একমাসের জন্য কাজে অসমে, ১৫ বছর পর এনআরসির নোটিশ ধুবুলিয়ার ২ শ্রমিককে!
বর্তমান | ১১ অক্টোবর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, ধুবুলিয়া: পেটের তাগিদে ১৫ বছর আগে মাত্র একমাসের জন্য অসমে কাজে গিয়েছিলেন আজন্ম নদীয়ার ধুবুলিয়ার বাসিন্দা সঞ্জু শেখ ও আসাদ আলি শেখ। আর তাতেই বিপর্যয়! অসমের ট্রাইব্যুনাল থেকে নোটিশ পাঠিয়ে বলা হয়েছে, আগামী ১৩ অক্টোবর সশরীরে হাজির হয়ে ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে হবে তাঁদের। খবর সামনে আসতেই বৃহস্পতিবার প্রতিবাদে গর্জে উঠেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার সরব হয়েছেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। তাঁর কথায়, ‘রাজ্য সরকার পরিবারগুলির পাশে রয়েছে। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এটি বিজেপির রাজনৈতিক খেলা। আমাদের রাজ্যের কোনও বৈধ নাগরিককে এইভাবে এনআরসির নোটিশ ধরানো যায়না।’
শুক্রবার বেলার দিকে বাড়ির দালানেই দাঁড়িয়েছিলেন সঞ্জু শেখ। প্রতিবেশীরাও ভিড় করছিলেন দফায় দফায়। এদিন তিনি আর কাজে যাননি। আতঙ্ক গ্রাস করেছে তাঁকে। পরিবার নিয়ে চিন্তা বাড়ছে। কারণ, অসম থেকে তাঁর নামে এনআরসির নোটিশ এসেছে। অসম ট্রাইব্যুনাল থেকে নোটিশ দিয়ে জানানো হয়েছে, তাঁকে দেশের নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে হবে। ১৫ বছর পর এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে, তা ভাবতেও পারছেন না সঞ্জু।
জন্ম থেকে ধুবুলিয়া থানায় বেলপুকুর পঞ্চায়েতের সোনডাঙ্গা গ্রামে বড় হয়েছেন সঞ্জু। বর্তমানে বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে থাকেন। পাকা বাড়িও বানিয়েছেন। হঠাৎ এই চিঠিতে আকাশ ভেঙে পড়েছে তাঁর মাথায়। কৃষ্ণনগর লোকসভার সাংসদ মহুয়া মৈত্র বলেন, সঞ্জু শেখের বাবা চাষবাস করতেন। পরিবারের আর্থিক অনটন ছিল। সঞ্জু সোনডাঙ্গার মাঝেরপাড়া এলাকায় স্থানীয় এক স্কুলে পড়াশোনা করতেন। কিন্তু অভাবের কারণে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েই কাজে লেগে যান। মার্বেলের কাজ করতে থাকেন। এরই মধ্যে এক ঠিকাদার মারফত অসমের গুয়াহাটিতে মার্বেলের কাজ করার জন্য ডাক পেয়েছিলেন। সেইমতো সোনাডাঙ্গা এলাকারই সাতজন মিলে অসমের গুয়াহাটি যান। সকলেই সঞ্জুর পরিচিত। তাঁদের মধ্যে আসাদ আলি শেখের নামেও এনআরসির নোটিশ এসেছে। এমনটাই জানিয়েছেন সঞ্জু। তিনি জানিয়েছেন, অসমে কর্মরত অবস্থায় তাঁদের কাছ থেকে পরিচয়পত্র নিতে কিছু লোক এসেছিল। পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে নিজেদের পরিচয়ও দিয়েছিলেন তাঁরা। সেখানে এক মাস কাজ করার পর বাড়ি ফিরে আসেন। তারপর আর অসম যাননি সঞ্জু শেখরা। হঠাৎ গত ৩ অক্টোবর তাঁর নামে একটি চিঠি আসে। চিঠি খুলতেই দেখেন, অসমিয়া ভাষায় কিছু লেখা রয়েছে। জানা যায়, সেটা এনআরসির চিঠি। আগামী ১৩ তারিখ পরিচয়পত্র জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাঁকে।
সঞ্জু বলেন, ‘আমি তো জন্ম থেকেই ধুবুলিয়ায়। সব নথিপত্র আমাদের রয়েছে। তারপরেও এই নোটিশ এসেছে।’ আসাদ আলি শেখ বলেন, ‘বহু বছর আগে অসমে আমরা কয়েকদিন মাত্র কাজ করেছিলাম। তখন পরিচয়পত্র জমা করিনি। কিন্তু নাম লেখা হয়েছিল। তাছাড়া আমার গোটা বংশের কাগজ রয়েছে। আমরা ধুবুলিয়াতেই থাকি।’