সংবাদদাতা, কৃষ্ণনগর: কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজোকে নিছক ধর্মীয় উৎসব ভাবলে ভুল হবে। এই পুজো এক ঐতিহ্যশালী জনপদের ইতিহাস ও সংস্কৃতির বহিঃপ্রকাশও বটে। কয়েক শতাব্দী প্রাচীন এই পুজোর অন্যতম প্রধান আকর্ষণ বুড়িমার পুজো ও দণ্ডী কাটার অনুষ্ঠান। প্রতিবছর পুজোর দিন কৃষ্ণনগরের রাস্তাগুলি মুখরিত হয়ে ওঠে ভক্ত ও দর্শকদের আনন্দ কলতানে। কিন্তু এবছর পুজোর আগে শহরের রাস্তার যা অবস্থা তাতে আদৌ পথে দণ্ডী কাটা যাবে কি না, সেই চর্চায় মুখরিত কৃষ্ণনগরবাসী। ঠাকুর দেখতে ভিড় করা জনতাও এই রাস্তায় চলতে কতটা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে উঢছে সেই প্রশ্নও। রাস্তার হাল দেখে উদ্বিগ্ন শহরবাসী।
কৃষ্ণনগর শহরের ২০ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে পড়ে শহরের আইকনিক বুড়িমার মন্দির। বুড়িমাকে দেখতে হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমান, কাঁধে করে শোভাযাত্রা সহকারে প্রতিমা নিয়ে যাওয়া হয়, হয় দণ্ডী কাটা— যা জগদ্ধাত্রী পুজোর এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু বেহাল রাস্তা যদি পুজোর আগে ঠিক না করা হয়, তবে বড় বিপদের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
এই ওয়ার্ডের স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ তুলেছেন, দীর্ঘ সময় ধরে বুড়িমা মন্দির সংলগ্ন পথ বেহাল। কোথাও বড় বড় গর্ত, কোথাও রাস্তার পিচ উঠে যাচ্ছে, কোথাও আবার ভাঙা ড্রেন। যার ফলে এই রাস্তায় হাঁটাও কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেখানে পুজোর দিন মায়ের কাছে দণ্ডী কাটবেন কী করে ভক্তরা, সেই নিয়ে সকলে চিন্তিত। অন্তত পুজোর আগেই জরুরি ভিত্তিতে রাস্তাগুলি সংস্কার করে চলাফেরার উপযোগী করা তোলা হোক, বলে দাবি বাসিন্দাদের।
এ বিষয়ে ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার উজ্জ্বলা ঘোষ হালদার বলেন, আমার ওয়ার্ডের বেশিরভাগ রাস্তা খারাপ, এ বিষয়ে আমি ইতিমধ্যেই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে চিঠি করেছি। তাঁকে জগদ্ধাত্রী পুজোর সময়কার কথা বিবেচনা করে দ্রুত কাজ শুরু করার অনুরোধ করা হয়েছে। তিনি আগামী সাতদিনের মধ্যে কাজ শুরু করার আশ্বাস দিয়েছেন।
এ বিষয়ে কৃষ্ণনগরের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নরেশ দাস বলেন, ইতিমধ্যেই শহরে রাস্তা সারাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার চিঠি দেওয়ার আগেই বুড়িমার রাস্তা ‘স্যাংশন’ হয়ে গিয়েছিল। জগদ্ধাত্রী পুজোর আগে রাস্তা ঠিক হয়ে যাবে।
এলাকার এক প্রবীণ বাসিন্দা শ্যামল বিশ্বাস বলেন, এতদিন দেখেছি প্রতিবছর পুজোর মরশুম শুরু হওয়ার আগেই রাস্তার সংস্কার হয়ে যেত। এবার তো আর কয়েকটা দিন বাকি আছে, জানি না কবে করবে। সারা শহরে এত রাস্তা খারাপ আগে দেখা যেত না। সত্যি এবার পুজোয় বেহারা থেকে দর্শনার্থীদের নিয়ে একটু হলেও চিন্তায় আছি। দ্রুত রাস্তা ঠিক করতে হবে।
জগদ্ধাত্রী পুজোকে ঘিরে শহরজুড়ে যখন উৎসবের আবহ, তখন বুড়িমার পথের এই ভাঙাচোরা রাস্তা যেন আনন্দে বিষাদের ছায়া ফেলেছে। কৃষ্ণনগরবাসীর একটাই চাওয়া— পুজোর আগেই যেন বুড়িমা সহ সমগ্র কৃষ্ণনগরের রাস্তাঘাট সুন্দর ও নিরাপদ হয়ে ওঠে। • নিজস্ব চিত্র