সুব্রত ধর, শিলিগুড়ি; কথায় নয়, কাজে বড় হতে হবে। সদিচ্ছা থাকলে ভয়াবহ দুর্যোগে সহায়সম্বলহীন হয়ে যাওয়া মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে কিছু করার আসল সময় এখনই। সব করে দেওয়ার কথা বলে ভবিষ্যতের গর্ভে ঠেলে দিলে পরিণাম যে মারাত্মক হতে পারে, তা ভালোই আন্দাজ করতে পারছেন কার্শিয়াংয়ের বিজেপি বিধায়ক বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা বা বিপি বজগাঈ। আর তাই পাহাড়ের দুর্দিনে কেন্দ্রীয় সরকারকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন তিনি। এমনকী দুর্গত এলাকায় ফোটো তোলার রাজনীতি নিয়ে তোপ দাগলেন স্বয়ং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজুর বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার শিলিগুড়ি শহরের চম্পাসারির বাড়ি থেকে বিষ্ণুর তোপ, ‘বছরখানেক আগে পাহাড়ের প্রাকৃতিক পরিবেশের করুণ অবস্থা নিয়ে কেন্দ্রের কাছে চিঠি দিলেও কিছুই করেনি। এখন আবার বিপর্যয়ের পর প্রধানমন্ত্রীর নাম নিয়ে ছবি তোলার রাজনীতি হচ্ছে। সেই রাজনীতিতে বিশ্বাসী নই।’ ফলে দুর্যোগ বিধ্বস্ত পাহাড়ের পদ্ম শিবিরে এখন ‘গৃহযুদ্ধ’। টানা চারবার দার্জিলিং লোকসভা আসন দখলের পরও যা ব্যাপক অস্বস্তি বাড়িয়েছে বিজেপির।
পাঁচদিন আগের বিধ্বংসী বিপর্যয়ে বিপর্যস্ত হয় দার্জিলিং পাহাড়। মিরিক থেকে জোড়বাংলো-সুখিয়াপোখরি, রংলিরংলিয়ট থেকে দার্জিলিং পুলবাজার, সর্বত্র ছড়িয়ে ধ্বংসের ছবি। এখন পাহাড় পুনর্গঠনে ঝাঁপিয়েছে রাজ্য সরকার ও জিটিএ। ধসের মাটি সরিয়ে রাস্তা, পর্যটনকেন্দ্র স্বাভাবিক করছে। উল্টোদিকে বিধ্বস্ত পাহাড় ঘুরে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে গা গরম করা কিছু বক্তব্য দেওয়া ছাড়া বিজেপি নেতা-মন্ত্রীরা বিশেষ কিছু করেননি। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসেবে রিজিজু দু’দিন ধরে পাহাড়ের বিধ্বস্ত এলাকাগুলি পরিদর্শন করেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বিজেপির স্থানীয় এমপি রাজু বিস্তা। কিন্তু এখনও পর্যন্ত মোদি সরকার বিপর্যয় ব্যবস্থাপনায় কোনও প্যাকেজ ঘোষণা করেনি। এমন প্রেক্ষাপটেই দলের বিরুদ্ধে সুর সপ্তমে বিজেপির বিদ্রোহী বিধায়কের। রিজিজুর নাম অবশ্য তিনি নেননি। তবে বলেছেন, ‘এখানে রাজ্য সরকার আছে। দুই সরকারের বহু এজেন্সিও রয়েছে। তাদের মাধ্যমেই পরিস্থিতির রিপোর্ট যাওয়ার কথা কেন্দ্রের কাছে। অথচ কেন্দ্রের এক মন্ত্রী সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসেবে এসেছেন। মন্ত্রীর ওই বক্তব্য নিয়ে কী ভাবব? এটা ছবি তোলার রাজনীতি ছাড়া আর কিছু নয়।’ গত বিধানসভা নির্বাচনে কার্শিয়াং কেন্দ্র থেকে বিজেপির টিকিটে জয়ী হন বিষ্ণু। তাঁর অভিযোগ, ২০২৩ সালে সিকিমের হ্রদ বিপর্যয়ের জেরে তিস্তা গতিপথ পরিবর্তন করেছে। নদীগর্ভে বালি-পাথর-নুড়ি জমে নাব্যতা কমেছে। জলবিদ্যুৎ ও রেল প্রকল্পের জেরে পাহাড়ের ভিতরে চোরাগোপ্তা ভাঙনও ধরেছে। সিকিম বিপর্যয়ের পর এসব বিষয় নিয়ে কেন্দ্রের কাছে তিনি চিঠি পাঠালেও কেন্দ্র কিচ্ছু করেনি। সিকিম বিপর্যয়ের জেরে কালিম্পং ও দার্জিলিং জেলাতেও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। তার জন্য পর্যন্ত সাহায্য মেলেনি।
বিদ্রোহী বিধায়কের দিকে পাল্টা আঙুল তুলেছেন বিজেপির দার্জিলিং পার্বত্য সাংগঠনিক জেলা কমিটির সভাপতি সঞ্জীব লামা। তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রের কাছে চিঠি লেখা ছাড়া উনি কী করেছেন? বিধায়ক হলেও রাজ্য সরকারের কাছে বিষয়গুলি তোলেননি। দুর্গতদের সহায়তায় স্থানীয় এমপি সহ দলের নেতারা মাটিকামড়ে পড়ে আছেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এখানকার পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট করবেন। কিন্তু ওই বিধায়ককে দেখা যাচ্ছে না কেন?’ বিষ্ণুর অবশ্য সাফাই, ‘মেরুদণ্ডের সমস্যায় বাড়িতে রয়েছি। দলের কেউ যোগাযোগ রাখছেন না। তা হলেও দুর্যোগ বিধ্বস্ত এলাকায় কোথায়, কী প্রয়োজন, সেভাবে সরকারকে জানাচ্ছি।’