• ভোটের ইস্যু অনুপ্রবেশ
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ১০ অক্টোবর ২০২৫
  • এ বছরই হয়ে যাবে বিহারের নির্বাচন। বছর ঘুরলেই পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম সহ পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। দক্ষিণ ভারতে কেরলা, তামিলনাড়ু ও পুদুচেরির নির্বাচনে জয়ের ক্ষীণতম সম্ভাবনাও নেই মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি বা এনডিএ জোটের। বিহারে ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধনের নামে পাইকারি, হারে লক্ষ লক্ষ মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে ক্ষমতা পুনর্দখলের যে ছক কষা হয়েছে নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করে তাতে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা দানা বাঁধছে বিজেপি নেতাদের মনে। ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে ভোট চুরির মধ্যমে ক্ষমতা দখলের জন্য বিজেপি-র পরিকল্পনাকে সামনে বিরোধীরা যেভাবে মোদী-শাহদের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছে তাতে বিহারে শাসক জোট অনেকটাই ব্যাকফুটে।

    বিরোধীদের প্রচার ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে বিহারবাসীর মনে। এই অবস্থায় উন্নয়নের ঢাক পিটিয়ে বিশেষ কিছু লাভ হবে বলে ভরসা করতে পারছে না শাসক দল বিজেপি। ভোটের আগে তাই বারবার সেরাজ্যে গিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের চিরাচরিত ঢক্কা নিনাদ এখন আর কাজে দিচ্ছে না। এখন আবার ছট পুজোকে বিশ্ব হেরিটেজ তালিকায় ঢোকানোর প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন মোদী। ফাঁকিবাজি আর বোকা বানানোর কৌশল মানুষ ধরে ফেলেছে। বিহারেই যদি সব কৌশল মাঠে মারা যায়, তবে পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম নিয়েও উদ্বেগ বাড়বে মোদীর।

    আসামে যেভাবেই হোক ক্ষমতা ধরে রাখতে চায় মোদী সরকার। আর পশ্চিমবঙ্গে তাদের আশা সরকার গড়তে না পারলেও অন্তত আগের আসনসংখ্যা ধরে রাখা কিন্তু উন্নয়নের হাজার ফিরিস্তি দিয়েও যখন টের পাওয়া যাচ্ছে কাজের কাজ কিছুই হবে না, তখন সেই হিন্দু মেরুকরণই শেষ ভরসা। তাই অনুপ্রবেশ ইস্যুই এবার মোদীবাহিনীর প্রধান হাতিয়ার হতে চলেছে। পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারে গিয়ে সম্প্রতি কয়েকটি জনসভায় ভাষণ দিয়ে মোদী তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন।

    পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারের লাগোয়া বাংলাদেশ সীমান্ত। তাই অনুপ্রবেশ ইস্যুকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে অতিকায় সমস্যা হিসেবে দেখিয়ে ভোটারদের মন পেতে মুখর হয়ে উঠেছেন বিজেপি নেতারা। প্রধানমন্ত্রী মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ থেকে শুরু করে ছোট-বড় কেন্দ্রীয় নেতা-মন্ত্রীরা, আসামের মুখ্যমন্ত্রী এবং পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতারা অনর্গল বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের আতঙ্ক ছড়িয়ে যাচ্ছেন। কিছুদিন আগে আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত ও অনুপ্রবেশ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিজেপি নেতারা বোঝাতে চাইছেন যে, সীমান্ত পেরিয়ে দলে দলে বাংলাদেশি মুসলিমরা ভারতে ঢুকে সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে জনবিন্যাস বদলে দিচ্ছে। অর্থাৎ মুসলিমরা সংখ্যায় বেড়ে যাচ্ছে। তারা হিন্দুদের কাজ কেড়ে নিচ্ছে, জমি সম্পদ দখল করছে, হিন্দু মেয়েদের বিয়ে পর্যন্ত করছে। আরএসএস-এর দাবি, এতে নাকি ভারতের নিয়ন্ত্রণ মুসলিমদের হাতে চলে যাবে। কোণঠাসা হয়ে যাবে হিন্দুরা।

    এবারে স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লা থেকে ভাষণ দিতে নিয়ে এই অনুপ্রবেশ আতঙ্কের কথা শুনিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। ঘোষণা করেছেন ডেমোগ্রাফি মিশনের কথা। এই জনবিন্যাস পরিবর্তন সরকার খতিয়ে দেখবে বলে জানিয়েছিলেন। ঘোষণা করেন, একজন বাংলাদেশিকেও এদেশে থাকতে দেওয়া হবে না। তাঁদের বের করে দেওয়া হবে। ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধনও করা হচ্ছে এই অনুপ্রবেশকারী চিহ্নিত করার লক্ষ্যে। কিন্তু সন্দেহজনক বিষয় হলো অনুপ্রবেশ নিয়ে এত চিৎকার হলেও দেশে কত অনুপ্রবেশকারী আএছ, তাদের কতজনকে চিহ্নিত করা গিয়েছে এবং কতজনকে ফেরত পাঠানো হয়েছে তার কোনও তথ্য বারবার বলা সত্বেও সরকার দিতে পারেনি।

    লক্ষ্যণীয়, ১১ বছর ধরে ক্ষমতায় আছেন মোদী-শাহেরা। অথচ আগে কখনও অনুপ্রবেশ প্রশ্নটি মাথাচাড়া দিয়েছে। এটা বলা হচ্ছে না, সীমান্ত পেরিয়ে এত বাংলাদেশি ভারতে ঢুকছে কী করে? বিএসএফ তো রয়েছে সীমান্তে। আর সেই সীমান্ত রক্ষার দায়িত্ব তো অমিত শাহ-র।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)