• কৌটো নাড়াতে গিয়েই কটাক্ষের মুখে বিজেপি, তোমাদের টাকার অভাব নাকি!
    বর্তমান | ১০ অক্টোবর ২০২৫
  • সুখেন্দু পাল, বর্ধমান: উত্তরবঙ্গের বিপর্যয়ে ত্রাণ সংগ্রহে সিপিএমকে নকল করতে গিয়ে পদে পদে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে গেরুয়া শিবিরকে। ৩৪ বছরের নিরবচ্ছিন্ন বামশাসনে বাংলার মানুষ লালঝাণ্ডা আর কৌটোকে প্রায় এক করে দেখতেন। কোথাও কোনও দুর্যোগ, বিপর্যয় হলেই পাড়ায় পাড়ায় বেরিয়ে পড়তেন গরিব পার্টির কমরেডরা। কৌটো নাড়িয়ে তহবিল সংগ্রহ করতেন। এখনও করেন। তফাৎ শুধু একটাই। ক্ষমতাসীন থাকার সময় প্রচুর মানুষ সাড়া দিতেন। এখন খুব কম লোকই দেন। কিন্তু, ধনী, বণিক শ্রেণির পার্টি বিজেপি যে বামেদের পথ অনুসরণ করবে, তা ঠিক মানতে পারছেন না বর্ধমান শহরের লোকজন। ত্রাণ সংগ্রহে বেরোনো পদ্মের নেতা-কর্মীদের মুখের উপর কটাক্ষ করছেন কেউ কেউ। অনেকে আবার আড়ালে আবডালেও নানা বিরূপ মন্তব্য ভাসিয়ে দিচ্ছেন বাতাসে। 

    হাতে গরম প্রমাণ বুধবারের বিকেল। বর্ধমান শহরের বিসি রোডে অর্থ সংগ্রহে বেরিয়েছেন বিজেপির যুব নেতারা। সঙ্গী কয়েকজন মহিলা নেত্রীও। একটি দোকানে তাঁরা ঢুকতেই ব্যবসায়ী ভেবেছিলেন হয়তো লালপার্টির লোকেরা এসেছেন। ৫০ টাকার একটি নোট বাড়িয়েও দিলেন। আচমকা তাঁর নজর পড়ে যুবনেতাদের হাতে ধরা ঝাণ্ডার দিকে। তাতে বিজেপির প্রতীক। তাজ্জব ওই দোকানদার। কোনওরকমে নিজেকে সামলে বলতে শুরু করলেন—‘আরে, তোমরা তো বিজেপির লোক। তোমাদের এভাবে টাকা সংগ্রহ করা মানায় না! বিজেপির টাকার অভাব নাকি। দেশের সব থেকে ধনী দলের সদস্য তোমরা।’ অ্যাসোসিয়েশন অফ ডেমোক্রেটিক রিফর্মস-এর রিপোর্ট নিশ্চয় দেখেছেন ওই দোকানদার!

    অস্বস্তি কোনওমতে ঢাকা দিয়ে সেখান থেকে অন্য একটি দোকানে যাবেন বিজেপির নেতা-নেত্রীরা। রাস্তা দিয়ে হাঁটছেন। তাঁদের দেখে অজিত দাস নামে এক পথচারী কটাক্ষ ছুড়ে দিলেন—‘যত্তসব নাটক। দামি গাড়ি ছাড়া দলের নেতারা ঘুরতে পারেন না। ঝাঁ চকচকে পার্টি অফিস। তারপরও দেখুন কীভাবে মানুষকে বোকা বানানোর জন্য নাটক করছেন? এসবের দরকার কি?’ পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আরও এক পথচারীও একই সুরে বলছিলেন, ‘এঁদের নাটকের আর শেষ নেই।’  

    বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, জনসংযোগ বাড়ানোর জন্যই সিপিএমের কায়দাতেই কৌটো হাতে পথে নামানো হয়েছে দলের নেতা-কর্মীদের। সব জেলাতেই তারা এই কৌশল নিয়েছে। কিন্তু এমন পন্থা হিতে বিপরীত হয়ে উঠবে, তা বোধহয় ভাবতে পারেননি বিজেপির নীতি নির্ধারকরা। এনিয়ে দলের আদি নেতাদের একটা বড় অংশ উষ্মা প্রকাশ করছেন। ওই অংশের  নেতা কেশব কোনার বলছিলেন, ‘কাউকে অনুকরণ করে বেশিদূর এগনো যায় না। নেতারা ভাবছেন সিপিএমকে অনুকরণ করলেই সংগঠন শক্তিশালী হবে। এই ধারণা ভুল। বরং রাজ্যের নেতারা নিজেদের পকেট থেকে উত্তরবঙ্গের দুর্গতদের হাতে অর্থ দিলে মানুষের মন জয় করা যেত। এসব নাটক করলে মানুষ ভুল বুঝবে।’ আক্রমণ করতে ছাড়েনি সিপিএমও। পার্টির জেলা কমিটির সদস্য হারাধন ঘোষ বলছিলেন, ‘আমরা সারা বছর মানুষের পাশে থেকে কাজ করি। ঝড়, বন্যা হলে ত্রাণ সংগ্রগ ঝাঁপিয়ে পড়ি। মানুষও স্বতস্ফূর্ত ভাবে টাকা দেয়। বিজেপিকে মানুষ বিশ্বাস করে না।’

    এদিকে, ত্রাণ সংগ্রহের কাজ ঠিকঠাক হচ্ছে না বলেও দলের অন্দরে কথা উঠছে। হাতেগোনা কয়েকজন নেতা-কর্মী কৌটো নিয়ে পথে বেরিয়ে ফটোসেশন করছেন বলে দলেরই কর্মীদের অভিযোগ। সেই সঙ্গে সংগ্রহকৃত অর্থের সঠিক হিসেব নিয়েও সন্দিহান তাঁরা। এক কর্মী তো বলেই ফেললেন, ‘এর আগে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বিভিন্ন কর্মসূচির জন্য টাকা পাঠিয়েছিল। সেই টাকা ঠিকমতো খরচ হয়নি। ত্রাণ তহবিলে কত টাকা উঠল, সেই হিসাব আদৌ পাওয়া যাবে তো?’-নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)