• গোপীবল্লভপুরে পিস্তল, গুলি সহ ধৃত তৃণমূল নেতা, চাঞ্চল্য
    বর্তমান | ১০ অক্টোবর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, ঝাড়গ্ৰাম: শনিবারের রাত। গোপীবল্লভপুরের যুগীডিহা চেকপোষ্টে পাহারা দিচ্ছিল বেলিয়াবেড়া থানার পুলিশ। বাইকে করে আসা এক ব্যক্তিকে সন্দেহ হওয়ায় তাঁকে আটক করা হয়। তল্লাশি চালাতে গিয়ে পুলিশের চক্ষুচড়কগাছ! বাজেয়াপ্ত করা হয় ৭.৬৫৫ এমএম পিস্তল ও গুলি। পরে পুলিশ জানতে পারে, ওই ব্যক্তি আসলে তৃণমূলের স্থানীয় দাপুটে নেতা বিপ্লব মণ্ডল। তাঁকে গ্ৰেপ্তার করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। ঘটনাটি সামনে আসতেই তৃণমূলের অন্দরে তোলপাড় শুরু হয়েছে। রাখঢাক না করেই  অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন জেলার বহু নেতা। 

    ঝাড়গ্রামের এসপি অরিজিৎ সিনহা বৃহস্পতিবার বলেন, ‘পিস্তল ও গুলি সহ বিপ্লব মণ্ডল নামে এক ব্যক্তিকে গ্ৰেপ্তার করা হয়েছে। পিস্তলটি অনেক পুরনো। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।’ 

    বিপ্লব ঝাড়গ্রাম জেলা ‘ইন্ডিয়া ওয়ান্টস মমতাদি কমিউনিটি’র সহ সভাপতি। দলের নানা রাজনৈতিক কর্মসূচিতে উঠতি এই নেতাকে প্রথম সারিতেও দেখা যায়। দলবল নিয়ে এলাকায় দাপিয়ে বেড়ান। জেলার এক তরুণ সাংবাদিককে মারধর করারও অভিযোগ রয়েছে বিপ্লবের বিরুদ্ধে। পুলিশ ব্যবস্থা না নেওয়ায় বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছিল। ধৃতের সঙ্গে এলাকার বালি মাফিয়াদের দহরম-মহরম সর্বজনবিদিত।  

    দীর্ঘদিন ধরে ঝাড়খন্ড লাগোয়া গোপীবল্লভপুর ব্লকে দুষ্কৃতীদের দাপট বাড়ছে। মূলত, বালি খাদান এলাকার নিয়ন্ত্রণ কার হাতে থাকবে, তা নিয়ে দুষ্কৃতীদের বিভিন্ন গোষ্ঠীর লড়াই শুরু হয়েছে। কোনও কোনও মাফিয়া গোষ্ঠী স্থানীয় নেতাদের হাত করে শাসকদলের অন্দরে ঢুকে পড়ছে। দলের নামে নিজেরাই সংগঠন তৈরি করে নানা পদে বসে পড়ছে। উনিশের লোকসভা ভোটের পর এরাই রাজনৈতিক পালাবদলের গন্ধ পেয়ে অন্য দলে ভিড়ে গিয়েছিল। তারাই এখন শাসকদলের অন্দরে ঢুকে পড়ে বালি খাদান এলাকার নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে। ফলে, বদলে যাচ্ছে এলাকার রাজনৈতিক ও সামাজিক সমীকরণ। যা নিয়ে জেলার পোড়খাওয়া তৃণমূল নেতারা সিঁদুরে মেঘ দেখছেন। সাংগঠনে বেনোজল ঢুকে পড়ার কথা তাঁরা অস্বীকারও করছেন না। কিছুদিন আগে গোপীবল্লভপুর-১ ব্লকের চোরচিতা হাইস্কুলের এক ছাত্র পিস্তল নিয়ে গিয়ে শিক্ষককে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিল। ঝাড়খন্ড থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল ওই ছাত্রের বাবাকে। তদন্তে উঠে আসে পিস্তলটি ছিল তার বাবা কেষ্ট দোলইয়ের। যিনি স্থানীয় তৃণমূল নেতা। এই কেষ্টর সঙ্গে মাখামাখি রয়েছে ধৃত বিপ্লবের। এদিন জেলা তৃণমূলের এক প্রবীণ নেতা আক্ষেপ করে বলছিলেন, ‘বাম অত্যাচারের সময়  দলের বহু নেতা ও কর্মী লড়াই করেছেন। দলের আদর্শ ও নীতি মেনে তাঁরা এখনও রাজনীতি করেন। দল এখন ক্ষমতায়। তাই সুবিধাভোগীরা নিজেদের স্বার্থে দলের অন্দরে ঢুকে পড়ছে। স্থানীয় কিছু নেতা তাদের প্রশ্রয়-আশ্রয় দিচ্ছেন। শীর্ষ নেতৃত্ব  এখনই যদি নজর না দেয়, তাহলে মূল্য চোকাতে হবে।’

    ওই প্রবীণ নেতার কথার সূত্র ধরে জেলা শ্রমিক সংগঠনের নেতা সৌমেন আচার্যও বলেন, ‘যেমন খুশি তেমন সাজার মতো এখন অনেকেই তৃণমূল সাজছে। দলের তরফে ‘ইন্ডিয়া ওয়ান্টস মমতাদি কমিউনিটি’কে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে কি না আমার জানা নেই। স্থানীয়স্তরের কিছু নেতা এদের প্রশ্রয় দিচ্ছেন। দলের বদনাম হচ্ছে।’ বিপ্লবের গ্রেফতার নিয়ে ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের সহ সভাপতি প্রসূণ ষড়ঙ্গি বলেন, ‘দলের নাম ভাঁড়িয়ে অনেকে সুবিধা নিচ্ছে। আইন আইনের পথে চলবে। দলের তরফে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।’
  • Link to this news (বর্তমান)