• কর্নাটকে 'পিরিয়ড লিভ' ঘিরে বিতর্ক, বাংলাতেও দরকার?
    আজ তক | ১০ অক্টোবর ২০২৫
  • স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। তা সত্ত্বেও মাসের 'ওই ক'টা দিন' যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়ে অধিকাংশ মহিলাকেই। কর্মক্ষেত্রে অস্বস্তির কথা ফুটে বলতে না পারায় কষ্ট সহ্য করেই মুখ বুঁজে কাজ করতে হয়। দীর্ঘদিনের দাবি, কর্মরতারা যেন পিরিয়ডের সময়ে অন্তত একদিন করে ছুটি পান অফিস থেকে। সেই দাবিতেই এবার সিলমোহর দিয়েছে কর্নাটক সরকার। মহিলাদের পিরিয়ডের যন্ত্রণা ও অস্বস্তি থেকে মুক্তি দিতেই যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এই রাজ্যে। ‘পিরিয়ড’ ট্যাবু কাটিয়ে মাসে একদিন করে মহিলাদের সবেতন ‘মেনস্ট্রুয়েশন লিভ’-এর প্রস্তাব অনুমোদন করেছে কর্নাটকের কংগ্রেস সরকার। এই খবর ঘোষণার পর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় জুড়ে প্রতিক্রিয়ার বন্যা। অনেকেই স্বাগত জানিয়েছেন এই সিদ্ধান্তকে। আবার কারও কারও মত ভিন্ন। তবে সব কিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবাপন্নদের আক্রমণ। রুচিহীন কটূক্তি এবং অশালীন মন্তব্যে ছয়লাপ নেটপাড়া। কেন এমন মনোভাব তরুণ প্রজন্মের? এই নিয়েই bangla.aajtak.in-এ নিজের মতামত দিলেন কলকাতার প্যাডম্যান। 

    উদ্যোগকে সাধুবাদ
    মেনস্ট্রুয়াল হাইজিন নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং পিরিয়ড ট্যাবু ভাঙার জন্য নিরন্তর কাজ করছেন শোভন মুখোপাধ্যায়। যিনি কলকাতার প্যাডম্যান নামে এখন সুপরিচিত। শোভনের কথায়, 'কর্নাটক সরকারের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। একজন মেয়ের পিরিয়ড হলে তাকে কী কী সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, তা একজন মেয়েই জানে। ৪-৫ দিনের পিরিয়ড সাইকেলের মধ্যে যদি একটা দিনও রিলিফ পায়, সেটা তার পক্ষে স্বস্তিজনক। কলকাতায় ২০১৮ সালে একটি কর্পোরেট সংস্থা ৩ দিনের পিরিয়ড লিভের কথা ঘোষণা করেছিল। রাজ্য জুড়ে এমন উদ্যোগ এই প্রথম এবং এটা সত্যিই অভাবনীয়।' 

    শোভন আরও বলেন, 'পিরিয়ড কথাটা অনেকেই উচ্চারণ না করে বলেন শরীর খারাপ হয়েছে। তাই অফিস যেতে পারছি না। এর মধ্যেই অনেক কিছু লুকিয়ে যায় মেয়েরা। তখনই প্রশ্ন ওঠে ওয়ার্ক ফোর্স নষ্ট হওয়ার, কিন্তু সেখানে পিরিয়ড লিভ চালু হলে ন্যয্য ছুটি মিলবে এবার থেকে। কোনও গোপনীয়তা বা ট্যাবু আর থাকবে না। সকলেই এবার বলতে পারবে, আমি মেনস্ট্রুয়াল লিভ নিচ্ছি।'

    সোশ্যাল মিডিয়ায় বিতর্ক
    'মাসে একদিন করে বেশি ছুটি পেয়েও কি পুরুষ সহকর্মীর সমান বেতন পাবেন এরা?' 'পুরুষ কর্মীরা ন্যয্য কারণে ছুটি চাইলে পায় না, আর মেয়েরা কেন পাবে?' 'কোনও না কোনও অজুহাতে ৩৬৫ দিনই ছুটি নিয়ে নিক না, ছেলেরাই সব কাজ করে দেবে।' 'মহিলা সহকর্মীদের কাজ এবার পুরুষদের ঘাড়েই চাপবে।' ইত্যাদি একাধিক কমেন্ট এবং রুচিহীন কুরুচিকর আক্রমণে ছেয়ে গিয়েছে ফেসবুক। অধিকাংশেরই মতে, মেয়েরা তো ছেলের মতো সমান অধিকার চায়, এর বেলা ফেমিনিস্টরা ছুটি বয়কট করবে না কেন? 

    প্যাডম্যান কী বলছেন? 
    শোভন মুখোপাধ্যায়ের কথায়, 'প্রথমত, ছেলেদের বেড়ে ওঠার সময়ে এটাই শেখানো হয়, পুরুষের সঙ্গে নারীর প্রেমের সম্পর্ক। কিন্তু নারীর কোনও শারীরিক সমস্যায় তাঁর পাশে থাকার বিষয়টি সেভাবে শেখানো হয় না। পিরিয়ড কী, তা বাড়ির ছেলেকে কখনওই বোঝানো হয় না। এর ফলেই পরবর্তীতে কর্মক্ষেত্রে সহকর্মী মহিলার প্রতি স্পর্শকাতর হতে পারেন না পুরুষ কর্মীরা। পিরিয়ডের ব্যথায় পাশে বসে থাকা মহিলা কর্মী যন্ত্রণায় কাতরালেও তা সেই পুরুষ সহকর্মীর পক্ষে বোঝা সম্ভব হবে না। অতএব এই কারণে মেয়েদের ছুটির অনুমতিও তাদের কাছে ঈর্ষার কারণ। সে ভাবছে সমবেতনে আমি যদি ২৪ দিন কাজে আসতে পারি তাহলে মহিলা সহকর্মী কেন ২৩ দিন অফিস আসবেন।' মহিলাদের পিরিয়ডের সময়ে মুড স্যুইংও অনেক ক্ষেত্রে পুরুষরা বুঝতে পারে না কারণ ছেলেবেলা থেকে পারিবারিক ভাবে এই সাইকোলজিগুলি তার গড়েই ওঠেনি, এতে সাংসারিক ঝামেলাও তৈরি হয়। মনে করছেন শোভন। 

    বাংলায় পিরিয়ড লিভ নিয়ে আর্জি
    শোভন মুখোপাধ্যায় বলেন, 'আমরা শীঘ্রই সরকারের কাছে আবেদন জানাব যাতে এই ধরনের পিরিয়ড লিভ আমাদের রাজ্যেও চালু হয়। সরকারি বা বেসরকারি অফিসে তো বটেই তবে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন অসংগঠিত ক্ষেত্রের মহিলাদের জন্য উদ্যোগ। যারা খেতে কিংবা ইটভাটার মতো জায়গায় দিন আনা দিন খাওয়া করেন, তাদের জন্য একদিন ঋতুস্রাবের কারণে কামাই করার অর্থ বিনা রোজগারে বসে থাকা। ফলে শত কষ্ট হলেও আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া সেই মহিলারা কাজ করতে পৌঁছে যান। তাঁদের মধ্যে সচেতনতাও শহুরে মহিলাদের তুলনায় কম। ফলে প্রশাসনের উচিত অসংগঠিত ক্ষেত্রের মহিলাদের জন্যও মেনস্ট্রুয়াল লিভ এবং হাইজিন নিয়ে কোনও উদ্যোগ নেওয়া যাতে মাসের ওই সময়টা তাদের কষ্ট থেকে রেহাই পেতে পারেন।'

     
  • Link to this news (আজ তক)