• ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ বিশ্বভারতী বর্তমানে পড়ুয়ার অভাবে উদ্বিগ্ন
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ১০ অক্টোবর ২০২৫
  • বিশ্বের গৌরবময় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম হল বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। সেই বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমানে আসন শূন্যতা নিয়ে উদ্বিগ্ন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাবধারার প্রতীক এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসত দেশ-বিদেশের পড়ুয়ারা। এখন সেই বিশ্বভারতীর ফাঁকা আসন নিয়ে চিন্তিত শিক্ষাবিদ থেকে শুরু করে প্রাক্তনীরা। চলতি শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ২০০ টি শূন্য আসন রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। হিন্দি, সংস্কৃত, ওড়িয়া, দর্শন বিভাগ সহ আরও কয়েকটি বিভাগে এখনও আসন ফাঁকা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তরফে, নতুন করে ভর্তির প্রক্রিয়ার উপর জোর দিতে বলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ও বিভাগীয় প্রধানদের পড়ুয়া ভর্তি বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

    বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে চলতি শিক্ষাবর্ষে স্নাতক স্তরে প্রায় ১ হাজার ৭৪০টি এবং স্নাতকোত্তর স্তরে প্রায় ৬০০টি আসন নির্ধারিত ছিল। এর মধ্যে হিন্দি ভবনে ২০টি, সংস্কৃত বিভাগে ২৮টি, ওড়িয়া বিভাগে ১৫টি, অর্থনীতি বিভাগে ১৫টি, তুলনামূলক ধর্ম বিভাগে ৪৫টি, দর্শন বিভাগে ৩১টি আসন ফাঁকা পড়ে রয়েছে। স্নাতকোত্তর স্তরে ৫ বছরের সমন্বিত বিজ্ঞান বিভাগে ১২টি, যোগ বিভাগে ২৫টি এবং এম.এড কোর্সে ২৭টি আসন এখনও শূন্য রয়েছে। সঙ্গীত ভবন, এমনকি চিনা ও জাপানি ভাষা-সহ উচ্চশিক্ষা বিভাগেও আসন পড়ুয়ার অভাবে খালি রয়েছে। এই ফাঁকা আসন প্রসঙ্গে বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক অতিগ ঘোষ বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে আসন শূন্য রয়েছে। তবে নতুন করে ভর্তি প্রক্রিয়া জোরদার করা হচ্ছে। অধ্যক্ষ ও বিভাগীয় প্রধানদের পড়ুয়া ভর্তি বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। অনেকেই এখন মূলধারার পাঠক্রমের বাইরে বিকল্প শিক্ষার দিকে ঝুঁকছেন। এটাও একটি কারণ। শুধু বিশ্বভারতী নয়, গোটা দেশেই এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।’

    আবার অনেক শিক্ষাবিদ ও প্রাক্তনীদের মতে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউশনাল র‍্যাঙ্কিং ফ্রেমওয়ার্ক-এ বিশ্বভারতীর স্থান নিম্নমুখী হওয়ায় শিক্ষার্থীরা এই বিশ্ববিদ্যালয়মুখী হচ্ছে না। প্রবীণ আশ্রমিক অপর্ণা দাস মহাপাত্র বলেন, ‘বিশ্বভারতী শুধু একটি বিশ্ববিদ্যালয় নয়, এটি রবীন্দ্রনাথের ভাবধারার প্রতীক। সেই প্রতিষ্ঠানে আগ্রহ কমে যাওয়া গোটা দেশের সাংস্কৃতিক পরিসরে এক বড় আক্ষেপের সংকেত।’

    ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তকমা পাওয়া বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন শূন্য অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক বিষয়। একসময়ে এখানে শিক্ষক ও পড়ুয়া হিসেবে ছিলেন অস্কারজয়ী সত্যজিৎ রায়, নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেন, সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, মহাশ্বেতা দেবী, কবি নবনীতা দেবসেন, শিল্পী নন্দলাল বসু, রামকিঙ্কর বেইজ, বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু ও প্রশান্ত চন্দ্র মহালনবিশের মতো বিখ্যাত ব্যক্তিরা। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক বিভাগে বর্তমানে ফাঁকা আসন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, অধ্যক্ষ ও প্রাক্তনীদের তরফে দ্রুত এই অচলাবস্থা কাটিয়ে উঠে ফাঁকা আসন পূরণ করে আগের মহিমায় ফিরিয়ে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হচ্ছে।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)