• বেলডাঙায় হাড়হিম হত্যাকাণ্ড ও আত্মহত্যায় পরকীয়া তত্ত্ব, সন্দেহের বশেই স্ত্রী ও ছেলেকে নৃশংস খুন করে আত্মঘাতী স্বামী
    বর্তমান | ১০ অক্টোবর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বহরমপুর: বেলডাঙার হাড়হিম হত্যাকাণ্ডের তদন্তে উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য। পুলিশ প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছে, আত্মঘাতী যুবক সঞ্জিত হালদারের স্ত্রী মৌসুমী ছিলেন পরমা সুন্দরী। সেই কারণেই তাঁকে সবসময় সন্দেহ করতেন সঞ্জিত। তা নিয়ে নিত্য অশান্তি ছিল দু’জনের। আর তার জেরেই স্ত্রী ও ছেলের গলা করাত দিয়ে কেটে খুন করে আত্মঘাতী হন সঞ্জিত। তবে, এই খুন সাময়িক আক্রোশের বশে নাকি পরিকল্পনা করে, সেটাই খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা।  

    পুলিশ জানতে পেরেছে, দুর্গাপুজোর ক’দিন আগে মৌসুমী রাগারাগি করে ছেলেকে নিয়ে নদীয়ার তেহট্টের বাপের বাড়িতে চলে যান। পরে সঞ্জিত শ্বশুরবাড়ি গিয়ে প্রথমে ছেলেকে ফিরিয়ে আনেন। কারণ, তিনি জানতেন ছেলেকে নিয়ে এলে বউকেও ফিরিয়ে আনা যাবে। সেটাই হয়েছিল। দুর্গাপুজো শুরুর ঠিক দু’ দিন আগে মৌসুমী বাপের বাড়ি থেকে বেলডাঙায় ফিরে এসেছিলেন। বুধবার ভোররাতে ঘটে যায় মর্মান্তিক এই ঘটনা। স্ত্রী এবং ছেলেকে খুনের জন্য লোহার হাতুড়ি ও ধারালো অস্ত্রের ব্যবহার করেছিল সঞ্জিত। এইসব অস্ত্র তিনি কোথা থেকে পেলেন, তাঁরও উত্তর খুঁজছে পুলিশ। 

    ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে জানা যাচ্ছে, মৌসুমীর মাথায়, মুখে ও চোখে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। গলার নলিতে ধারালো অস্ত্রের বিশাল গভীর ক্ষত। পুত্র রায়হান হালদারের মাথায় এবং কাঁধে একাধিক আঘাতের চিহ্ন মিলেছে। গলাকাটার আগে স্ত্রী এবং পুত্রকে লোহার হাতুড়ি দিয়ে মাথায় আঘাত করে অচৈতন্য করে দেয় সঞ্জিত। তারপরেই গলার নলি কেটে খুন করা হয়েছে বলেই মনে করছে পুলিশ। সঞ্জিতের ঠোঁটে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। মনে করা হচ্ছে, প্রথমে স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর ধস্তাধস্তি হয়। তারপরই হাতুড়ি দিয়ে মেরে গলা কেটে দেয় সঞ্জিত। এরপর ছেলেকে খুন করে নিজে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হন। স্ত্রী ও ছেলেকে খুন করবে বলে আগে থেকেই হাতুড়ি এবং করাত শোয়ার ঘরে রেখে দিয়েছিলেন সঞ্জিত। 

    বেলডাঙার এসডিপিও উত্তম গড়াই বলেন, ‘স্ত্রীর বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক ছিল বলেই সন্দেহ করত স্বামী। তা নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই দু’জনের মধ্যে অশান্তি চলত। ঘটনার দিন রাতেও দু’জনের মধ্যে খুব অশান্তি হয়। আমরা খুনের মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছি।’ 

    পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, মৌসুমীর এর আগেও একবার বিয়ে হয়েছিল। দশ বছর আগে দেখাশোনা করে সঞ্জিতের সঙ্গে তাঁর দ্বিতীয়বার বিয়ে হয়।  আগের পক্ষের একটি তেরো বছরের মেয়ে রয়েছে। সে মৌসুমীর বাপের বাড়িতে থাকে। তা নিয়েও সঞ্জিতের সঙ্গে মাঝেমধ্যে অশান্তি হতো তাঁর। এছাড়া সঞ্জিতের উপার্জন কম ছিল। মাঝেমধ্যে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। কখনও আবার ডেকরেটরের ঠিকা শ্রমিক হিসেবে কাজ করে কোনও রকমে সংসার চালাতেন। 

    কিন্তু, মৌসুমীর উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল খুব। সেই কারণে তিনি বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন বলে পুলিশের একটি সূত্রের দাবি। সঞ্জিত সেটা জেনে ফেলায় অশান্তি আরও চরম আকার নেয়।  স্বামী-স্ত্রী ও ছেলের ফাইল চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)