বিমল বন্দ্যোপাধ্যায়, বজবজ: গঙ্গা ও সরস্বতীর মিলিত প্রবাহ ধরে হাঁটলে সরস্বতী ঘাটের পূর্ব দিকে বজবজ চিত্রগঞ্জ কালীবাড়ি। একসময় সাধক কমলাকান্ত পূজিত এই কালী ব্রহ্মময়ী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তবে হাত ঘুরে বজবজে আসার পর সাধক রামজি গোঁসাই কালীর নাম দিলেন খুখি মাঈ। এই কালীপুজো এবার ১৩২ বছরে পা দিয়েছে।
বীরভূমের ফুল্লরা সতীপীঠের পুরোহিত ছিলেন সাধক রামজি গোঁসাই। একখণ্ড কষ্টিপাথর কেটে শিবহীন ঝকঝকে কালীমূর্তি তৈরি হয়েছিল। সেই দেবীর আকর্ষণ শক্তি দেখে রামজি গোঁসাই মোহিত হয়ে পড়েন। ফুল্লরার সতীপীঠ ছেড়ে চলে আসেন চিত্রগঞ্জ কালী মন্দিরে। দীর্ঘদিন থেকে সাধন ও পুজো করেন প্রায় নিঃশব্দে। ১৯১৬ সালে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় ঠাকুর দর্শন করতে ও গোঁসাইয়ের আশীর্বাদ নিতে আসেন। তাঁর বৃদ্ধা মা টালার বাড়ি থেকে লোক পাঠাতেন বজবজে, কালীবাড়ির প্রসাদ ও পুজোর ফুল নিতে। ১৯৬১ সালের ১৮ ডিসেম্বর বজবজ পাবলিক লাইব্রেরির সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষে অতিথি হিসেবে এসেছিলেন তারাশঙ্কর। ওইদিন তিনি চিত্রগঞ্জ কালীবাড়ির ইতিহাস, এবং গোঁসাইয়ের আধ্যাত্মিক গভীরতা সম্পর্কে আলোচনা করেন। জানিয়ে যান, তাঁর মায়ের প্রার্থনা শুনে কুলপুরোহিত ও রামজি গোঁসাই ফুল্লরার সাধনায় বসেন। সেই সাধনার বলেই তিনি ভূমিষ্ঠ হন। শিশুকালে গোঁসাইয়ের কাঁধে চেপে বীরভূমের লাভপুরে ঘুরেছেন। লেখক গণেশ ঘোষের বই থেকেও জানা যায়, বীরভূমের বাসিন্দা ছিলেন দয়াল ঘোষ। তিনি ইংরেজ সেনাবাহিনী থেকে অবসর নিয়ে বজবজ পূরাতন স্টেশনের কাছে বিষ্টুপাড়ায় কালীসাধনা শুরু করেন। পরে নির্জন চিত্রগঞ্জ শ্মশানে পঞ্চমুণ্ডির আসন তৈরি করে গভীর সাধনায় ডুবে যান। তাঁর গুরুদেব ছিলেন বীরভূম নিবাসী পূর্ণানন্দ স্বামী। তিনিও মাঝে মাঝে চিত্রগঞ্জ শ্মশানে শিষ্যর কাছে এসে কালী আরাধনায় অংশ নিতেন। তিনিই শিষ্যকে পাথরের কালীমূর্তি দেওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিলেন। সেই ইচ্ছেপূরণ হয় সাধক কমলাকান্তের মৃত্যুর পর তাঁর পূজিত কষ্টিপাথরের ব্রহ্মময়ীর মূর্তি পূর্ণানন্দ স্বামীর হাতে আসার পর। এরপর ওই মূর্তি শিষ্যর হাতে তুলে দেন তিনি। যা এখন বজবজ চিত্রগঞ্জ কালীবাড়ির খুখি মাঈ বলে পরিচিত। নিজস্ব চিত্র