নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: ঘোষণা হয়ে গিয়েছে বিহার বিধানসভার নির্বাচন। তাই সে রাজ্যের প্রায় ৭৪ লক্ষ কৃষক পরিবারের মন পেতে মরিয়া মোদি সরকার। তবে শুধু বিহার নয়, কেন্দ্রের লক্ষ্য গোটা দেশের কৃষকরাই। সেই মতো বাজেটে ঘোষিত কম উৎপাদনশীল ১০০ জেলার জন্য ‘ধন-ধান্য কৃষি যোজনা’র আনুষ্ঠানিক সূচনা হচ্ছে আগামী কাল, শনিবার। ডাল উৎপাদনে দেশকে আত্মনির্ভর করার লক্ষ্যেও হবে ঘোষণা। প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, দিনটি বিহারের জনপ্রিয় নেতা প্রয়াত জয়প্রকাশ নারায়ণের জন্মদিন। সেদিনই দিল্লির পুসা ইনস্টিটিউটে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বার্তা দেবেন। সাক্ষাৎ করবেন কৃষকদের সঙ্গেও। অনলাইনের মাধ্যমে প্রায় এক কোটি কৃষককে ওই অনুষ্ঠানে যুক্ত করা হবে। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, দিল্লিতে ‘কৌশলে’ এই কর্মসূচিকে বিশেষভাবে সাজানো হয়েছে। এর লক্ষ্য, যাতে আদর্শ নির্বাচন বিধি লঙ্ঘন না হয়, আবার কৃষকদের মন পাওয়ার বার্তাও দেওয়া হয়ে যায়।
কৃষকদের উপার্জন দ্বিগুণ করা নিয়ে মোদি সরকারকে একাধিকবার নিশানা করেছে বিরোধীরা। সংসদে এ ব্যাপারে জবাব এড়িয়ে গেলেও বিরোধীদের সেই সমালোচনা খণ্ডন করছে কেন্দ্র। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান বলেন, ‘আইসিএআর (ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর এগ্রিচালচার রিসার্চ)-এর কাছে ৭৫ হাজার কৃষকের নমুনা সমীক্ষার তথ্য রয়েছে। সেখানে দেখা গিয়েছে, শুধু দ্বিগুণ নয়, অনেকেরই উপার্জন গত এক দশকে তার চেয়ে বেশি হয়েছে।’ যদিও সেই অঙ্ক কত, তা নিয়ে কিছু বলেননি তিনি।
শিবরাজ বলেন, ‘চাল এবং গম উৎপাদনে আমরা স্বনির্ভর। কিন্তু ডাল উৎপাদনে এখনও বিদেশের উপর নির্ভরশীল। এটা খুবই চিন্তার বিষয়। চাহিদা মেটাতে বিদেশ থেকে প্রায় ২৫ লক্ষ টন ডাল আমদানি করতেই হয়। তবে সরকারের টার্গেট আগামী পাঁচ বছরের (২০৩০-৩১ অর্থবর্ষ) মধ্যে ডাল উৎপাদনে দেশ আত্মনির্ভর হবে।’ মন্ত্রী বলেন, ‘এখন ডাল উৎপাদন হয় বছরে ২৪২ লক্ষ টন। অড়হর, বিউলি এবং মসুরের মতো ডাল চাষ হয় ২৭৫ লক্ষ হেক্টর জমিতে। তাই ডালে আত্মনির্ভর হতে পাঁচ বছরে চাষের এলাকা বাড়িয়ে করা হবে ৩১০ লক্ষ হেক্টর। উৎপাদনের টার্গেট ৩৫০ লক্ষ টন।’ কৃষকদের মন জয়ে শিবরাজ সিং চৌহান জানান, ‘কৃষকরা যে পরিমাণ ডাল উৎপাদন করবেন, তার ১০০ শতাংশই সরকার ন্যূনতম সহায়ক মূল্য দিয়ে কিনবে। উৎপাদন বাড়াতে ধান ও গম চাষের জমিতে ফসল কাটা হয়ে গেলে সেটিকে ডাল চাষের জন্য ব্যবহার করা হবে। একইসঙ্গে সয়াবিনের সঙ্গেও ডাল চাষ করতে কৃষকদের উৎসাহ দেওয়া হবে।’ যদিও এখন ডাল চাষ করে কৃষকরা লাভের মুখ দেখেন না বলেই দাবি বিভিন্ন কৃষক সংগঠনের। সাধারণ ক্রেতার জন্য ডালের দামও কমেনি। এমতাবস্থায় সরকারের আত্মনির্ভর হওয়ার কর্মসূচি কতটা সফল হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। যদিও মন্ত্রীর দাবি, ‘টার্গেট আমরা পূরণ করেই ছাড়ব।’