হলদিয়া থেকে পেট্রকেমে ফেনল প্ল্যান্টের দানবাকৃতি যন্ত্র পরিবহণ
বর্তমান | ১০ অক্টোবর ২০২৫
সংবাদদাতা, হলদিয়া: বৃহস্পতিবার দুপুরে বন্দর থেকে হলদিয়া পেট্রকেমে পৌঁছল নির্মীয়মাণ ফেনল প্ল্যান্টের দানবাকৃতি রিয়াক্টর। ওই রিয়াক্টর দৈর্ঘ্যে প্রায় ৫০০ফুট অর্থাৎ ৫০তলা বাড়ির সমান। পরিবহণের সুবিধার জন্য রিয়াক্টরকে পাঁচটি অংশে ভাগ করে বন্দর থেকে পেট্রেকেমে আনা হচ্ছে। বুধবার থেকে একাজ শুরু হয়েছে। শুক্রবারের মধ্যে ওই রিয়াক্টরের সমস্ত অংশ পেট্রকেমে পৌঁছনোর কথা। এদিন দুপুরে রিয়াক্টরের দু’টি অংশ পেট্রকেমের মূল গেটে প্রবেশ করেছে। মূল গেটের পাশেই সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা খরচে পেট্রকেমের নতুন ফেনল ও অ্যাসিটোন প্রকল্প গড়ে উঠছে। বাকি তিনটি অংশ এখনও বন্দর সংলগ্ন রানিচক এলাকায় রাস্তায় রয়েছে। প্রায় এক হাজার চাকার গাড়ি চেপে ওই রিয়াক্টর চলেছে পেট্রকেমের উদ্দেশে। রিয়াক্টরের পাঁচটি অংশ পাঁচটি রিমোট নিয়ন্ত্রিত গাড়িতে পরিবহণ করা হচ্ছে। প্রতিটি গাড়িতে আড়াইশো চাকা রয়েছে এবং ১০০টন পণ্য পরিবহণ করতে পারে। হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের ইতিহাসে এই প্রথম এত বড়মাপের রিয়াক্টর পরিবহণ করা হচ্ছে। বন্দরের পণ্য পরিবহণকারী একটি দক্ষ সংস্থা একাজের দায়িত্বে রয়েছে।
পেট্রকেম কর্তৃপক্ষ প্রেস বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, এক একটি অক্সিডাইজার বা লো-প্রেসার রিয়াক্টরের দৈর্ঘ্য ৩২.৭৮ মিটার, চওড়া ৮.১৪ মিটার এবং গাড়ির উপর তোলার পর উচ্চতা ৮.৪৫ মিটার অর্থাৎ তিন তলা বাড়ির সমান। পাঁচটি অংশ মিলিয়ে ওই রিয়াক্টরের মোট ওজন ৩৪৬.৬ মেট্রিক টন। দানবাকৃতি রিয়াক্টরকে জাতীয় সড়কের উপর দিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় কোথাও বিদ্যুতের লাইন সাময়িক সরাতে হয়েছে। তৈরি করতে হয়েছে নতুন রাস্তাও। এইচপিএল লিঙ্ক রোডে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার ওভারহেড গ্যাসের লাইন থাকায় নতুন রাস্তা তৈরি করতে হয়েছে। ওই গ্যাসলাইন বাধা হয়ে দাঁড়ায়। শেষমেষ ওই গ্যাস লাইনের তলা দিয়ে জাতীয় সড়ক ১০ ফুট খুঁড়ে ইস্পাতের নতুন রাস্তা তৈরি করতে হয়েছে। তৎপরতার সঙ্গে এদিন ওই রাস্তা তৈরির পর সকালে ওই পথে রিয়াক্টরের দু’টি অংশ গাড়িতে করে পেট্রকেমে পৌঁছয়। তবে সিটি সেন্টার মোড়ে জাতীয় সড়কের একাংশ খুঁড়ে ফেলায় ক্ষুব্ধ সড়ক কর্তৃপক্ষ। কোনও অনুমতি ছাড়াই পরিবহণকারী সংস্থা একাজ করেছে বলে অভিযোগ। হলদিয়ায় এমন ঝুঁকিপূর্ণ দানবাকৃতি পণ্য পরিবহণ দেখতে শয়ে শয়ে মানুষ দাঁড়িয়ে পড়েন, বহু মানুষ মোবাইলে ভিডিও করেন। যা সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমতো ভাইরাল হয়েছে। পেট্রকেমের সিইও নভনীত নারায়ণ বলেন, অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং অপারেশন সাফল্যের সঙ্গে করার জন্য প্রশাসন সহ বিভিন্ন রেগুলেটরি অথরিটি এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। আগামীদিনে হলদিয়ার জন্য এই প্রকল্প বড় ভূমিকা নেবে। প্রসঙ্গত, সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে পেট্রকেমের সম্প্রসারণ এবং নয়া ফেনল প্রকল্প রাজ্যে প্লাস্টিক শিল্পে ফের নবদিগন্তের উন্মোচন করবে। ২০২৬সালের মার্চে ওই প্রকল্প চালু করার লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে। নয়া ফেনল প্রকল্প উৎপাদন শুরু করলে স্পেশালিটি কেমিকেল উৎপাদনে দেশের এক নম্বর জায়গা দখল নেবে হলদিয়া পেট্রকেম। এরফলে রাজ্যে নতুন করে আরও ক্ষুদ্র শিল্প তৈরি হবে।-নিজস্ব চিত্র