স্কুলে কম্পোজিট গ্রান্টে ৬ কোটি ৪৪ লক্ষ টাকা, বিদ্যালয়ের পরিকাঠামো উন্নয়নে ব্যয় হবে অর্থ
বর্তমান | ১০ অক্টোবর ২০২৫
সংবাদদাতা, বহরমপুর: ২০২৫-’২৬অর্থবর্ষে কম্পোজিট গ্র্যান্টের ২৫শতাংশ টাকা বরাদ্দ করল রাজ্য সমগ্র শিক্ষা মিশন। মুর্শিদাবাদ জেলার প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলির জন্য কম্পোজিট গ্র্যান্টে মোট ৬কোটি ৪৪লক্ষ ৬৬হাজার ২৫০টাকা বরাদ্দ হয়েছে। একবছর পর এই অনুদান মেলায় খুশি শিক্ষকমহল। কম্পোজিট গ্র্যান্টের ৬০শতাংশ টাকা কেন্দ্রের দেওয়ার কথা। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার এবছর ওই টাকা তো দেয়ইনি, উপরন্তু গত অর্থবর্ষের টাকাও বাকি রেখেছে। তাই গতবছর ও এবছরের টাকা কেন্দ্র আদৌ দেবে কিনা-তা নিয়ে শিক্ষকরা সন্দিহান রয়েছেন।
কম্পোজিট গ্রান্টের টাকায় স্কুলের দৈনন্দিন স্টেশনারি সামগ্রী, ফার্স্ট এইড কিটস, টয়লেট ক্লিনিং কিটস, হ্যান্ডওয়াশ কেনা হয়। এছাড়া, স্কুল পরিচ্ছন্ন রাখা সহ একাধিক খাতে এই টাকা খরচ করা হয়। এতদিন এসব খরচ শিক্ষকরা নিজেদের বেতনের টাকা থেকেই মিটিয়ে এসেছেন। অবশেষে সরকারি অনুদানের টাকা মেলার খবরে তাঁরা হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেন। বহরমপুর সদর পশ্চিম চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক শুভাশিস দে বলেন, কম্পোজিট গ্রান্টের টাকা বকেয়া থাকলেও কোথাও পঠনপাঠন বা পরিকাঠামোর খামতি ছিল না। শিক্ষকরা যেভাবেই হোক, স্কুল চালিয়ে এসেছেন।
সমগ্র শিক্ষা মিশনের তরফে স্কুলের শ্রেণিকক্ষ ও শৌচাগারের পরিকাঠামো উন্নয়ন, পানীয় জলের ব্যবস্থা, শিক্ষণ সামগ্রী সংযোজন সহ ২৩টি খাতে কম্পোজিট গ্রান্টের টাকা খরচের নির্দেশিকা রয়েছে। প্রতিটি স্কুল পড়ুয়াসংখ্যার উপর নির্ভর করে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা পায়। ১-৩০জন পড়ুয়া থাকলে সেই স্কুলকে ১০হাজার টাকা দেওয়া হয়। ৩১-১০০জন পড়ুয়া থাকলে ২৫হাজার টাকা মেলে। ১০১-২৫০জন পড়ুয়া থাকলে ৫০হাজার, ২৫০-১০০০ অবধি ৭৫হাজার টাকা দেওয়া হয়। যে সমস্ত স্কুলে হাজারের বেশি ছাত্রছাত্রী রয়েছে, সেগুলি একলক্ষ টাকা করে পায়। সরকারি, সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত, সরকারি স্পনসরড প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্কুলকে এই গ্রান্ট দেওয়া হয়। কিন্তু গতবছর থেকে কেন্দ্র ৬০শতাংশ টাকা না দেওয়ায় বিভিন্ন স্কুল কর্তৃপক্ষ সমস্যায় পড়েছে।
মুর্শিদাবাদ জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলি ৫কোটি ৩৫হাজার, উচ্চপ্রাথমিক বিদ্যালয়গুলি ৪২লক্ষ ২হাজার ৫০০, সেকেন্ডারি স্কুল ১৮লক্ষ ১৬হাজার ২৫০ ও উচ্চমাধ্যমিক স্কুলগুলি ৮৪লক্ষ ১২হাজার ৫০০টাকা করে পাচ্ছে। গতবছর দুর্গাপুজোর আগে রাজ্য সমগ্র শিক্ষা মিশন এই অনুদানের টাকা দিয়েছিল। একবছরের বেশি সময় পর ফের টাকা মেলায় শিক্ষকরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন।
বেলডাঙা চক্রের ৩০নম্বর আণ্ডিরণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৮৫জন পড়ুয়া রয়েছে। ২৫শতাংশের হিসেবে এই স্কুল এবার ১২৫০০টাকা পাচ্ছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ দত্ত বলেন, শিক্ষার মানোন্নয়নই একটি জেলার সামগ্রিক উন্নয়নের মূল ভিত্তি। শিক্ষাক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের এই টাকা বরাদ্দ করা নিঃসন্দেহে ভালো পদক্ষেপ। এই টাকা জেলার প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক-সমস্ত স্কুলকে নতুন উদ্যমে এগিয়ে যেতে সহায়তা করবে।
বহরমপুর সদর পশ্চিম চক্রের তেজপাল লোহিয়া জিএসএফপি স্কুলের প্রধান শিক্ষক অনিন্দ্য সিনহা বলেন, বহুদিন ধরে শিক্ষকরা নিজেদের বেতনের টাকা থেকে স্কুলের খরচ চালাতে সাহায্য করছেন। টাকা হাতে পেলে তাঁদের প্রাপ্য মিটিয়ে দেওয়া হবে। শিক্ষকমহলের একাংশ জানালেন, রাজ্য সমগ্র শিক্ষা মিশন কম্পোজিট গ্রান্টে নিজেদের শেয়ার দিলেও কেন্দ্রের টাকা দীর্ঘদিন ধরে বকেয়া পড়ে থাকছে। রাজ্যের শিক্ষার উন্নয়নে কেন্দ্রের এমন উদাসীনতা কাঙ্ক্ষিত নয়।