• জঙ্গি দমন অভিযানে কাশ্মীরে মৃত্যু দুই বাঙালি জওয়ানের,
    বর্তমান | ১১ অক্টোবর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, সিউড়ি ও মুর্শিদাবাদ: তিনদিন আগে দক্ষিণ কাশ্মীরের অনন্তনাগে জঙ্গিদমন অভিযান চলাকালীন শুরু হয়েছিল তুষারঝড়। তার জেরেই নিখোঁজ হয়ে যান দুই বাঙালি জওয়ান।  দু’জনেই দক্ষ এলিট শ্রেণির প্যারাট্রুপার। বৃহস্পতিবারই একজনের দেহ উদ্ধার হয়েছিল কোকেরনাগে। শুক্রবার মিলল দ্বিতীয় জনের দেহ।  নিহত দুই জওয়ানের নাম প্যারা কমান্ডো পলাশ ঘোষ এবং ল্যান্স নায়েক সুজয় ঘোষ। পলাশ মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ার রুকুনপুরের বাসিন্দা। সুজয়ের বাড়ি বীরভূমে, রাজনগরের কুণ্ডিরা গ্রামে। ভারতীয় সেনার কাশ্মীরের চিনার কোরের তরফে জানানো হয়েছে, ‘কাশ্মীরের কোকেরনাগে কিস্তওয়ার রেঞ্জে চরম প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে লড়াই করার সময় প্যারা কমান্ডো মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ার রুকুনপুরের পলাশ ঘোষ এবং ল্যান্স নায়েক সুজয় ঘোষের সর্বোচ্চ ত্যাগকে সম্মান জানাচ্ছে চিনার কোর’।

    শুক্রবার দুপুরে সেনার তরফে বাড়িতে দুঃসংবাদ আসতেই শোকের ছায়া নেমে আসে পলাশ ও সুজয়ের গ্রামে। বীরভূমের জেলাশাসক বিধান রায় বলেন, খুবই মর্মান্তিক ঘটনা। বেদনাদায়ক। আমরা প্রশাসনের তরফে মৃত জওয়ানের পরিবারের পাশে রয়েছি। মৃতের পরিবারকে সবরকমভাবে সাহায্য করা হবে। রাজনগর পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ তথা ব্লক তৃণমূলের সভাপতি সুকুমার সাধু বলেন, খবর শুনেই গ্রামে গিয়েছি। আমরা শোকাহত।

    স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্ম সুজয়ের। মা-বাবা ঠাকুমা ছাড়াও দাদা-বউদি রয়েছেন। ছোটবেলা থেকেই সেনায় যোগ দেওয়ার স্বপ্ন ছিল। দৌড়ে ব্লকের সেরা ছিলেন সুজয়। খেলাধুলোতেও ছিলেন পারদর্শী। ২০১৮ সালে সেনায় যোগ দেন। সুজয়ের দাদা মৃত্যুঞ্জয় ঘোষ বলেন, মে-জুন মাস নাগাদ ভাই বাড়িতে এসেছিল। অনেকদিনই ছিল। তারপর ফিরে গিয়ে ভাই জানায়, ওকে কাশ্মীরে বদলি করেছে। কাশ্মীরে যাওয়ার পর থেকে নিয়মিত কথা হতো। ছবিও পাঠাত। জঙ্গিদের সঙ্গে সেনার লড়াইয়ের কাহিনিও বর্ণনা করত। তবে, গত ৬ অক্টোবরের পর থেকে আর ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয়নি। 

    সুজয়ের দাদা বলেন, ৬ তারিখ যখন ভাইয়ের সঙ্গে শেষ কথা হল, তখনই ও জানিয়েছিল আগামী কয়েকদিন আর কথা হবে না। ভারতীয় সেনার কোনও বিশেষ অভিযানে যাচ্ছে। ফিরে এসে ও নিজেই ফোন করবে। তারপর থেকেই ভাইয়ের জন্য আমাদের চিন্তা বাড়তে থাকে। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ হঠাৎ অচেনা নম্বর থেকে ফোন আসে। জানানো হয়, সেনার বিশেষ অভিযানে গিয়ে ভাই গুরুতর জখম হয়েছে। আইসিইউ’তে ভর্তি। তার ঘণ্টা খানেক পর ফের ফোন আসে, ভাই আর নেই! কথাগুলি বলতে বলতেই ডুকরে কেঁদে ওঠেন মৃত্যুঞ্জয়বাবু। সুজয়ের অকাল মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকেই অঝোরে কেঁদে চলেছেন তাঁর মা, বাবা সহ পরিবারে সদস্যরাও। মাঝেমধ্যেই জ্ঞান হারাচ্ছেন তাঁর মা। আজ, শনিবার গ্রামে সুজয়ের দেহ পৌঁছনোর কথা।বীর সন্তানকে শেষবারের মতো দেখতে অপেক্ষায় রয়েছেন এলাকার মানুষজনও।
  • Link to this news (বর্তমান)