• উৎসবে সুরা-প্রেম মহিলাদের, মদ বিক্রিতে রেকর্ড পশ্চিম বর্ধমানে
    বর্তমান | ১০ অক্টোবর ২০২৫
  • সুমন তেওয়ারি, আসানসোল: সেপ্টেম্বর মাসে মদ বিক্রির সর্বকালীন রেকর্ড গড়ল পশ্চিম বর্ধমান। শুধুমাত্র পুজোর চারদিনে ৩২ কোটি টাকার বিক্রি। সবমিলিয়ে অঙ্কটা ছাড়িয়েছে ১০২ কোটির ঘর। আর এই রেকর্ড গড়ার ‘স্থপতি’ হিসেবে ‘স্বীকৃতি’ পাচ্ছেন মহিলারা! ভাবতে অবাক লাগলেও এটাই বাস্তব। পুরুষদের সঙ্গে সেয়ানে সেয়ানে টক্কর দিয়ে উৎসব মরশুমে সুরাপানে মজেছিলেন তরুণী থেকে বাড়ির বধূরাও। অর্থাৎ, ক্রেতার তালিকায় মহিলাদের অন্তর্ভুক্তি ক্রমেই বাড়ছে। তাতে অবশ্য রাজস্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে বঙ্গের কোষাগারে। খুশি বিক্রেতা থেকে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্তারা। 

    জেলা আবগারি দপ্তর সূত্রে খবর, অতীতে আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে এক মাসে একশো কোটি টাকার মদ কখনই বিক্রি হয়নি। এবার তা ছাপিয়ে রেকর্ড গড়েছে। জানা গিয়েছে, সেপ্টেম্বর মাসে কান্ট্রিমেড লিকার বা সিএসই বিক্রি হয়েছে ১৯ লক্ষ ৩১ হাজার লিটার। ফরেন লিকার বা বিদেশি মদ বিক্রি হয়েছে ৬ লক্ষ ৬৬ হাজার লিটার। বিয়ার বিক্রি হয়েছে ৬ লক্ষ ৬৫ হাজার লিটার। এখানে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল হুইস্কি, রাম, ভোদকার সঙ্গে সমানে টক্কর দিয়েছে বিয়ার। আপাতদৃষ্টিতে যা ইঙ্গিত করে মহিলাদের সুরাপানের প্রবণতাকে। কেননা, মহিলারা বিয়ারে বেশি স্বচ্ছন্দ। তবে, শিল্পাঞ্চলের অনেক মদ বিক্রেতা জানিয়েছেন, বিয়ারের পাশাপাশি বিদেশি মদও কিনেছেন প্রচুর মহিলা। 

    আবগারি দপ্তরের হিসেব বলছে, গত বছরের থেকে এবছর কান্ট্রিমেড লিকার বা দেশি মদ বিক্রির পরিমাণ বেশি। বিক্রি হয়েছে দেড় লক্ষ লিটার। গত বছরের তুলনায় বিয়ারের বিক্রি মাত্র এক মাসে বেড়েছে ১ লক্ষ ১১ হাজার লিটার। আবগারি দপ্তরের একটি সূত্রও মানছে, নতুন গ্রাহকদের সুরা প্রেমের কারণেই মদ বিক্রি লাফিয়ে বাড়ছে। আর সেই নতুন গ্রাহকদের তালিকায় সিংহভাগই মহিলা। তাঁদের কেউ সদ্য যুবতী, কেউ তরুণী। কেউ আবার মধ্যবয়স্কা বধূ। সকলে মোটামুটি সম্ভ্রান্ত পরিবারের। 

    বিএনআর মোড় থেকে আসানসোল কোর্টের মধ্যবর্তী স্থানে আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের নতুন অফিস। পেল্লাই বাড়ির গেটের উল্টো দিকে কয়েকটি চা ও সিগারেটের দোকান। সকাল থেকেই সেখানে যুবতীদের ভিড়। কেউ আসছেন পুরুষ বন্ধুর বাইকে চেপে। কেউ আসছেন নিজেই স্কুটি চালিয়ে। চা পান করেই সবারই সুখটান সিগারেটে। সন্ধ্যা নামলেই শহরে মদের দোকানে লাইন। পুরুষদের পাশাপাশি দাঁড়িয়ে মহিলারাও। লোকলজ্জার ভয় নেই। বরং অনেক সাহসী। পুরুষদের সঙ্গে কার্যত প্রতিযোগিতা করে পছন্দের ব্র্যান্ডের মদ কিনছেন প্রমীলা বাহিনী। এতো গেল মদের দোকানোর কাউন্টারের ছবি। উৎসব মরশুমে শিল্পাঞ্চলের বারগুলিতেও উপচে পড়া ভিড় ছিল মহিলাদের। সেখানে দেখা মিলেছে শহরের বর্ধিষ্ণু পরিবারের বধূদের। বন্ধুদের নিয়ে হাজির ছিলেন যুবতীরাও। ধনীবাড়ির মধ্যবয়স্কা রমণীদেরও স্বজনদের সঙ্গে দেখা গিয়েছে বারে। এক মদ বিক্রেতা বলছিলেন, বছর দুই-তিনেক আগেও মহিলারা একটু রাখঢাক করে সুরাপান করতেন। এখন তাঁরা প্রকাশ্যেই মদ কিনছেন। লুকোছাপার কোনও ব্যাপার নেই!   
  • Link to this news (বর্তমান)