• ভারতীয় সেনার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী খাবার মেনুতে 'পাকিস্তান'! পাক সেনাপ্রধানের 'মুছে দেওয়ার' হুংকারের পরেই পাকিস্তানকে 'চিবিয়ে খেয়ে ফেলার' হুঁশিয়ারি ভারতের
    আজকাল | ১১ অক্টোবর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক:  ভারতীয় বায়ুসেনার ৯৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্‌যাপন ঘিরে এ বছর এক অনন্য রসিকতা ও সূক্ষ্ম রাজনৈতিক ব্যঙ্গের ঝলক দেখা গেল। অনুষ্ঠান উপলক্ষে আয়োজিত এক বিশেষ নৈশভোজের মেনু সামাজিক মাধ্যমে এখন ভাইরাল হয়ে উঠেছে। কারণ, ওই মেনুতে পরিবেশিত খাবারের নাম রাখা হয়েছিল পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরের নামে—যে শহরগুলো অতীতে ভারতীয় বায়ুসেনার আঘাতের লক্ষ্যবস্তু হয়েছিল।

    আডামপুর ঘাঁটিতে আয়োজিত এই ভোজে প্রধান খাবারের তালিকায় ছিল ‘রাওয়ালপিন্ডি চিকেন টিক্কা মাসালা’, ‘রাফিকি রাড়া মাটন’, ‘ভোলারি পনির মেথি মালাই’, ‘সুক্কুর শাম সাভেরা কোফতা’, ‘সরগোধা ডাল মাখানি’, ‘জ্যাকবাবাদ মেওয়া পোলাও’ ও ‘বাহাওয়ালপুর নান’। শুধু প্রধান পদ নয়, মিষ্টান্নেও ছিল ব্যঙ্গাত্মক ছোঁয়া—অতিথিদের পরিবেশন করা হয় ‘বালাকোট টিরামিসু’, ‘মুজাফ্‌ফরাবাদ কুলফি ফলুদা’ ও ‘মুরিদকে মিঠা পান’।

    পাকিস্তানের এই শহরগুলোর প্রত্যেকটির সঙ্গে ভারতের বায়ুসেনার অতীত অভিযানের ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। ২০১৯ সালের ‘অপারেশন বন্দর’-এর সময় বালাকোটে ভারতের বিমান হামলা হয়েছিল, যেখানে সন্ত্রাসবাদী প্রশিক্ষণ শিবির ধ্বংস করা হয়। এ ছাড়া চলতি বছর অনুষ্ঠিত ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সময় পাকিস্তানের বিভিন্ন বিমানঘাঁটি, যেমন ভোলারি ও রাফিকি, ভারতের নিশানায় আসে। এই কারণেই অনেকেই মনে করছেন, মেনু তৈরিতে হাস্যরসের পাশাপাশি ছিল দেশপ্রেমিক গর্ব ও প্রতিপক্ষকে সূক্ষ্মভাবে খোঁচা দেওয়ার উদ্দেশ্য।

    জানা গেছে, এই অভিনব মেনুটি মূলত আডামপুর ঘাঁটির স্থানীয় রান্নাঘরের কর্মীদের উদ্যোগে তৈরি হয়। তারা খাবারের নামের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানকে রসাত্মকভাবে ব্যঙ্গ করতে চেয়েছিলেন। বলা হচ্ছে, এই নামগুলো পাকিস্তানের সেসব জায়গাকে স্মরণ করিয়ে দেয় যেখানে ভারতীয় বিমান বাহিনী সফলভাবে সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে আঘাত হেনেছিল—ভোলারি বিমানঘাঁটি থেকে শুরু করে মুরিদকের লস্কর-ই-তোইবা ক্যাম্প পর্যন্ত।

    উল্লেখযোগ্যভাবে, অপারেশন সিঁদুরের  সাফল্যের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি  প্রথম যে সামরিক ঘাঁটিটি পরিদর্শন করেছিলেন, সেটিও ছিল আদামপুর। সেখানেই তোলা হয়েছিল তাঁর সেই বিখ্যাত ছবি, যেখানে তিনি এস-৪০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের পটভূমিতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। চার দিনব্যাপী ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষে এই সিস্টেমটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

    নেটিজেনদের মধ্যে এই মেনু নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। কেউ এটিকে “দেশপ্রেমের রসনাতৃপ্ত প্রকাশ” বলে প্রশংসা করছেন, আবার কেউ মজা করে বলছেন, “বালাকোট টিরামিসু খেয়েও পাকিস্তান নিশ্চয়ই গিলে নিতে পারবে না।”

    আরও একবার আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে বায়ুসেনার বুদ্ধিদীপ্ত রসবোধ, যখন সম্প্রতি আগ্রার আকাশে দুটি বায়ুসেনার বিমান—লকহিড মার্টিন সি-১৩০জে ও আন্টোনভ এএন-৩২—দেখা গিয়েছিল যথাক্রমে ‘রাফিকি’ ও ‘শেহবাজ’ কল সাইন নিয়ে। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এগুলিও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এবং রাফিকি বিমানঘাঁটির প্রতি ব্যঙ্গাত্মক ইঙ্গিত।

    রাফিকি বিমানঘাঁটি পাকিস্তানের মধ্য পাঞ্জাবে অবস্থিত এবং এটি দেশটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটি। এখানে অবস্থান করছে জেএফ-১৭ ও মিরাজ যুদ্ধবিমান স্কোয়াড্রন, পাশাপাশি হেলিকপ্টার ইউনিটও। এই বিমানঘাঁটির ভৌগোলিক অবস্থান পাকিস্তানের পূর্ব ও পশ্চিম দুই সীমান্তেই দ্রুত প্রতিক্রিয়ার সুযোগ দেয়, ফলে এটি তাদের প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের মূল স্তম্ভ।

    তবে আডামপুরের নৈশভোজে পরিবেশিত এই ‘কূটনৈতিক মেনু’ এখন শুধুমাত্র সামরিক পরিসরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই—এটি সামাজিক মাধ্যমে দেশজুড়ে দেশপ্রেম ও রসিকতার এক মিশ্র প্রতীক হয়ে উঠেছে।
  • Link to this news (আজকাল)