• এনআরসি নোটিস নদিয়ার ২ বাসিন্দাকে, তোপ মহুয়ার
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ১১ অক্টোবর ২০২৫
  • নদিয়া জেলায় সম্প্রতি নতুন করে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করেছে অসম থেকে আসা দুটি এনআরসি (ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেনস) নোটিস। কৃষ্ণনগর ২ নম্বর ব্লকের ধুবুলিয়া থানার সোনাডাঙা মাঝের পাড়ার সঞ্জু শেখ ও আশাদ আলী শেখের পরিবার নোটিসটি হাতে পেয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছে রাজ্যের শাসকদল। কেন বেআইনিভাবে নোটিস জারি করা হল নদিয়ার ওই দুই বাসিন্দার বিরুদ্ধে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। তাঁর অভিযোগ, ভোটের আগে রাজ্যে ভয়ের পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছে বিজেপি। বিজেপি যে পরিকল্পিতভাবে বিভাজনের রাজনীতি করছে তা আরও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।

    স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৩ অক্টোবর দু’জনেই একটি করে চিঠি পান। এই চিঠিটি সম্পূর্ণ অসমিয়া ভাষায় লেখা ছিল। চিঠির বিষয়বস্তু বুঝতে না পারায় তাঁরা তা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকে দেখান। পরে জানা যায়, এটি অসম রাজ্য থেকে পাঠানো নাগরিকত্ব যাচাই সংক্রান্ত নোটিস। সঞ্জু ও আরসাদ প্রায় ১৫ বছর আগে পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে অসমে গিয়েছিলেন। সঞ্জু সেখানে এক মাস এবং আরসাদ মাত্র ১৫ দিন কাজ করার পর নদিয়ায় ফিরে আসেন। এরপর আর কখনও অসমে যাননি। এত বছর পর হঠাৎ তাঁদের নামে নোটিস আসায় দুই পরিবার হতবাক হয়ে পড়েছে। দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তাঁদের। বর্তমানে দুই পরিবার প্রশাসনিক সহায়তার জন্য অপেক্ষা করছেন। তাঁরা চাইছেন, স্থানীয় প্রশাসন তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে তুলে ধরুক এবং সহানুভূতির সঙ্গে সাহায্য করুক।

    এই ঘটনার প্রতিবাদ করেছেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। তিনি বলেন, ‘অসম সরকার বেআইনিভাবে পশ্চিমবঙ্গের দু’জন নাগরিককে এনআরসি নোটিস পাঠিয়েছে। এসআইআরের নামে কেন এনআরসি নোটিশ পাঠানো হচ্ছে? এই নোটিস পাঠানোর কোনও অধিকার অসমের বিজেপি সরকারের নেই। নির্বাচনের আগে রাজ্যে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করতে চাইছে অসম সরকার। এসআইআরের আড়ালে বিজেপি ভোট কাটার ষড়যন্ত্রে নেমেছে৷ গায়ের জোরে বাংলায় এনআরসি চালু করতে চাইলেও পারবে না৷’ গোটা ঘটনার পিছনে রাজনীতি দেখছেন কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্র। তিনি আরও জানান, এই ঘটনা প্রমাণ করছে যে বিজেপি কতটা পরিকল্পিতভাবে বিভাজনের রাজনীতি করছে। এই নিয়ে নদিয়ার মানুষকে ভয় না পাওয়ার বার্তা দিয়েছেন তিনি। প্রশাসনিক ও আইনগতভাবে এই বেআইনি পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মহুয়া।

    উল্লেখ্য, অসম সরকারের তরফে পাঠানো নোটিসে সঞ্জু এবং আশাদের বিরুদ্ধে বৈধ পরিচয়পত্র ছাড়া অসমে প্রবেশের অভিযোগ করা হয়েছে৷ সেই সন্দেহে তাঁদের বিরুদ্ধে এনআরসি নোটিস পাঠানো হয়েছে৷ নিজেদের ভারতীয় হওয়ার বৈধ নথি নিয়ে দ্রুত অসমের এনআরসি কাউন্সিলের দপ্তরে জমা দেওয়ার নির্দেশ নোটিসে দেওয়া হয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হল, কিছুদিনের জন্য অসমে যাওয়া ব্যক্তিদের নাম এনআরসি তালিকায় কীভাবে উঠল? কীভাবে তাঁদের নাম ওই রাজ্যের ভোটার বা বসবাসকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হল? এই প্রশ্ন ঘিরে এলাকায় তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। সাধারণ মানুষ আতঙ্কে ভুগছেন। কারণ এই ধরনের নোটিস তাঁদের কাছেও আসতে পারে। পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে অন্য রাজ্যে কাজ করতে গিয়ে এরকম জটিলতার মধ্যে পড়তে হবে তা ভাবতে পারছেন না সঞ্জুদের পরিবার। এমন জটিলতার মুখোমুখি হতে হলে ভবিষ্যতে বাইরে কাজ খোঁজা আরও কঠিন হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকে।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)