হাওড়ায় সিদ্ধেশ্বরী মায়ের পুজোয় লুকিয়ে আছে রোগ নিরাময়ের বিশ্বাস
বর্তমান | ১১ অক্টোবর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, হাওড়া: শহর তখন গড়ে উঠতে ঢের দেরি। তখন হুগলি নদীর পাশে ঘন জঙ্গল। জঙ্গলে এক তন্ত্রসাধকের হাতে পুজো পান দেবী সিদ্ধেশ্বরী। দেবীর মন্দিরে পুজো দিয়ে ছেলেকে মারণ অসুখের হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন ভুকৈলাসের রাজা। কালে কালে জঙ্গল উধাও। গড়ে ওঠে শহর। হাওড়া শহরের বিখ্যাত বাজার এলাকা হিসেবে এখন পরিচিতি সে জায়গার। কিন্তু আজও অটুট সিদ্ধেশ্বরীর মন্দিরটি। প্রায় তিনশো বছর ধরে নিয়মিত পুজো হচ্ছে। মন্দিরে মনস্কামনা পূরণ করতে দীপাবলির রাতে ভিড় করে কয়েক হাজার ভক্ত।
দেবীর নামেই এলাকার নাম সিদ্ধেশ্বরীতলা। পাশেই কালীবাবুর বাজার। কবে মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়েছিল সে সম্পর্কে নির্দিষ্ট কোনও তথ্য নেই। জনশ্রুতি অনুযায়ী, সিদ্ধেশ্বরীর স্বপ্নাদেশে প্রতিষ্ঠিত এই মন্দিরটি। একসময় মন্দিরের পাশ দিয়ে বয়ে যেত হুগলি নদী। বহু মানুষ নৌকায় যাওয়ার সময় মন্দিরে পুজো দিয়ে যেতেন। সে সময় অঞ্চলটি ঘন জঙ্গলে ভরা। এক তন্ত্রসাধক পর্ণকুটির বানিয়ে দেবীর নিত্য আরাধনা করতেন। শোনা যায়, ভূকৈলাশের রাজার ছেলে মারণ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাঁকে সুস্থ করে তুলতে রাজা জলপথে বেনারস যাচ্ছিলেন। নৌকায় যাওয়ার সময় দেবীকে স্বপ্নে দেখতে পান রাজা। এই মন্দিরে পুজো দিলে পুত্র ব্যাধিমুক্ত হবে বলে জানান দেবী। নৌকা থামিয়ে রাজা সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরে পুজো দেন। এবং তাঁর পুত্রও সুস্থ হয়ে ওঠে। এরপর কালক্রমে রানি বিরাজমোহিনী দেবীর থেকে স্থানীয় গঙ্গোপাধ্যায় পরিবার এই মন্দিরের সেবায়েতের দায়িত্ব পায়। তাঁরাই বংশানুক্রমে সেই দায়িত্ব এখনও পালন করছেন। মন্দিরের সামনে আছে নাটমন্দির। ভিতরে গর্ভগৃহ। সেখানে বিরাজ করেন কষ্টিপাথরের ত্রিনয়নী কালী। সোনা-রুপোর গয়নায় সজ্জিতা। বাম হাতে রুপোর খাঁড়া। আগে মাটির মূর্তি ছিল। ১৯২০ সাল নাগাদ কষ্টিপাথরের বিগ্রহ গড়ে তোলা হয়। প্রতিবছরের মতো এবারও মহাসমারোহে কালীপুজো হবে সিদ্ধেশ্বরীর মন্দিরে। প্রবল ভিড়ের সম্ভাবনা। মূলত জটিল রোগ থেকে মুক্তির আশায় ভক্তেরা ছুটে আসেন এখানে। দীপাবলীর সময় ছাগবলির পরিবর্তে চালকুমড়ো ও আখ বলি দেওয়া হয়। দেওয়া হয় আমিষ অন্নভোগ। নিজস্ব চিত্র