মায়ের মৃতদেহ ফেরাই হয়ে উঠল পুত্রের মরণযাত্রা! মর্মান্তিক দুর্ঘনায় মৃত্যু একই পরিবারের তিন জনের...
আজকাল | ১১ অক্টোবর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: নিয়তির পরিহাস বোধহয় একেই বলে। যাঁর শেষকৃত্যের জন্য সবাই মিলে বাড়ি ফিরছিলেন, পথেই তাঁর শববাহী গাড়ির পিছনে থাকা গাড়িতে ঘটল মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। মায়ের নিথর দেহ নিয়ে জয়পুর থেকে হরিয়ানার পথে রওনা দিয়েছিলেন ছেলে এবং অন্য আত্মীয়েরা। কিন্তু বাড়ি ফেরা হল না তাঁদের। রোহতকের কাছে এক ভয়াবহ পথ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন ছেলে-সহ পরিবারের তিন সদস্য। আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি আরও এক জন। শুক্রবার ভোরে এই ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে গোটা এলাকায়।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত এএসআই যোগিন্দর কৌর কয়েক বছর আগে কিডনি প্রতিস্থাপন করিয়েছিলেন। সম্প্রতি শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় জয়পুরের একটি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে হরিয়ানা থেকে পরিবারের সদস্যরা জয়পুরে ছুটে যান। শুক্রবার ভোরে একটি অ্যাম্বুল্যান্সে যোগিন্দরের দেহ নিয়ে রোহতকের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন তাঁরা। অ্যাম্বুল্যান্সের পিছনেই একটি গাড়িতে ছিলেন যোগিন্দরের ছেলে কিরাত (২৪), বোন কৃষ্ণা (৬১), সোনিপতের এক আত্মীয় সচিন এবং আরও এক আত্মীয়া।
ভয়াবহ দুর্ঘটনাটি ঘটে ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ, রোহতকের ১৫২ডি ফ্লাইওভারের উপর। পুলিশ জানিয়েছে, ফ্লাইওভারে আগে থেকেই একটি ট্রাক দাঁড়িয়েছিল। সম্ভবত রাতের অন্ধকারে চালক ট্রাকটি খেয়াল করতে পারেননি। তীব্র গতিতে এসে গাড়িটি সজোরে ট্রাকের পিছনে ধাক্কা মারে। সংঘর্ষ এতটাই জোরালো ছিল যে গাড়িটির সামনের অংশ সম্পূর্ণ দুমড়ে-মুচড়ে যায়। বিকট শব্দ শুনে আশেপাশের লোকজন ছুটে আসেন এবং মেহম থানার পুলিশে খবর দেন।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকাজ শুরু করে। গাড়ির দরজা এবং জানালা কেটে ভিতর থেকে চার জনকে উদ্ধার করা হয়। রক্তাক্ত অবস্থায় সকলকেই স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। হাসপাতালের চিকিৎসকেরা কিরাত, কৃষ্ণা এবং সচিনকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। গাড়িতে থাকা চতুর্থ যাত্রী, জয়পুর অ্যান্টি-কোরাপশন ব্যুরো-র কনস্টেবল দলবীরের স্ত্রীকে গুরুতর আহত অবস্থায় রোহতকের পিজিআই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁর অবস্থা অত্যন্ত সঙ্কটজনক।
এই ঘটনায় শোকস্তব্ধ গোটা পরিবার। যে মা-কে শেষ বিদায় জানাতে বাড়ি নিয়ে আসা হচ্ছিল, তাঁর সঙ্গেই চিরবিদায় নিলেন ছেলেও। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত সচিন সম্প্রতি পালি-তে পশু চিকিৎসক হিসেবে কাজে যোগ দিয়েছিলেন। একমাত্র আহত মহিলা সম্পর্কে সচিনের মা। অর্থাৎ, এই দুর্ঘটনায় তিনিও নিজের একমাত্র সন্তানকে হারিয়েছেন।
পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, চালকের চোখ লেগে যাওয়ার কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, "পরিবারটি সারারাত ধরে জয়পুর থেকে ফিরছিল। দীর্ঘ যাত্রার ক্লান্তিতে চালক হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। সে কারণেই সম্ভবত দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকটি তাঁর নজরে আসেনি।" পুলিশ দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়ি এবং ট্রাকটিকে আটক করেছে। তিনটি দেহই ময়নাতদন্তের জন্য সিভিল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। একটি শোকের আবহের মধ্যে আরও একটি দুর্ঘটনার সংযোজন যেন গোটা ঘটনাকে আরও মর্মান্তিক করে তুলেছে।