• বন্যার কোপে ধ্বংস বন্যপ্রাণীর খাদ্যের ভাণ্ডার, বড় বিপদের আশঙ্কায় উত্তরবঙ্গ
    এই সময় | ১১ অক্টোবর ২০২৫
  • বাসুদেব ভট্টাচার্য, ময়নাগুড়ি

    বন্যার কোপে বিধ্বস্ত উত্তরবঙ্গ। জনবসতি, পর্যটন স্থল ধ্বংস হয়েছে। নষ্ট হয়েছে চাষের জমি, বাগান, সেই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও পুরোপুরি নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু এর বাইরে আরও বড় ক্ষতির আশঙ্কার খাঁড়া ঝুলছে উত্তরবঙ্গের উপর। বন্যার কারণে ধাক্কা লেগেছে বনাঞ্চলের বাস্তুতন্ত্রে। জলের তোড়ে ভেসে বহু বন্য প্রাণী যেমন মারা গিয়েছে, তেমনই বনাঞ্চলের জমিও নষ্ট হয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, বন্যপ্রাণীদের থাকার জায়গা যদি নষ্ট হয়। বনাঞ্চলে খাবারের ভাণ্ডার যদি কমে যায়, তাহলে জঙ্গল ছেড়ে লোকালয়ে আসতে শুরু করবে বন্যপ্রাণীরা। যার জেরে দীর্ঘমেয়াদে মানুষ-বন্যপ্রাণ সংঘাত চরম জায়গায় যেতে পারে।

    সম্প্রতি বাংলাদেশের কুড়িগ্রামে উদ্ধার হয়েছিল একটি গণ্ডারের দেহ। বন্যার জলের তোড়ে ভারত থেকে ওই প্রাণীটি ভেসে চলে গিয়েছিল বলে মনে করা হচ্ছে। এমন ঘটনার সঙ্গে তৃণভোজী প্রাণীদের খাদ্য ভাণ্ডারের উপর প্রভাবও পড়ছে। উত্তরবঙ্গের প্রধান মুখ্য বনপাল ভাস্কর জেভি জানিয়েছেন, গোরুমারা এবং জলদাপাড়ার বনাঞ্চল মিলিয়ে প্রায় ২৫০ হেক্টর ঘাস জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ঘাসজমি তৃণভোজী বন্যপ্রাণীদের প্রধান চারণভূমি। এখান থেকেই ওই প্রাণীরা খাবার সংগ্রহ করে। এই জমির ক্ষতি হওয়ায় টান পড়তে পারে খাবারে, এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ভাস্কর জেভি।

    তবে একটি ব্যবস্থা রয়েছে বলেও আশ্বাস তাঁর। কিছু কিছু জায়গায় আগের বছরে ঘাষ চাষ করা হয়েছিলো। সেগুলো এতদিন আটকে রাখা হয়েছিলো। এ বার ওই এলাকাগুলি খুলে দেওয়া হবে যাতে খাদ্যের অভাব কিছুটা হলেও পূরণ করা যায়। এক্ষেত্রে একটি আশার কথা শুনিয়েছেন প্রাক্তন বনকর্তারা। পশ্চিমবঙ্গ বন দপ্তরের প্রাক্তন প্রধান মুখ্য বনপাল রবিকান্ত সিনহা বলেন, ‘প্রতি কুড়ি বছর পরে এমন বিপর্যয় হওয়াটা প্রাকৃতিক ব্যাপার। সেই ক্ষেত্রে একটু-আধটু সমস্যা তো হবেই। তবে তৃণভোজী বন্যপ্রাণীদের ক্ষেত্রে সমস্যা খুব একটা বেশি হবে না। কারণ যে যে এলাকায় পলি পড়ে ঘাস নষ্ট হয়েছে, সেই এলাকাগুলোতে দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে ঘাস গজানো শুরু হবে।’ তবে একটা সমস্যা যে রয়েছে, সেটাও জানিয়েছেন তিনি। রবিকান্ত সিনহা জানাচ্ছেন, নতুন ঘাস গজানো না পর্যন্ত সমস্যা হবে। তবে অনেক বড় জঙ্গলে খাদ্যের অভাব হলে বন্যপ্রাণীরা জায়গা পরিবর্তন করে। সেক্ষেত্রে যদি তাদের লোকালয় পেরোতে হয়, তখন মানুষের সঙ্গে সংঘাতের আশঙ্কা রয়েছে। আরেক প্রাক্তন বনকর্তা কল্যাণ দাসের মতে, বনের ঘাস নষ্ট হওয়ায় খাদ্য ভাণ্ডারে প্রভাব পড়েছে। এখনই অনেশ বেশি এলাকা জুড়ে ঘাসের বীজ ছড়িয়ে দেওয়া, ঘাসের শিকড় পুঁতে দেওয়া প্রয়োজন। আগামী তিন-চার বছর ধরে এই প্রক্রিয়া চালাতে হবে।

    সেই সঙ্গে গোরুমারা এবং জলদাপাড়ার ওয়ালোপুল (যেখানে জল-কাদা মিশে থাকে, গন্ডার স্নান করে) গুলোর অবস্থা দেখে ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ। যদি সেগুলো নষ্ট হয় বা পলি জমে যায়, তাহলে সেগুলিকে গন্ডারের বাসযোগ্য করে তুলতে হবে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। নয়তো গন্ডারগুলি জঙ্গল থেকে বেরিয়ে যেতে পারে। রাজ্য বন দপ্তরের প্রধান মুখ্য বনপাল দেবল রায় জানান, এখন আহত বন্যপ্রাণীদের উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করছেন। বন্যায় জঙ্গলের পরিকাঠামো ভেঙে পড়েছে। এই ক্ষত মেরামত করতে বেশ কিছুদিন সময় লাগবে। দ্রুত সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

  • Link to this news (এই সময়)