• ভারতে কমছে সূর্যালোকের সময়, অশনি ইঙ্গিত দিলেন গবেষকরা
    আজকাল | ১০ অক্টোবর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতে সূর্যালোকের সময় দ্রুত কমছে, এবং গত তিন দশকে এই প্রবণতা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ভারতীয় বিজ্ঞানীদের এক সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৮৮ সাল থেকে দেশে সূর্যের আলো পাওয়ার সময় ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। মূল কারণ হল মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়া এবং বাতাসে বাড়তে থাকা অ্যারোসল বা সূক্ষ্ম কণার পরিমাণ।

    এই গবেষণা যৌথভাবে পরিচালনা করেছে বারাণসী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়, পুনে-ভিত্তিক ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল মেটিওরোলজি এবং ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর । ১৯৮৮ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে সংগৃহীত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তারা দেশের ২০টি আবহাওয়া স্টেশন ও ৯টি অঞ্চলের মাসিক সানশাইন আওয়ারস বিশ্লেষণ করেছেন। ফলাফলে দেখা গেছে, তিন দশক ধরে ভারতে বার্ষিক সূর্যালোকের সময় ধারাবাহিকভাবে কমে আসছে।

    গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, “উত্তর-পূর্বাঞ্চল ব্যতীত ভারতীয় উপমহাদেশে সব সময়গত স্তরে সানশাইন আওয়ারে ধারাবাহিক হ্রাস লক্ষ্য করা গেছে।” উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সামান্য স্থিতিশীলতা দেখা গেলেও বাকি অঞ্চলগুলোয় উল্লেখযোগ্য পতন ঘটেছে। অক্টোবর থেকে মে মাস পর্যন্ত কিছু অঞ্চলে অল্প বৃদ্ধি দেখা গেলেও জুন–জুলাই মাসে সূর্যালোকের সময় নাটকীয়ভাবে কমে গেছে। হিমালয় ও উত্তরাঞ্চলের অভ্যন্তরীণ এলাকায় কিছুটা ভিন্ন প্রবণতা দেখা গেলেও দেশের অধিকাংশ অঞ্চলেই সূর্যালোকের ঘাটতি স্পষ্ট।

    এর আগেও একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, গত কয়েক দশকে ভারতের বিভিন্ন স্থানে সৌর বিকিরণ হ্রাস পাচ্ছে। অর্থাৎ দেশে সূর্যালোক ম্লান হয়ে যাওয়ার একটি ধারাবাহিক প্রবণতা গড়ে উঠেছে। বিজ্ঞানীরা এর মূল কারণ হিসেবে দায়ী করেছেন বাতাসে বেড়ে যাওয়া অ্যারোসলের পরিমাণকে, যা ১৯৯০-এর দশকের শুরুতে দ্রুত নগরায়ন, শিল্পায়ন ও যানবাহন বৃদ্ধির ফলে আকাশে ছড়িয়ে পড়ে।

    গবেষণায় বলা হয়েছে, “১৯৯০-এর দশকে ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নগরায়ন, ভূমি ব্যবহার পরিবর্তন ও শিল্পোন্নয়নের নতুন ঢেউ নিয়ে আসে। এতে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বেড়ে যায়, যানবাহনের ধোঁয়া ও জৈব পদার্থ পোড়ানোর ফলে বায়ুমণ্ডলে অ্যারোসল ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়।” এর ফলে সূর্যের বিকিরণ ক্রমে কমে যায় এবং সূর্যালোকের সময় সংকুচিত হতে থাকে।

    ভারতের পাশাপাশি চীন ও জাপানেও একই সময়ে এই পরিবর্তন দেখা গিয়েছিল। তবে পরবর্তী সময়ে এই দুই দেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে নীতিমালা গ্রহণ করে। বেইজিং চালু করে “ক্লিন এয়ার অ্যাকশন প্ল্যান”, আর জাপান সফলভাবে বাস্তবায়ন করে পরিচ্ছন্ন প্রযুক্তি ও নির্গমন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। ফলস্বরূপ, সেখানে অ্যারোসলের মাত্রা হ্রাস পেয়ে সূর্যালোক বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা যায়। 

    বিজ্ঞানীরা আরও ব্যাখ্যা করেছেন যে, আবহাওয়াগত পরিবর্তনও এই প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করছে। মেঘ সূর্যের আলোকে বাধা দিচ্ছে, ফলে সূর্যের বিকিরণ ও আলো পাওয়ার সময় কমছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, বাতাসে বাড়তি অ্যারোসলই মেঘের পরিমাণ বৃদ্ধি করছে।

    গরম মেঘ গঠনের ঘনীভবন তত্ত্ব অনুযায়ী, যখন বায়ুমণ্ডলে অ্যারোসল ও আর্দ্রতার মধ্যে প্রাকৃতিক ভারসাম্য থাকে, তখন বড় আকারের মেঘবিন্দু তৈরি হয় এবং তা থেকে সহজেই বৃষ্টিযোগ্য মেঘ তৈরি হয়। কিন্তু একই পরিমাণ আর্দ্রতায় যদি অ্যারোসলের ঘনত্ব বেড়ে যায়, তাহলে ছোট ছোট অসংখ্য মেঘবিন্দু তৈরি হয়, যা সহজে একীভূত না হয়ে দীর্ঘস্থায়ী মেঘে পরিণত হয়। ফলস্বরূপ, সূর্যের বিকিরণ পৃথিবীর পৃষ্ঠে পৌঁছানোর সময় আরও কমে যায়।

    এই ধারাবাহিক সূর্যালোক হ্রাস শুধু কৃষি ও শক্তি খাতে প্রভাব ফেলছে না, বরং জলবায়ু পরিবর্তনের গতিকেও জটিল করে তুলছে বলে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন।
  • Link to this news (আজকাল)