• হাতির দল দিয়ে ঘেরাও করেই কাবু 'গুন্ডা' গন্ডার, ঘুমপাড়ানি গুলি চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলেন বনকর্মীরা...
    আজকাল | ১১ অক্টোবর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: কোচবিহারের পুন্ডিবাড়ি এলাকায় এক গন্ডারের আকস্মিক 'অনুপ্রবেশ'-এ আতঙ্কিত এলাকাবাসী। বন ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে এসে মারমুখী হয়ে ওঠা এই গন্ডারের আক্রমণে আহত দুই স্থানীয় বাসিন্দা। শুক্রবার ভোরে ঘটে যাওয়া এই ঘটনায় গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন বিভা কর এবং দিলীপ দাস। দু'জনেই প্রবীণ। বর্তমানে তাঁরা কোচবিহারের পৃথক দুটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এঁদের মধ্যে বিভা করের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

    স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পুন্ডিবাড়ির সংলগ্ন জঙ্গল বা সংরক্ষিত এলাকার দিক থেকে দিক ভুল করে গন্ডারটি জনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে ঢুকে পড়ে। ঠিক কী কারণে বিভা কর সেই সময় ওই জায়গায় উপস্থিত ছিলেন, তা নিয়ে তাঁর পরিবার নিশ্চিত করে কিছু জানাতে পারেনি। হঠাৎ গন্ডারের আক্রমণে তিনি মাটিতে পড়ে গিয়ে গুরুতর জখম হন।

    একই সময়ে আশপাশে উপস্থিত দিলীপ দাসও ওই গন্ডারটির হামলার শিকার হন। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, তিনি পরিস্থিতি বুঝে সরে যাওয়ার আগেই ক্ষিপ্রগতিতে ধেয়ে আসা গন্ডার তাঁকে সজোরে ধাক্কা দেয়। ধাক্কার অভিঘাতে তিনি কিছুটা শূন্যে উঠে মাটিতে পড়ে যান। স্থানীয়দের চিৎকার চেঁচামেচিতে আশেপাশের মানুষ ছুটে এলে গন্ডারটি পিছিয়ে যায়। আহত দুজনকে উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন স্থানীয়রা।

    ঘটনার পর থেকে সমগ্র পুন্ডিবাড়ি এলাকায় ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সকাল থেকেই অধিকাংশ মানুষ ঘরের বাইরে বেরোতে সাহস করেননি। বনদপ্তরের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে গন্ডারটিকে ঘুমপাড়ানি গুলি করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন এবং তাকে উদ্ধার করে নিরাপদে নিয়ে যান। বনকর্মীদের অনুমান,নদীপথ বা ধানক্ষেত পেরিয়ে প্রাণীটি দিকভ্রান্ত হয়ে বসতিতে প্রবেশ করেছে।

    জানা যায়, বেশ কয়েক দিন ধরেই গন্ডারটি ওই এলাকায় ঘোরাফেরা করছিল। সেটিকে প্রহরায় রাখতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কুঙ্কি হাতির দল। এদিন প্রাণীটিকে কাবু করতে জলদাপাড়ার জঙ্গলে যত কুঙ্কি হাতি আছে সেগুলিকে নিয়ে যাওয়া হয় গন্ডারটিকে পাহারা দেওয়ার জন্য।

    এদিন হাতির দল দিয়ে ঘেরাও করে গণ্ডারটিকে কাবু করা হয়। সে কারণে জলদাপাড়া অভযারণ্যে শুক্রবার কোনও হাতি সাফারি হয়নি বলেই জানা গিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সম্প্রতি বন্যপ্রাণীর অনুপ্রবেশ বাড়লেও বনদপ্তরের তরফে পর্যাপ্ত সতর্কতার ব্যবস্থা নেই। তাঁদের দাবি, ভবিষ্যতে গ্রামবাসীদের সতর্ক করতে সাইরেন বা আগাম সতর্কবার্তা ব্যবস্থার প্রয়োজন। 

    এই ঘটনা আবারও সামনে নিয়ে এল সীমান্তবর্তী গ্রামীণ অঞ্চলে বনের কাছাকাছি থাকা মানুষ ও বন্যপ্রাণীর সংঘাতের কঠিন বাস্তবতা। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছেন এলাকার সকলেই। অন্যদিকে বনদপ্তর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে গন্ডারটিকে তার আবাসস্থলে ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে।

    উল্লেখ্য, বনদপ্তরের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক এই বন্যায় বন্যপ্রাণীদের মধ্যেও এসেছে স্বভাবের পরিবর্তন। রাজ্য বনদপ্তরের প্রধান সচিব এবং বনবল শীর্ষ (হেড অফ ফরেস্ট ফোর্স) দেবল রায় বলেন, 'এই বন্যায় অন্যতম যে বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে সেটা হল গন্ডারের স্বভাবে পরিবর্তন। দেখা যাচ্ছে গন্ডার জলের কাছে যেতে ভয় পাচ্ছে।' একদিকে যেমন গন্ডারের মধ্যে এই পরিবর্তন এসেছে তেমনি জলে ভেসে জঙ্গলে এসেছে প্রচুর পলিমাটি।

    যা জঙ্গলের উপকার করবে বলেই জানিয়েছেন বনদপ্তরের প্রধান সচিব। তাঁর কথায়, এর ফলে জঙ্গলে ঘাস বা অন্যান্য উদ্ভিদের বৃদ্ধির পক্ষে সহায়ক হবে।তবে আরেকটি যে বিষয় নিয়ে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সেটা হল ভুটান থেকে নদীতে ভেসে আসা কাঠের বড় বড় অংশ নিয়ে। নদীতে ভেসে যাওয়ার সময় এই কাঠের ধাক্কায় বেশ কিছু বন্যপ্রাণীর আঘাত লেগেছে বলেই তিনি মনে করছেন।
  • Link to this news (আজকাল)