পিনাকী ধোলে, বোলপুর: ‘খাঁচাটার উন্নতি হইতেছে, কিন্তু পাখিটার খবর কেহ রাখে না।’ তোতাকাহিনী গল্পে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বুঝিয়েছিলেন, বাহ্যিক আড়ম্বরের কারণে প্রকৃত উদ্দেশ্যই অধিকাংশ সময় হারিয়ে যায়। যেমনটা হারিয়েছে তাঁরই সৃষ্ট বিশ্বভারতী! বাহ্যিক আড়ম্বর বেড়েছে, কিন্তু শিক্ষার মানদণ্ড ক্রমশই কমেছে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউশনাল র্যাঙ্কিং ফ্রেমওয়ার্ক বা এনআইআরএফ র্যাঙ্কিংয়ে দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলির তালিকায় একসময় জ্বলজ্বল করত বিশ্বভারতীর নাম। সেখানে প্রথম দশে তো দূর, দেশের সেরা ৫০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকাতেও খুঁজে পাওয়া যায় না কবিগুরুর স্বপ্নের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে। বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন উপাচার্য প্রবীরকুমার ঘোষ। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, র্যাঙ্কিংয়ে আমরা পিছিয়ে আছি। সামনের জানুয়ারিতে এনআইআরএফ রিপোর্ট প্রকাশিত হবে। আশা করছি বিশ্বভারতী র্যাঙ্কিংয়ে থাকবে।
বিশ্বভারতী সূত্রের খবর, এনআইআরএফ র্যাঙ্কিংয়ে প্রায় এক যুগ আগে ১১নম্বরে ছিল এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। গত কয়েক বছরে শিক্ষায় বিশ্বভারতীর ক্রমশ অবনমন ঘটেছে। এমনকী র্যাঙ্কিংয়ে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ও বিশ্বভারতীর চেয়ে এগিয়ে গিয়েছে। এনিয়ে ঘরে-বাইরে প্রায়শই ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয় বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে। এবার এনআইআরএফ র্যাঙ্কিংয়ে কিছুটা সম্মানজনক জায়গায় বিশ্বভারতী থাকবে বলে আশাবাদী বর্তমান উপাচার্য। দায়িত্ব গ্রহণের পর ছ’মাসে তিনি কী কী কাজ করেছেন এদিন সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে তার খতিয়ান দেন উপাচার্য। সেই প্রসঙ্গে বলতে গিয়েই উপাচার্য বলেন, আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই বিশ্বভারতী র্যাঙ্কিংয়ে যাতে উন্নতি করে সেব্যাপারে সচেষ্ট হয়েছি। এনিয়ে প্রস্তুতি চলছে। ডকুমেন্ট তৈরি হচ্ছে। যেখানে যেখানে আমাদের দুর্বলতা ছিল, নম্বর কম আসছিল সেই জায়গাগুলি চিহ্নিত করেছি। তাঁর সংযোজন, একটি টিম তৈরি করা হয়েছে। তারা দুর্দান্ত কাজ করছে। আশা করছি এই জানুয়ারিতে আমরা যে রিপোর্ট জমা করব তাতে র্যাঙ্কিংয়ে খুবই ভালো স্থানে থাকব।
এনআইআরএফ সূত্রের খবর, মূলত সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিকাঠামোগত উন্নয়ন, গবেষণার উৎকর্ষ, পেশাদারিত্ব দেখা হয়। এছাড়া সমাজের সবস্তরের পড়ুয়াকে শিক্ষার মূল স্রোতে নিয়ে আসার চেষ্টায় কেমন ভূমিকা রয়েছে প্রতিষ্ঠানের, কর্মক্ষেত্রে প্রাক্তনীরা কতটা সফল এমন নানা বিষয়কে মানদণ্ড হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তারপরই দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির ক্রমতালিকা প্রকাশিত করা হয়। গত কয়েক বছর ধরে সেই ক্রমতালিকায় বিশ্বভারতী ৯০-১০০ এর মধ্যে ঘোরাফেরা করেছে। এমনকী, দেশের সেরা একশো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকায় স্থান না পাওয়ার নজিরও রয়েছে বিশ্বভারতীর। এনিয়ে সমালোচনার মুখে পড়ে বিশ্বভারতীর প্রাক্তন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে এও বলতে শোনা গিয়েছিল, বিশ্বভারতীর মান কমেনি। অন্যরা এগিয়ে গিয়েছে।
এদিন উপাচার্য বলেন, বিশ্বভারতীর হাসপাতালের উন্নতি করা হচ্ছে। যেসব অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক কিংবা স্টাফরা হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগ পেতেন না তাঁদের জন্য চিকিৎসার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানো হয়েছে। বহু শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীর পদোন্নতি আটকেছিল। তাঁরা পদোন্নতি পেয়েছেন। ১১৭জন প্রফেসর নিয়োগের তোড়জোড় চলছে। হেরিটেজ ওয়াক চালু করেছি। আগামী দিনে সপ্তাহে অন্তত তিন-চারদিন হেরিটেজ ওয়াকের বন্দোবস্ত করা হবে। গ্রন্থন বিভাগে যেসব বই পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ পাচ্ছিলাম পড়ুয়াদের থেকে, সেই সমস্যাও মেটানো হচ্ছে। পড়ুয়াদের জন্য হস্টেলের পাশাপাশি একাধিক ভবন তৈরি হচ্ছে। শীঘ্রই বাংলাদেশ ভবন খোলা হবে বলে জানান উপাচার্য। সাংবাদিক বৈঠকে উপা