনে করান, তাড়াহুড়ো করে বিজেপির কথায় নাগরিকদের নাম যদি বাদ দেওয়া হয়, কোনও সম্প্রদায়ের যদি অধিকার হরণ করা হয়, তাহলে তা বরদাস্ত করবে না বাংলা সরকার। মমতার বক্তব্য, 'বন্যায় মানুষের ঘরবাড়ি, কাগজপত্র সব ভেসে গিয়েছে। কোথা থেকে মানুষ এখন কাগজ দেবে? কেউ কেউ আবার উৎসবের ছুটিতে বাইরে আছেন। তাঁরাই বা এখন কাগজ দেখাবেন কীভাবে?'
তিনি আরও বলেন, 'এসআইআর নাকি এনআরসি? আমি শুনেছি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পাবলিক মিটিঙয়ে, কিছু নির্দেশ দিয়ে গেছেন। বলেছেন অনেক নাম বাদ দেব। বাদ দেবার কে তাঁরা? আজ ক্ষমতায় আছে, কাল নাও থাকতে পারে।' তার পরেই মমতা বলেন, 'আমি মনে করি এটা এসআইআর নয়, এনআরসি করার চক্রান্ত চলছে।' কেন্দ্র, সরকারের একাধিক এজেন্সিকে একহাত নেন। বলেন, 'যারা বিজেপির কথায় শুধুমাত্র রাজনীতি করছে, শিক্ষা, সংস্কৃতি, ভোটার তালিকা থেকে, উৎসব, সমস্ত এজেন্সিকে দিয়ে গৈরিকীকরণ করছে। একদল মিরজাফর আছে। এঁরা মনে করেছেন, তাঁরাই শেষ কথা বলবেন। '
এসআইএর-এর নামে বৈধ ভোটারদের বাদ দিলে পরিণতি কী হতে পারে, কোন পর্যায়ে যেতে পারে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ, তাও মনে করান মমতা। বিজেপিকে উদ্দেশ করে বলেন, 'আগুন নিয়ে খেলবেন না। নিজেদের সংযত করুন। আপনার মন্ত্রী যদি কাজ শুরু হওয়ার আগে বলেন দেড় কোটি ভোটার বাদ দেবে, প্রথমে ওই মন্ত্রীকে বাদ দিন, নয়তো বলুন এসব চক্রান্ত।' মমতার সাফ বার্তা, দুটি বিষয় চলতে পারে না একসঙ্গে।
এই মুহূর্তে নির্বাচন কমিশনের এক প্রতিনিধিদল এসেছে বঙ্গে। দলে রয়েছেন মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক জ্ঞানেশ ভারতী। মমতার বক্তব্যে উঠে আসে এই প্রসঙ্গও।