• অনলাইনের ‘সুবিধা’ নিয়ে জঞ্জাল কর ফাঁকি, বিপুল রাজস্ব হাতছাড়া পুরসভার
    বর্তমান | ১০ অক্টোবর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: তিন বছর ধরে পুরসভা কোনও ব্যবসায়িক সংস্থার ট্রেড লাইসেন্স পুনর্নবীকরণের সঙ্গেই জঞ্জাল কর সংগ্রহ করে নেয়। এক বছরের জঞ্জাল কর নিয়ে নেওয়া হয় এক লপ্তে। জঞ্জাল কর না দিলে লাইসেন্স পুনর্নবীকরণ হয় না। গোটা প্রক্রিয়াটি এখন অনলাইনেই দিনের দিন সম্পন্ন করা যায়। কিন্তু অভিযোগ, এক্ষেত্রে নিয়মে কিছু শিথিলতা থাকায় তার সুযোগ নিয়ে জঞ্জাল করের লক্ষ লক্ষ টাকা ফাঁকি দিচ্ছে একাধিক সংস্থা। বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হাতছাড়া হচ্ছে পুরসভার। যেমন, বাইপাসের ধারের একটি বেসরকারি হাসপাতাল জঞ্জাল কর জমা সহ লাইসেন্স রিনিউ করিয়েছে মাত্র ১০ হাজার টাকায়! অথচ এই খাতে অন্তত আট লক্ষ টাকা পাওয়ার কথা পুরসভার। দক্ষিণ কলকাতার একটি শপিং মলের ডিপার্টমেন্টাল স্টোর্স, সিনেমা হল জঞ্জাল কর সহ লাইসেন্স রিনিউ করিয়েছে সাড়ে ন’হাজারের কিছু বেশি টাকায়। ওই কর্তৃপক্ষের থেকে অন্তত লাখ দু’য়েক টাকার জঞ্জাল কর পাওয়ার কথা ছিল পুরসভার। সম্প্রতি এমন ১০টি ঘটনা কলকাতা পুরসভার জঞ্জাল সাফাই এবং কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের নজরে এসেছে। কীভাবে এই ‘কারচুপি’ সম্ভব হচ্ছে, খোঁজখবর শুরু করেন বিভাগীয় কর্তারা। তাঁরা জানতে পারেন, অনলাইন ব্যবস্থার নিয়মের ফাঁক গলেই জঞ্জাল কর ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে বিষয়টি পুরসভার শীর্ষ কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হয়েছে বলে খবর। 

    কীভাবে সম্ভব হচ্ছে কর ফাঁকি দেওয়া? পুর কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, নয়া অনলাইন ব্যবস্থায় কী ধরনের ব্যবসা হবে বা ব্যবসার প্রকৃতি কেমন, তা নথিভুক্ত করার জন্য দু’টি জায়গা রয়েছে। ‘নেচার অব ট্রেড ওয়ান’ এবং ‘নেচার অব ট্রেড টু’। নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেককে এই দু’টি জায়গায় নিজস্ব কোম্পানির নাম এবং কী ধরনের ব্যবসা, তা উল্লেখ করতে হয়। তবে দু’টির মধ্যে প্রথমটি বাধ্যতামূলক, দ্বিতীয় অপশনে কিছু না লিখলেও চলে। পুরসভার এক কর্তা বলেন, অনেক ক্ষেত্রে মূল কোম্পানির নাম থেকে বোঝাই যায় না কোন ধরনের ব্যবসা। একটি মূল সংস্থার অধীনে রেস্তরাঁ, হাসপাতাল, সিনেমা হল, হোটেল, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর্স থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা চলে। এসব ক্ষেত্রে কত জঞ্জাল কর নেওয়া হবে, তা নির্দিষ্ট করা আছে। কিন্তু, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ‘ট্রেড ওয়ানে’র অপশনে নিজের মূল সংস্থার নাম লিখে দিচ্ছেন। বাকি জায়গা খালি রাখছেন। স্বাভাবিকভাবেই শুধুমাত্র সংস্থার নাম থেকে বোঝা সম্ভব নয়, সেখানে কী ধরনের ব্যবসা চলছে। ফলে, অনলাইনে ন্যূনতম জঞ্জাল কর দিয়েই লাইসেন্স রিনিউ করিয়ে নিতে পারছে অনেকে। অথচ, সংশ্লিষ্ট ঠিকানায় রেস্তরাঁ, হোটেল, স্টোর্স, সিনেমা হল, এমনকী হাসপাতালের মতো ব্যবসা চালালে জঞ্জাল কর বহুগুণ বেশি হয়। এক পুরকর্তা বলেন, ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস-এর আওতায় অনলাইন লাইসেন্স ব্যবস্থায় গোটাটাই কার্যত বিশ্বাসের উপর চলে। আবেদনকারী যে তথ্য আপলোড করবেন, তার উপর ভিত্তি করেই লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে। পরে কোনও গলদ নজরে এলে লাইসেন্স বাতিল হবে। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। ব্যবসার ধরন লেখা বাধ্যতামূলক না থাকার সুযোগ নিচ্ছে কেউ কেউ। জঞ্জাল কর বাবদ মোটা টাকা হাতছাড়া হচ্ছে পুরসভার।
  • Link to this news (বর্তমান)