• মুখোমুখি ঋদ্ধি-মীরা, ভাইরাল ভিডিওতে শোরগোল নেটদুনিয়ায়
    আজকাল | ১০ অক্টোবর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: রাজস্থানের বিখ্যাত রানথম্ভোর জাতীয় উদ্যানে পর্যটকেরা এক বিরল দৃশ্যের সাক্ষী থাকলেন। মা ও মেয়ের মধ্যে এক ভয়ঙ্কর সংঘর্ষ। এই সংঘর্ষে অংশ নেয় খ্যাতনামা বাঘিনী ঋদ্ধি এবং তার মেয়ে মীরা। জোন ৩–এর জঙ্গলে ঘটে যাওয়া এই ঘটনাটি পর্যটক ও বনকর্মীদের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।

    সাধারণত বাঘের জীবনযাপন বা তাদের মুখোমুখি সংঘর্ষ জঙ্গল সাফারিতে দেখা পাওয়া বিরল। কিন্তু মঙ্গলবার সকালে এমনই এক অসাধারণ মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দি হয়। সকালের সাফারিতে থাকা পর্যটকেরা প্রথমে দেখেন, মা বাঘিনী ঋদ্ধি এবং তার পূর্ণবয়স্ক মেয়ে মীরা কাছাকাছি অবস্থান করছে। কিছুক্ষণ পরেই মীরা নিজের এলাকার দাবি জানিয়ে মায়ের সামনে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়। মুহূর্তের মধ্যেই এই মুখোমুখি অবস্থান ভয়ঙ্কর লড়াইয়ে পরিণত হয়।

    দুজনেই একে অপরের দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে গর্জন শুরু করে, আর সেই বজ্রনিনাদী গর্জন প্রতিধ্বনিত হতে থাকে গোটা জঙ্গলে। কয়েক মিনিট স্থায়ী এই সংঘর্ষ ছিল সংক্ষিপ্ত হলেও ভয়ঙ্কর। শেষ পর্যন্ত অভিজ্ঞ ও শক্তিশালী মা ঋদ্ধি বিজয়ী হয়, আর মীরা পিছু হটে জঙ্গলের গভীরে পালিয়ে যায়।বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দুই বাঘিনীরই শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তবে এটি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক একটি ঘটনা, যা প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্যের অংশ। যখন শাবকেরা বড় হয় এবং নিজের এলাকা তৈরি করার চেষ্টা করে, তখন মা ও সন্তানের মধ্যে এমন সংঘর্ষ প্রায়ই ঘটে থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, “বাঘের সমাজে স্বাধীনতা মানে নিজের শিকারক্ষেত্রের দাবি। আর প্রথম চ্যালেঞ্জটাই সাধারণত মায়ের সঙ্গেই হয়।”

    ঋদ্ধির এই সংঘর্ষের পেছনে রয়েছে এক প্রজন্মের গল্প। রানথম্ভোরের বিখ্যাত বাঘিনী ‘মাছলি’-র পঞ্চম প্রজন্মের উত্তরাধিকারিণী হল ঋদ্ধি। সে বাঘিনী অ্যারোহেডের মেয়ে এবং তার প্রপিতামহী মাছলির মতোই বলিষ্ঠ ও সুন্দরী। বর্তমানে ঋদ্ধি নিজের এলাকা প্রতিষ্ঠা করেছে মায়ের প্রাক্তন অঞ্চলের মধ্যেই। পদ্ম লেক, রাজবাগ, মালিক লেক এবং মাণ্ডুব অঞ্চলে তাকে প্রায়ই দেখা যায়।

    এই অঞ্চলকেই বলা হয় রানথম্ভোরের ‘হৃদয়ভূমি’। এখান থেকেই একের পর এক প্রভাবশালী বাঘিনীর উত্তরাধিকার শুরু হয়। প্রথমে মাছলি, তার পর সুনদরী, কৃষ্ণা, অ্যারোহেড এবং এখন ঋদ্ধি। এই ধারাবাহিকতা প্রমাণ করে যে, রানথম্ভোর কেবল ভারতের বাঘ সংরক্ষণের কেন্দ্র নয়, বরং শক্তি, মাতৃত্ব ও উত্তরাধিকারের এক জীবন্ত ইতিহাস।

     এর আগে, রানথম্ভোরেই আরও এক বাঘের মৃত্যুর খবর সামনে আসে। প্রায় সাড়ে তিন বছর বয়সি পুরুষ বাঘ টি-২৩৯০ নিহত হয় আমা ঘাটি জঙ্গলে এক এলাকা দখলের লড়াইয়ে। প্রাথমিক রিপোর্টে বলা হয়, ছয় বছর ছয় মাস বয়সি বাঘ টি-১২০, যাকে ‘গণেশ’ নামে চেনে বনকর্মীরা, সেই সংঘর্ষে জিতে যায়। বন কর্মকর্তাদের মতে, এসব লড়াই ভয়ঙ্কর হলেও প্রকৃতির স্বাভাবিক চক্রেরই অংশ। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে প্রতিটি বাঘ ও বাঘিনী নিজেদের শাসনক্ষেত্র প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়েই এই রাজকীয় উত্তরাধিকারকে টিকিয়ে রাখে। 
  • Link to this news (আজকাল)