• জাতীয় অপরাধ রেকর্ড ব্যুরো...
    আজকাল | ১১ অক্টোবর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খার্গে গতকাল, ৯ অক্টোবর, হরিয়ানার এক প্রবীণ দলিত আইপিএস অফিসার ওয়াই. পুরণ কুমারের আত্মহত্যার ঘটনায় বিজেপির ‘মনুবাদী শাসনব্যবস্থা’-কে তীব্র আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, এই আত্মহত্যার ঘটনা বর্তমান শাসনব্যবস্থার দ্বারা চালিত “সামাজিক অবিচার, অমানবিকতা ও সংবেদনহীনতার এক ভয়াবহ দলিল।” আজ, ১০ অক্টোবর, তিনি আরও এক ধাপ এগিয়ে বলেন, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং মোদি সরকারের “সংবিধান, সামাজিক ন্যায় এবং সমতার মৌলিক নীতির উপর সরাসরি আঘাত”-এর ধারাবাহিক ফলাফল।

    এক্স-এ প্রকাশিত এক অনুসারী পোস্টে খার্গে সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে উদ্দেশ্য করে জাতীয় অপরাধ রেকর্ড ব্যুরো (এনসিআরবি)-র সর্বশেষ প্রতিবেদন উল্লেখ করেন। তিনি জানান, ২০১৩ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে দলিতদের (তফসিলি জাতি) বিরুদ্ধে অপরাধ ৪৬ শতাংশ এবং আদিবাসীদের (তফসিলি জনজাতি) বিরুদ্ধে অপরাধ ৯১ শতাংশ বেড়েছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, মোদি সরকার ২০১৪ সাল থেকে ক্ষমতায় রয়েছে।

    একই সঙ্গে খার্গে জানান, এই সময়কালে নারীদের বিরুদ্ধে অপরাধ ৪৪.৭ শতাংশ এবং শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধ ২০৪.৫ শতাংশ বেড়েছে। তাঁর পোস্টের সঙ্গে প্রকাশিত কংগ্রেসের একটি ছোট ভিডিও—যার শিরোনাম ছিল ‘নো আচ্ছে দিন’—দেখায় যে সাইবার অপরাধ এই দশকে ১,৪১৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ভিডিওটির উপসংহারে লেখা ছিল, “বিজেপির ‘বি’ মানে ‘বেট্রেয়াল’ (প্রতারণা)।”

    খার্গে, যিনি নিজেও দলিত সমাজের প্রতিনিধি, তাঁর পোস্টে সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনাকে এই “প্রতারণার” প্রতীক হিসেবে তুলে ধরেছেন। এর মধ্যে রয়েছে—হরিয়ানার আইপিএস অফিসার পুরণ কুমারের জাতিভিত্তিক বৈষম্য ও উর্ধ্বতন কর্তাদের হয়রানির অভিযোগে আত্মহত্যা, রায়বেরেলিতে হরিওম বাল্মিকীর লিঞ্চিং, দলিত প্রধান বিচারপতি বি.আর. গাভাই-এর উপর হিন্দুত্ববাদী আইনজীবীর জুতো নিক্ষেপ, এবং বিজেপি শাসিত রাজস্থানের সাওয়াই মাধোপুর জেলায় বৃদ্ধা দলিত মহিলা কমলা দেবী রায়গরের ওপর নির্মম নির্যাতন।

    খার্গে সতর্ক করে বলেন, এই ঘটনাগুলি কেবল বিচ্ছিন্ন নয়, এগুলি “আরএসএস–বিজেপির সামন্তবাদী মানসিকতার বিপজ্জনক বহিঃপ্রকাশ।” তাঁর মতে, এই মানসিকতা কেবল সংখ্যালঘু ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য নয়, গণতন্ত্রের জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি আরও বলেন, বিজেপি-আরএসএস-এর রাজনীতি এখন এমন এক পরিবেশ সৃষ্টি করছে, যেখানে ভয়, দমন ও নীরবতার সংস্কৃতি সমাজে গভীরভাবে গেঁথে যাচ্ছে—বিশেষত দলিত, আদিবাসী, পিছিয়ে পড়া শ্রেণি, সংখ্যালঘু ও অন্যান্য দুর্বল সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে। “ভারত চলবে সংবিধান অনুযায়ী, কোনো চরমপন্থী মতাদর্শের ফরমান অনুযায়ী নয়”—এই বার্তায় খার্গে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

    তিনি মোদি সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন যে, সরকার জনগণের কষ্টের প্রতি সম্পূর্ণ উদাসীন। তাঁর ভাষায়, “দলিত, আদিবাসী, পিছিয়ে পড়া শ্রেণি, সংখ্যালঘু ও দুর্বল অংশগুলি ভয়াবহ অন্যায়ের শিকার হচ্ছে, আর আপনি (মোদি) চোখ বন্ধ করে নিজের প্রদর্শনীতে মগ্ন রয়েছেন।”

    এই মন্তব্যগুলি আসে এমন এক সময়ে যখন কংগ্রেস ও বিরোধী দলগুলির ‘ইন্ডিয়া’ জোট দেশজুড়ে জাতিভিত্তিক অপরাধ, লিঞ্চিং ও তথাকথিত ‘বুলডোজার ন্যায়বিচার’-এর বিরুদ্ধে আন্দোলন জোরদার করছে। সামনের বছর বিহারসহ একাধিক রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন, ফলে এই ইস্যুগুলিকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মেরুকরণও বাড়ছে।

    খার্গে, রাহুল গান্ধী, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব ও সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদব সহ বিভিন্ন বিরোধী নেতা জনগণকে আহ্বান জানিয়েছেন একত্রিত হয়ে ন্যায়, মর্যাদা ও সমঅধিকারের লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্য। তাঁদের মতে, প্রতিটি ভারতীয় নাগরিক সংবিধানপ্রদত্ত অধিকার ভোগ না করা পর্যন্ত এই লড়াই চলবে।

    খার্গের বক্তব্যে ফুটে উঠেছে শুধু ক্ষোভ ও বেদনা নয়, বরং একটি রাজনৈতিক সংকল্পও—যে সামাজিক ন্যায়, সংবিধানিক অধিকার ও বৈষম্যবিরোধী রাজনীতি আবারও ভারতের গণতান্ত্রিক আলোচনার কেন্দ্রে ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন।

    আসন্ন নির্বাচনী বছর, নীতি সংস্কার, এবং দেশজুড়ে নানা প্রতিবাদ আন্দোলনের প্রেক্ষিতে—যেমন লাদাখের ষষ্ঠ তফসিলের দাবি বা মণিপুরের ন্যায়বিচারের লড়াই—খার্গের এই বক্তব্য কেবল একটি রাজনৈতিক আক্রমণ নয়, বরং সমগ্র জাতির বিবেককে প্রশ্ন করার এক আহ্বান। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, স্বাধীনতার প্রায় আট দশক পরও ভারতের সংবিধানে প্রতিশ্রুত সামাজিক ন্যায় ও সমতার লড়াই এখনও অসমাপ্ত।
  • Link to this news (আজকাল)