তালিবানি নারী বিদ্বেষ দিল্লিতেও! মুত্তাকির সাংবাদিক বৈঠকে মহিলা সাংবাদিক প্রবেশে বাধা
প্রতিদিন | ১১ অক্টোবর ২০২৫
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: তালিবানকে সন্তুষ্ট করতে ‘নারী বিদ্বেষ’ খোদ দিল্লির মাটিতে! দিল্লিতে আফগানিস্তানের বিদেশমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির সাংবাদিক বৈঠকে ঢুকতে দেওয়া হল না কোনও মহিলা সাংবাদিককে। এই ঘটনা সামনে আসতেই বিতর্ক চরম আকার নিয়েছে। তালিবানের কট্টরপন্থাকে প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন একাধিক মহিলা সাংবাদিক।
২০২১ সালে আফগানিস্তানে তালিবান ক্ষমতায় আসার পর মহিলাদের সমস্ত অধিকার কেড়ে নিয়েছে কট্টর মৌলবাদী সরকার। সেখানকার মহিলারা একা রাস্তায় বেরোতে পারেন না। মেয়েদের স্কুল কিংবা উচ্চশিক্ষায় দাঁড়ি টানা হয়েছে। বাইরে কাজ করার অধিকার কেড়ে নিয়ে মহিলাদের গৃহবন্দি করা হয়েছে। নিয়ম অমান্য করলে রয়েছে ভয়াবহ শাস্তি। এহেন কট্টর মৌলবাদের দেশের প্রতিনিধিকে প্রসন্ন করতে দিল্লিতে মুত্তাকির সাংবাদিক বৈঠকে মহিলাদের প্রবেশ করতে না দেওয়া শুধু তালিবানের নারী বিদ্বেষকে সমর্থন যোগানো নয়, খোদ কেন্দ্রের তরফে ভারতীর মহিলাদের ‘অপমান’ বলে অভিযোগ উঠছে। যেখানে উপস্থিত ছিলেন খোদ বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর।
এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করার পাশাপাশি মোদি সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে বরিষ্ঠ সাংবাদিক নয়নিমা বসু এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, ‘ভারত সরকারের নাকের ডগায়, রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে আফগান বিদেশমন্ত্রী মুত্তাকি সাংবাদিক বৈঠক করলেন। সেখানে মহিলা সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে দেওয়া হল না। এটা কীভাবে সম্ভব? মহিলা সাংবাদিকদের প্রতি এই জঘন্য আচরণের সিদ্ধান্ত কে অনুমোদন করেছে?’ ‘দ্য হিন্দু’র সাংবাদিক সুহাসিনী হায়দার লিখেছেন, ‘এই ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়। তালিবান তাদের দেশে মহিলাদের প্রতি ঘৃণ্য আচরণ করে, লিঙ্গ বৈষম্যকে মান্যতা দেয়। তাঁদের সেই চিন্তাধারাকে সরকার প্রটোকলের মাধ্যমে ভারতে জায়গা দিল। এই ঘটনাকে কোনও মেনে নেওয়া যায় না।’ আলিশান জাফরি নামে আর এক সাংবাদিক কটাক্ষ করে লিখেছেন, ‘ভারতের মহিলা সাংবাদিকরা ভারতের মাটিতেই সাংবাদিক বৈঠকে যোগ দিতে পারছেন না, কারণ তালিবান এটা পছন্দ করছে না।’ তবে এই ঘটনার পর এখনও পর্যন্ত বিদেশমন্ত্রকের তরফে এই বিষয়ে কোনও বিবৃতি দেওয়া হয়নি।
উল্লেখ্য, ৬ দিনের সফরে ভারতে এসেছেন তালিবান বিদেশমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি। শুক্রবার দিল্লিতে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকরের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। এরপর সাংবাদিক বৈঠকে দুই দেশ একে অপরের সঙ্গে সহযোগিতার বার্তা দেয়। জয়শংকর জানান, “খুব দ্রুত কাবুলে দূতাবাস চালু করবে ভারত। এছাড়াও আফগানিস্তানের স্বাস্থ্যখাতে নতুন ৬টি প্রকল্প শুরু করা হবে ভারতের তরফে ‘বন্ধুত্বে’র নিদর্শন হিসাবে। দেওয়া হবে ২০টি অ্যাম্বুল্যান্স, এমআরআই ও সিটি স্ক্যান মেশিন। এছাড়াও ক্যানসারের ওষুধ দেওয়া হবে আফগানিস্তানকে।” অন্যদিকে মুত্তাকি বলেন, ”উন্নয়নমূলক প্রকল্প ও আফগানিস্তানে নিজেদের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করার ভারতের সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই।” সেই সঙ্গেই নিরাপত্তা বিষয়েও মুখ খোলেন তিনি। বলেন, ”নিরাপত্তা সহযোগিতা নিয়ে আমাদের মধ্যে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আমরা আফগানিস্তানের ভূখণ্ডকে কোনও দেশের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে দেব না। উভয়পক্ষই এই বিষয়ে যোগাযোগ রাখবে।”