নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি ও সংবাদদাতা, নাগরাকাটা: একে দুর্যোগের রক্ষা নেই। তার উপর রাত নামলেই হাতির হামলার ভয়। ত্রাণের চালের লোভে ডায়নার জঙ্গল থেকে রোজ রাতে হানা দিচ্ছে গজরাজের দল। হাতি তাড়াতে রাত জাগছেন নাগরাকাটার টন্ডু, বামনডাঙার দুর্গতরা। অবশ্য পাশে দাঁড়িয়েছে বনদপ্তর। দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে হাতি তাড়াতে বনদপ্তর দুর্গতদের নিয়োগ করছে। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জঙ্গল থেকে উদ্ধার হয়েছে নিখোঁজ এক মহিলার দেহ। মৃতার নাম সরস্বতী বাঙ্কারা বরাইক (৪৭)। এখনও নিখোঁজ বামনডাঙার ডায়না লাইনের বাসিন্দা চার বছরের শিশু নিভিয়াঙ্ক নায়েক। তার খোঁজে জঙ্গলে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ ও বনদপ্তর।
জলের তোড়ে আকাশ নায়েকের গোটা পরিবার ভেসে যায়। কোনওমতে রক্ষা পান আকাশ। বিপর্যয়ের দু’দিন পর উদ্ধার হয় তাঁর স্ত্রী মঞ্জু নায়েক ও মেয়ে নিভৃতি নায়েকের দেহ। এখন ছেলের খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন আকাশ। একা একাই ঢুকে পড়ছেন জঙ্গলে। বনদপ্তরের আধিকারিকরা তাঁকে এভাবে একা জঙ্গলে ঢুকতে নিষেধ করেছেন। বনকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে তবেই জঙ্গলে শিশু সন্তানের খোঁজ চালানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার নাগরাকাটায় জলঢাকা, ডায়না ও গাঠিয়া নদীর জলের তোড়ে ভেঙে পড়া সেতুর সামনে গিয়ে দেখা যায়, নদীর জল কিছুটা কমায় ট্রাক্টরে করে ত্রাণের সামগ্রী পাঠানো হচ্ছে দুর্গত টন্ডু ও বামনডাঙা গ্রামে। ভাঙা সেতুর পাশ দিয়ে কিছুটা নীচে নেমে তৈরি করা হয়েছে নদীঘাট। সেখানে স্পিড বোটে করে দুর্গতদের জলঢাকা নদী পার করাচ্ছে এনডিআরএফ। ওপারে পৌঁছে কিছুটা হেঁটে তারপর ট্রাক্টরে চেপে পৌঁছনো যাচ্ছে বামনডাঙা মডেল ভিলেজে। ধুলো মাখা পথের ধারে শুধুই ধ্বংস চিহ্ন। জঙ্গল ছেড়ে যখন তখন হাতির দল বেরিয়ে আসছে। সেকারণে টন্ডু গ্রামের মোড়ে দিন রাত পাহারা দিচ্ছেন বনকর্মীরা। মোতায়েন রাখা হয়েছে ক্যুইক রেসপন্স টিম। গাড়ি। এদিন সন্ধ্যাতেও নাথুয়ার জঙ্গল থেকে একটি হাতি চলে আসে সেখানে। তাড়াতে গেলে বনকর্মীদের দিকেই তেড়ে আসে দাঁতালটি। টন্ডু, বামনডাঙা গ্রামেই পড়ে রয়েছেন গোরুমারার ডিএফও দ্বিজপ্রতিম সেন। যদিও তার আগেই বনকর্মীরা হাতিটিকে জঙ্গলে ফেরত পাঠাতে সক্ষম হন। ডিএফও বলেন, এসময় জঙ্গল থেকে বন্যপ্রাণীরা একটু বেশি লোকালয়ে বেরিয়ে আসছে। তবে আমরা প্রচুর ক্যুইক রেসপন্স টিম মজুত রেখেছি। গোটা জেলায় আমাদের ৩০টি টিম কাজ করছে। হাতি তাড়ানোর কাজে স্থানীয়দেরও দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে নিয়োগ করা হয়েছে। রাত জেগে হাতি তাড়াচ্ছেন বামনডাঙা মডেল ভিলেজের বাসিন্দা মণীশ টিগ্গা, রাজেশ ওরাওঁ। বললেন, ত্রাণের চাল, ডালের লোভে রোজ রাতে আমাদের গ্রামে হাতির হানা হচ্ছে। দল বেঁধে আসছে হাতি। বনদপ্তর আমাদের হাতি তাড়ানোর কাজে নিয়োগ করেছে।
এদিকে, নাথুয়ার জঙ্গলে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় যে মহিলার দেহ উদ্ধার হয়, তাঁর আত্মীয় কৈলাসী সাউ বলেন, বিচ লাইনের বাসিন্দা ছিলেন সরস্বতী। স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে আমাদের বাড়িতেই থাকতেন। জলঢাকার জলে লালসুতি ঝোরা ফুলেফেঁপে ওঠে। ঘর ছাড়তে গিয়ে ভেসে যান তিনি। অন্যদিকে আকাশ নায়েকের চার বছরের নিখোঁজ ছেলের হদিশ পেতে এদিনও জঙ্গলে সার্চ অপারেশন চালিয়েছেন বনকর্মীরা। নাগরাকাটায় ভেঙে পড়া জলঢাকা সেতুর অ্যাপ্রোচ রোড তৈরির কাজও শুরু হয়েছে।