নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: জলে ডুবেছে গ্রাম। জঙ্গলেই বসল বিয়ের আসর। শুক্রবার লাটাগুড়ির জঙ্গলে মহাকালকে সাক্ষী রেখেই হল মালাবদল, সিঁদুরদান। আদিবাসী যুবক-যুবতীর বিয়ের আসরে প্রার্থনা করা হল দুর্গতদের জন্য। যাতে গ্রাম থেকে দ্রুত বন্যার জল নেমে যায়। নয়া দম্পতি যেন তাড়াতাড়ি ঘরে ফিরতে পারেন। নতুন জীবন যেন সুখের হয় ওঁদের। জঙ্গল থেকে হাতি বেরিয়ে যেন ওঁদের কোনও ক্ষতি না করে।
রামসাইয়ের চা বাগানের শ্রমিক বছর চব্বিশের আশিক মুন্ডা। অন্যদিকে বারোহাতি এলাকার বাসিন্দা ২২ বছরের বারখা মুন্ডা। শুক্রবার লাটাগুড়ির জঙ্গলে মহাকাল মন্দিরে বিয়ে হল তাঁদের। পুরোহিত হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অজিত তিলিতামারিয়া। বিয়ের আসরে হাজির ছিলেন বর ও কনেপক্ষের লোকজন। মহাকালকে পাঁচ ফল ও খই-বাতাসা দিয়ে পুজো দেওয়ার পর শুরু হয় বিয়ের অনুষ্ঠান। আদিবাসী রীতি মেনে একে একে সবটা সম্পন্ন হওয়ার পর মহাকালকে সাক্ষী রেখে হয় মালাবদল ও সিঁদুরদান পর্ব। তারপর মহাকালকে মাঝে রেখে সাত পাক ঘোরেন বর-কনে। দুর্যোগের মাঝে নতুন জীবন শুরু করতে চলা এই দম্পতিকে আশীর্বাদ করেছেন পর্যটকরাও। লাটাগুড়ি থেকে চালসায় যাওয়ার পথে রাস্তার ধারে জঙ্গলের মাঝে বিয়ে হতে দেখে থমকে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁরাও। গাড়ি থেকে নেমে শামিল হয়েছিলেন ওই বিয়ের অনুষ্ঠানে। বিয়ে শেষে মিষ্টিমুখেরও ব্যবস্থা ছিল।
পাত্রের কাকিমা সবিতা মুন্ডা বলেন, জলঢাকা নদীর জল উঠে এসেছে গ্রামে। ঘরবাড়ি বিপর্যস্ত। তাই জঙ্গলেই বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে। তাছাড়া লাটাগুড়ির জঙ্গলে মহাকালকে সাক্ষী রেখে বিয়ের অনুষ্ঠান করার আরও একটা বড় কারণ, আমরা জঙ্গল লাগোয়া এলাকায় থাকি। রাতবিরেতে হাতি, গন্ডার, বাইসন বেরিয়ে আসে। ফলে বিপদে পড়তে হয়। মহাকাল যাতে নয়া দম্পতিকে রক্ষা করেন, সেই আশীর্বাদ চাওয়া হল এদিন।
বিয়ের অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন পাত্রের বাবা শুক্রা মুন্ডা ও পাত্রীর বাবা তাপস থারু। বললেন, প্রবল বর্ষণে গ্রাম বিপর্যস্ত। অনেকের ঘরবাড়ি ভেঙে গিয়েছে। ভেসে গিয়েছে গৃহস্থালির জিনিসপত্র। এসময় কারওই মন ভালো নেই। আপাতত মিষ্টিমুখ করানো হচ্ছে সবাইকে। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলে একদিন খাওয়াদাওয়ার অনুষ্ঠান হবে।
বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে নয়া দম্পতিকে খোশমেজাজে লাটাগুড়ির জঙ্গলে সেলফি তুলতেও দেখা গেল। বললেন, দুর্যোগের মাঝে আমরা নতুন জীবন শুরু করতে চলেছি। মহাকালের আশীর্বাদ নিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠান সারলাম। প্রার্থনা করলাম, দুর্গতরা যেন দ্রুত স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে পারেন। জঙ্গল থেকে বন্যপ্রাণ লোকালয়ে বেরিয়ে এসে কারও যেন কোনও ক্ষতি না করে। বিয়ের পুরোহিত অজিত তিলিতামারিয়া বলেন, খুবই ভালো লাগল মহাকালকে সাক্ষী রেখে এদিন ওই আদিবাসী যুবক-যুবতীকে বিয়ে দিতে পেরে। ওঁদের নতুন জীবন যাতে খুব সুখের হয়, মহাকালের কাছে সেই প্রার্থনা করি।