নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি: দুর্যোগের ছেবলে বিধ্বস্ত পাহাড়ের ‘রানি’ কমলা। কোথাও কমলা বাগান তলিয়েছে পাহাড়ের খাদে। আবার কোথাও ধসের ধাক্কায় তছনছ বাগান। গুটি বা মার্বেল আকৃতির ফল সহ গাছ উপড়ে পড়েছে। এরজেরে কমলার ফলন কমবে বলেই আশঙ্কা। এনিয়ে দুশ্চিন্তায় চাষিরা। শুধু তাই নয়, শীতে বাংলার বাজারে দার্জিলিংয়ের কমলা মিলবে কি না তা নিয়ে রয়েছে যথেষ্ট সন্দেহ। এনিয়ে সমতলের বাসিন্দা ও ফল ব্যবসায়ীরাও হতাশ।
জিটিএ’র ভূমি ও কৃষি বিভাগের সদস্য সতীশ পোখলের বলেন, ভয়াবহ প্রাকৃতি বিপর্যয়ে কমলা লেবুর বহু বাগান কার্যত দফারফা। যারফলে কমলার ফলন কমবে বলেই মনে হচ্ছে। সেই ক্ষয়ক্ষতির হিসেব উদ্যানপালন দপ্তরের আধিকারিকরা তৈরি করছেন। আমরা কৃষকদের পাশে আছি।
দার্জিলিং পাহাড়ের অর্থকারী ফসলগুলির মধ্যে কমলা অন্যতম। শুধু বাংলা নয়, যার কদর জগৎজোড়া। এই ফল পাহাড়ের ‘রানি’ হিসেবে পরিচিত। গত জুলাই মাসে কমলা গাছে ধরেছে ফুল। এবার প্রতিটি বাগান ফুলে ভড়ে গিয়েছিল। মৌমাছিও এসেছিল অনেক। এতে পরাগ মিলন সুষ্ঠুমতো হওয়ায় গাছে গাছে গুটি ধরে। এখন কমলার আকার মার্বেলের মতো। নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে ফলন উঠতে। কিন্তু পাঁচদিন আগের ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে কমলা বাগানে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, বিপর্যয়ের প্রাথমিক হিসেব অনুসারে প্রায় ৫০০ হেক্টর জমির কমলা বাগান ধ্বংস হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ নিয়ে সমীক্ষা চলছে। ক্ষতিগ্রস্ত বাগানের এলাকা আরও বাড়তে পারে।
দার্জিলিং পাহাড়ের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে কমলা বাগান। যারমধ্যে মিরিক উল্লেখযোগ্য। সংশ্লিষ্ট এলাকা ‘কমলা সিটি’ হিসেবে পরিচিত। স্থানীয়রা বলেন, বিপর্যয়ের তাণ্ডব ছিল মিরিকে বেশি। সেখানকার কিছু জায়গায় কমলার বাগান ধসে গিয়েছে পাহাড়ের খাদে। সেখানে বাগানের অস্তিত্ব নেই। আবার কিছু জায়গায় বাগানের উপর দিয়ে বইছে ঝোরা। কিছু জায়গায় ধসের থাবায় লন্ডভন্ড বাগান। কোনও গাছ হেলে গিয়েছে। কোনও গাছ মাটিতে পড়ে গিয়েছে।
দার্জিলিং জেলা উদ্যানপালন দপ্তরের ডেপুটি ডিরেক্টর প্রভাস মণ্ডলের নেতৃত্বে বৃহস্পতিবার একটি দল মিরিক পরিদর্শন করেছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, সংশ্লিষ্ট এলাকায় প্রায় ১৭ জন কমলা চাষি রয়েছেন। এখানে কমলার বেশকিছু বাগান ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। উদ্যানপালন দপ্তরের ডেপুটি ডিরেক্টর বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কমলা চাষিদের সঙ্গে কথা হয়েছে। শুধু মিরিক নয়, জেলায় এ ধরনের ক্ষতি আরও কিছু এলাকায় হয়েছে। শীঘ্রই এ ব্যাপারে রাজ্য সরকারের কাছে রিপোর্ট পাঠানো হবে।
মিরিকের বাইরে কার্শিয়াং, দার্জিলিংয়ের পুলবাজার, সুখিয়াপোখরি, রংলিরংলিয়টেও কমলার বাগান রয়েছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, এখানকার কমলার আকৃতি তিন ধরনের— ছোট, মাঝারি ও বড়। প্রতিটিরই খোসা পাতলা। স্বাদ অম্লত্বযুক্ত মিষ্টি। গতবছর কমলা চাষের এলাকা ছিল ১৩শো হেক্টর। এবারও সেই পরিমাণ জমিতেই চাষ হয়েছিল। প্রকৃতির রোষে এবার ফলন কমছে। ভরা শীতে এখানকার কমলা সমতলে মিলবে কি না তা নিয়ে ব্যবসায়ীরা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। ফাইল চিত্র।