• ধসের জন্য দায়ী ভঙ্গুর চরিত্রের পাথর, দোসর বেলাগাম নির্মাণ
    বর্তমান | ১১ অক্টোবর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ভূতত্ত্বগতভাবে দার্জিলিং পাহাড় এলাকাটি ভীষণ বিপজ্জনক। অতীতে গবেষণা করে এখানে ৪১০টি জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে অতীতে ধস নেমেছিল। দার্জিলিংয়ে সাম্প্রতিক বিপর্যয়ের প্রেক্ষিতে এর কারণ অনুসন্ধান করতে একটি বিস্তারিত রিপোর্ট প্রকাশ করেছেন জিয়োলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার (জিএসআই) অবসরপ্রাপ্ত ডিরেক্টর শিখেন্দ্র দে। এই রিপোর্ট তৈরি করতে উপগ্রহ থেকে নেওয়া ছবি ও বিভিন্ন গবেষণামূলক কাজে প্রাপ্ত তথ্যের সাহায্য নিয়েছেন তিনি। বিশেষ করে সিকিম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব হিউম্যান সায়েন্সের ভূগোল বিভাগ দার্জিলিং এলাকার ধস নিয়ে অনেক গবেষণামূলক কাজ করেছে। শিখেন্দ্রবাবুর রিপোর্টে বলা হয়েছে, দার্জিলিংয়ে যে ‘নাইসিস রক’ আছে তা সবচেয়ে ধসপ্রবণ। এই কারণেই ভূতাত্ত্বিকভাবে এই এলাকাটি খুবই বিপজ্জনক। তার সঙ্গে প্রচুর বৃষ্টিপাত এবং লাগামছাড়া নানা ধরনের নির্মাণ কাজ, এলাকাটিকে আরও বেশি ধসপ্রবণ করে তুলেছে। মত শিখেন্দ্রবাবুর। প্রসঙ্গত, দার্জিলিংয়ে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জন্য যত মৃত্যু হয়েছে তার অধিকাংশের কারণ ধস। 

    ভূতাত্ত্বিকদের মতে, দার্জিলিং পাহাড়ের  পাথরের বেশিরভাগটার গঠন প্রক্রিয়া ছিল ‘লো গ্রেড মেটামরফোসিস’। পাথরের গঠন প্রক্রিয়া ‘হাই গ্রেড মেটামরফোসিস’ হলে তা অনেক বেশি কঠিন হয়। সেটা না-হওয়ার জন্য দার্জিলিং পাহাড়ের পাথরের চরিত্র খুবই ভঙ্গুর ধরনের। প্রবল বৃষ্টিপাতের ফলে জল শোষণ করে ওই পাথর আরও কমজোরি হয়ে পড়ে। তাই ধস নেমেছে। পাহাড় যেখানে বেশি খাড়া সেইসব জায়গাতেই ধস বেশি নামে। ২৪ থেকে ৩৩ ডিগ্রি খাড়াইয়ে ধস নামার প্রবণতা বেশি থাকে বলে শিখেন্দ্রবাবু রিপোর্টে উল্লেখ করেছেন। পাহাড়ের সবথেকে উঁচু ও নীচু অংশের তুলনায় মাঝের অংশে বেশি ধস নামে। অতীতে যে ৪১০টি স্থানকে ধস নামার জায়গা হিসেবে গবেষণায় চিহ্নিত করা হয়েছে তার মধ্যে ২৩৩টি পাহাড়ের মাঝের অংশে অবস্থিত। ধসের প্রেক্ষিতে পাহাড়ের নীচের অংশ সবচেয়ে নিরাপদ। এই হিসেবে পাহাড়ের মাঝামাঝি জায়গায় অধিক খাড়া অংশে বাড়িঘর তৈরি করা বেশি বিপজ্জনক। পাহাড়ে ঘরবাড়ি নির্মাণের সময় এদিকে নজর রাখা উচিত।

    রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, পাহাড়ি এলাকায় রাস্তাঘাট বেশি নির্মাণ করা হলে ধসপ্রবণতা বাড়ে। রাস্তাঘাটের ঘনত্ব বেশি হলে পাহাড়ি ঢাল নড়বড়ে হয়ে পড়ে। এই কারণেও বেশি ধস নামে। পাহাড়ি এলাকায়  বেশি হারে গাছ কাটা হলে পাথর ও মাটির বাঁধুনি আলগা হয়ে পড়ে। তার জেরে ধসপ্রবণতা বৃদ্ধি পায়। এমনিতেই পাহাড়ি এলাকায় বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা বেশি। কারণ সমুদ্র থেকে বায়ুমণ্ডলে ঢোকা জলীয় বাষ্প উঁচু পাহাড়ে ধাক্কা খেয়ে শক্তিশালী বৃষ্টির মেঘ সৃষ্টি করে। সাম্প্রতিক অতিবৃষ্টির এটাও অন্যতম কারণ ছিল। এর সঙ্গে যুক্ত হয় পূর্ব বিহারের উপর অবস্থানরত নিম্নচাপের প্রভাব। এই ধরনের ঘটনা আগামী দিনে ফের হতে পারে। তাই দার্জিলিং পাহাড়ের পাথরের চরিত্র ও এখানকার ভূতাত্ত্বিক গঠনকে মাথায় রেখে এখানে নির্মাণ কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণ করা উচিত বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। 
  • Link to this news (বর্তমান)