নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: এ যেন রুপোলি পর্দার গল্প। রাস্তা থেকে একজনকে অপহরণ করে গাড়িতে তুলে পালাচ্ছিল ভিলেন। অপহৃতের চিৎকার কানে যেতেই তড়িঘড়ি বাইক ঘুরিয়ে ধাওয়া এবং মাঝরাস্তায় গাড়ি আটকে অপহৃত ব্যক্তিকে উদ্ধার। সেইসঙ্গে অপহরণকারীকেও পাকড়াও করে নায়ক। এই গল্পেরই প্রতিচ্ছবি দেখা গেল ভাঙড়ে। অপহৃত এখানে এক ব্যবসায়ী। আর নায়ক হলেন এক পুলিশ সার্জেন্ট। ভাঙড়ে বুধবার রাতের এই ঘটনার সঙ্গে হুবহু মিল বলিউডি সিনেমার।
একটি টাটা সুমো গাড়িতে ব্যবসায়ীকে তুলে চম্পট দিচ্ছিল একদল দুষ্কৃতী। বাসন্তী হাইওয়েতে চলন্ত গাড়ির ভিতর থেকে চিৎকার করতে থাকেন অপহৃত। রাস্তায় কর্তব্যরত অবস্থায় থাকা ট্রাফিক সার্জেন্ট সেই আর্তনাদ শুনতে পান। সঙ্গে সঙ্গে তিনি বাইক নিয়ে ধাওয়া করেন গাড়িটিকে। মাঝরাস্তায় গাড়ি আটকে অপহরণ রুখলেন ওই সার্জেন্ট। উদ্ধার করলেন অপহৃত ব্যবসায়ীকে। ঘটনাস্থল থেকেই গ্রেফতার হয় দুই অপহরণকারী ও গাড়ির চালককে।
রাত ৮টা নাগাদ ভাঙড় ট্রাফিক গার্ডের এক সার্জেন্ট দেখতে পান বাসন্তী হাইওয়ে থেকে একজনকে অপহরণ করে দুই ব্যক্তি একটি কালো রঙের টাটা সুমো গাড়িতে তুলে পালিয়ে যাচ্ছে। গাড়িটি বামুনিয়ার দিক থেকে কলকাতার দিকে আসছিল। সেই সময় ঘটকপুকুর মোড়ে ডিউটি করছিলেন সার্জেন্ট কে কে মণ্ডল। তিনি গাড়িটিকে শনাক্ত করেন। সঙ্গে সঙ্গে বাইক নিয়ে ধাওয়া করেন তিনি। এই অপারেশনে তাঁকে সহযোগিতা করেন সিভিক ভলান্টিয়ার জিৎ সাহা। তিনিও ঘটকপুকুর মোড়ে ডিউটি করছিলেন সেই সময়।
পুলিশ সূত্রের খবর, বাসন্তী হাইওয়ের উপর কুমড়োগোলা থেকে ঘটকপুকুর পর্যন্ত বাজার এলাকা হওয়ায় সেখানে পথচারীদের ভিড় থাকে। ফলে গাড়ির গতি কিছুটা কম থাকে। সেই সুযোগকে কাজে লাগায় ট্রাফিক পুলিশ। হঠাৎই একটি কালো রঙের টাটা সুমোর ভিতর থেকে এক ব্যক্তি চিৎকার করে ওঠেন। সার্জেন্টের উদ্দেশে তিনি বলতে থাকেন, ‘বাঁচান! আমাকে অপহরণ করার চেষ্টা করছে...’ এদিকে, বিপদ বুঝে গাড়ির গতি বাড়িয়ে ওই এলাকা থেকে পালানোর চেষ্টা করে চালক। তবে স্থানীয় মানুষের সহযোগিতায় গাড়িটি আটক করেন ট্রাফিক সার্জেন্ট ও সিভিক ভলান্টিয়ার। উদ্ধার করা হয় অপহৃতকে। চালক ছাড়াও দুই যুবক ছিল ওই গাড়িতে। তাদের গ্রেফতার করা হয় বলে জানিয়েছে লালবাজার।
এরই মধ্যে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন ভাঙড় থানার অফিসাররা। গাড়ি সহ প্রত্যেককে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। জানা যায়, অপহৃত ব্যক্তির বাড়ি বিহারের পাটনায়। বয়স ৪৪ বছর। অপহরণকারী দুই যুবক মেদিনীপুরের বাসিন্দা। অপহরণকারী ও অপহৃতরা পূর্ব পরিচিত। তদন্তকারীরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছেন, দুই যুবকের কাছ থেকে বেশকিছু টাকা ধার নিয়ে তা শোধ করতে পারছিলেন না ওই ব্যবসায়ী। তাই মুক্তিপণ চেয়ে টাকা ফেরত পেতে ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে নিজেদের ডেরায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তবে বিহারের বাসিন্দা ওই ব্যক্তি কীসের ব্যবসা করেন, তিনি কবে এবং কত টাকা ধার নিয়েছিলেন ইত্যাদি বিষয়ে জানার চেষ্টা করছে ভাঙড়