হড়পা বানে উত্তরে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৪! লোকালয়ে বন্য পশুদের হানায় বাড়ছে আতঙ্ক
প্রতিদিন | ১১ অক্টোবর ২০২৫
বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: নাগরাকাটার বামনডাঙা থেকে উদ্ধার হল বন্যার জলে ভেসে যাওয়া আরও একটি দেহ। শুক্রবার গাঠিয়া নদী থেকে এক মহিলার মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এদিনের ঘটনা নিয়ে নাগরাকাটায় হড়পা বানে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১০। দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার জেলায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৪। মৃতের সংখ্যা কি আরও বাড়তে পারে? সেই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় ধ্বংসের ছবি সুস্পষ্ট। তবে এই মুহূর্তে অনেকটাই শান্ত তিস্তা, তোর্সা, জলঢাকা নদী।
এদিকে হড়পা বানের ‘ট্রমা’ না-কাটতে বানভাসিদের ঘুম কেড়েছে বসতি হারানো বন্যপ্রাণীরা। কোথাও ক্ষুধার্ত হাতির দল দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। আবার কোথাও ঘাপটি মেরেছে বুনো শুয়োর, গন্ডার, বাইসন। তারাও আতঙ্কে লোকালয়ে হানা দিচ্ছে। জখম হচ্ছেন বানভাসি বিপন্ন মানুষ। শুক্রবার কোচবিহারে গন্ডারের হামলায় দু’জন জখম হয়েছেন। অন্যদিকে বন্য শূকরকে পাকড়াও করে জঙ্গলে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছেন বনকর্মীরা। বিপন্ন গরুমারায় আরও বন্যপ্রাণীর দেহ উদ্ধার হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে বীরপাড়ার এশিয়ান হাইওয়েতে দেখা গিয়েছে হাতির দল।
এদিকে জোরকদমে ত্রাণ ও পুনর্বাসনের কাজ শুরু হলেও বানভাসিদের বিপাকে ফেলেছে জলবাহিত রোগ এবং জ্বর। পরিস্থিতি মোকাবিলায় একদিকে যেমন স্বাস্থ্য দপ্তরের চিকিৎসকরা ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। অন্যদিকে চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠন এলাকায় পৌঁছে পরিষেবা প্রদানের কাজ শুরু করেছে। শুক্রবার জেলা শিক্ষা দপ্তরের তরফে ছাত্রছাত্রীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বইখাতা, কলম। বালাসন নদী বালি-পলিতে দেহ আটকে আছে কিনা খতিয়ে দেখতে এদিন সকাল থেকে তল্লাশি অভিযানে নামে এনডিআরএফ দল।
বানভাসি এলাকা ক্রমশ স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে শুরু করলেও মিরিকের বিস্তীর্ণ এলাকা এখনও শুধু যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন নয়। রীতিমতো খন্ডহরে পরিণত হয়ে আছে। ধস সরিয়ে গৃহস্থালির সামগ্রী উদ্ধারের কাজ চলছে। জসবীর গাঁও, রংভাং টুকরে-সহ বিভিন্ন গ্রামে যাতায়াতের পথ বলতে এখন কিছু নেই। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খাদের পর খাদ পার হয়ে সরকারি কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবীরা সেখানে পৌছচ্ছেন। শুক্রবার কলকাতা থেকে দার্জিলিং পাহাড়ের দুধিয়া, মিরিকে পৌঁছেছে মেডিকেল সার্ভিস সেন্টারের একটি দল। সমতলেও চলছে বিধ্বস্ত সড়ক ও তিস্তা-জলঢাকা নদী বাধ মেরামতের কাজ। পে লোডার নামিয়ে বালাসন নদীর গতিপথ ঘোরানোর কাজ শুরু হয়েছে।
এদিন আঠারোখাই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রমোদনগর এবং রাধারঞ্জন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ত্রাণ শিবিরে ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে মুখ্যমন্ত্রীর পাঠানো ত্রাণসামগ্রী তুলে দেন শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব। অন্যদিকে বিভিন্ন গ্রামে ঢুকে পড়া বন্যপ্রাণীদের জঙ্গলে ফেরাতে কালঘাম ছুটছে বনকর্মীদের। কোচবিহারের লোকালয় থেকে বুনো শুয়োর এবং গন্ডার খুঁজে বের করতে কুনকি হাতি নামানো হয়েছে। এরই মধ্যে শুক্রবার সকালে গন্ডারের হামলায় দু’জন জখম হয়েছে। কোচবিহারের পর এবার বন্য শূকরের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে জলঢাকার জলে প্লাবিত ময়নাগুড়ির আমগুড়ি, রামশাই এলাকায়। ইতিমধ্যে জখম হয়েছেন চারজন। বনদপ্তরের তরফে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।