• বাপের বাড়ি যেতে বাধা, এক ঝট্কায় শ্বশুরের অণ্ডকোষ ছিঁড়ে নিল বৌমা! 'বাবাগো মাগো' বলে চিৎকার করতে করতে লুটিয়ে পড়ল বৃদ্ধ  ...
    আজকাল | ১১ অক্টোবর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: পূর্ব মেদিনীপুরের ময়না থানার নারকেলদহ গ্রামে এক রোমহর্ষক পারিবারিক কাণ্ডে স্তম্ভিত এলাকাবাসী। পুজোর আগে বাপের বাড়ি যাওয়া নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর তীব্র ঝগড়া গিয়ে শেষ হলো এক রক্তাক্ত পরিণতিতে। রাগের মাথায় ৭৫ বছর বয়সী শ্বশুরের অণ্ডকোষ ছিঁড়ে ফেললেন পুত্রবধূ, অভিযোগ উঠেছে ২৭ বছরের শিখা হাইতের বিরুদ্ধে। এই ঘটনার জেরে গুরুতর আহত বৃদ্ধ বর্তমানে তমলুক জেলা হাসপাতালে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন। অভিযুক্ত গৃহবধূকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ এবং আদালতের নির্দেশে তাঁকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।

    স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার থেকেই বচসার সূত্রপাত। জানা যায়, শিখা হাইত পুজোর আগে বাপের বাড়িতে যেতে চান। তিনি জানান, সেদিন সেখানে মাংস রান্না হবে, তাই যাওয়াটা তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু স্বামী বিশ্বজিৎ হাইত আপত্তি জানান এবং বলেন যে তিনি নিজেই বাড়িতে মাংস আনবেন, বাইরে যাওয়ার দরকার নেই। এই সিদ্ধান্তেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন শিখা। তিনি বাড়ির সদস্যদের উদ্দেশে কটূক্তি করতে শুরু করেন।

    সেই সময় পরিস্থিতি সামাল দিতে এগিয়ে আসেন বৃদ্ধ শ্বশুর। তিনি বৌমাকে শান্ত করার চেষ্টা করেন এবং অশোভন ভাষা ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে বলেন। কিন্তু শিখা তখন রাগে অনিয়ন্ত্রিত। অভিযোগ, বৌমা হঠাৎই শ্বশুরের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং হঠাৎ এক হেঁচকায় তাঁর অণ্ডকোষ টেনে ছিঁড়ে ফেলেন। 'বাবাগো মাগো' বলে চিৎকার করতে করতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন বৃদ্ধ।

    চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা ছুটে এসে রক্তাক্ত অবস্থায় বৃদ্ধকে উদ্ধার করেন এবং তড়িঘড়ি করে তমলুক জেলা হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসকেরা জানান, বৃদ্ধের অবস্থা অত্যন্ত সংকটজনক, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে তাঁকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে।

    অন্যদিকে, ঘটনার পর আতঙ্কিত শিখা স্থানীয়দের হাতে ধরা পড়লেও কিছুক্ষণ পর সুযোগ পেয়ে পালিয়ে যান বাপের বাড়ি। পরদিন তাঁর শাশুড়ি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে ময়না থানার পুলিশ শিখাকে গ্রেপ্তার  করে। মঙ্গলবার তাঁকে তমলুক আদালতে তোলা হলে বিচারক ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।

    অভিযোগকারিণী তথা শাশুড়ির বক্তব্য, “আমার স্বামী শুধু ছেলে-বৌমার ঝগড়া থামাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বৌমা আচমকা ক্ষেপে উঠে আমার স্বামীর ওপর হামলা চালায়। ওর মতো নিষ্ঠুর মানুষের শাস্তি হওয়া উচিত।”

    ময়না থানার ওসি গোপাল পাঠক জানিয়েছেন, “ঘটনাটি অত্যন্ত গুরুতর। অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্ত গৃহবধূকে গ্রেপ্তার  করা হয়েছে। ৩০৭ ধারায় মামলা রুজু হয়েছে এবং পুরো ঘটনার তদন্ত চলছে।”

    এদিকে, তমলুকের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ আলোক পাত্র এই ঘটনাকে সমাজে বাড়তে থাকা মানসিক অস্থিরতার উদাহরণ বলে মন্তব্য করেছেন। তাঁর মতে, “অল্পতেই রাগ, হিংসা ও মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলার প্রবণতা এখন উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, পারিবারিক টানাপোড়েন ও অতিরিক্ত সামাজিক মাধ্যম নির্ভরতা এর অন্যতম কারণ।”

    শান্ত গ্রামের বুক চিরে এমন নৃশংস ঘটনায় এখনো হতবাক নারকেলদহবাসী। সবাই একবাক্যে বলছেন, “যা হয়েছে, তা বিশ্বাস করা কঠিন। এমন হিংস্রতা আমাদের গ্রামে আগে কখনও দেখিনি।”
  • Link to this news (আজকাল)