আফগান তালিবান মন্ত্রীর সাংবাদিক বৈঠকে বাদ মহিলা সাংবাদিকরা! ক্ষোভ বাড়তেই কী ব্যাখ্যা দিল নয়াদিল্লি?...
আজকাল | ১১ অক্টোবর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: আফগাননিস্তানের তালিবান বিদেশমন্ত্রীর সাংবাদিক বৈঠককে কেন্দ্র করে বিতর্ক দামা বেঁধেছে। উঠল লিঙ্গবৈষম্যের অভিযোগ। শুক্রবার ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকের পর দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠক করেন আফগান মন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি। সেখানে কোনও মহিলা সাংবাদিককে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। যা নিয়েই সাবাদিক-সহ নানা মহলে ক্ষোভ ছড়িয়েছে। এই ইস্যুতে শনিবার নয়াদিল্লি। ভারত জোর দিয়ে বলেছে যে, আফগানিস্তানের বিদেশমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির সাবাদিক বৈঠকে তাদের কোন ভূমিকা ছিল না।
বিদেশমন্ত্রক জানিয়েছে, সংবাদ বৈঠকে আমন্ত্রণপত্র মুম্বইতে আফগানিস্তানের কনসাল জেনারেলের নির্বাচিত সাংবাদিকদের কাছে পাঠানো হয়েছিল। এইসব সাংবাদিকরা আফগান মন্ত্রীর সফরের জন্য দিল্লিতে অবস্থান করছিলেন। আফগান দূতাবাস এলাকা ভারত সরকারের এখতিয়ারভুক্ত নয়।
শুক্রবার আফগানিস্তান দূতাবাসে অনুষ্ঠিত সংবাদ বৈঠকে মহিলা সাংবাদিকরা অনুপস্থিত ছিলেন। কয়েকজন মহিলা সাংবাদিককে সাংবাদিক বৈঠকে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ করা হয়েছে। সংবাদ বৈঠকের কিছুক্ষণ পরেই, অনেক সাংবাদিক সোশাল মিডিয়ায় তাঁদের ক্ষোভ উগরে দেন। উল্লেখ করেন যে, সমস্ত মহিলা সাংবাদিক পোশাকবিধি মেনে চললেও ঢুকতে দেওয়া হয়নি সাবাদিক বৈঠকে, যা লিঙ্গবৈষম্যমূলক।
আফগানিস্তানের তালিবান সরকার মহিলাদের উপর আরোপিত বিধিনিষেধের জন্য পরিচিত, বিশেষ করে তাদের কাজ করতে বাধা দেওয়ার জন্য। সম্প্রতি, আফগান বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে মহিলাদের লেখা রচিত বই নিষিদ্ধ করেছে এবং লিঙ্গ ও উন্নয়ন, নারী সমাজবিজ্ঞান, মানবাধিকার, আফগান সাংবিধানিক আইন এবং বিশ্বায়ন ও উন্নয়ন-সহ ১৮টি কোর্স বাতিল করেছে।
ভারতের বিরোধী নেতৃত্ব আফগান মন্ত্রী সাংবাদিক বৈঠকে মহিলাদের উপর 'নিষেধাজ্ঞা'র অভিযোগ নিয়ে কেন্দ্রকে নিশানা করেছেন।
কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভঢ়রা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে এই ঘটনার বিষয়ে তার অবস্থান "স্পষ্ট" করতে বলেছেন। তিনি জিজ্ঞাসা করেছেন যে, "এ দেশে নারীরা জাতির মেরুদণ্ড এবং গর্ব। তাহলে কীভাবে ভারতের সবচেয়ে যোগ্য মহিলাদের অপমান এ দেশে অনুমোদিত হল?"
প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পি চিদাম্বরমের মতে, পুরুষ সাংবাদিকরা যখন জানতে পেরেছিলেন যে অনুষ্ঠানে মহিলাদের প্রবেশাধিকার নেই তখন তাঁদের আফগান মন্ত্রী সাংবাদিক বৈঠক থেকে ওয়াক আউট করা উচিত ছিল। বলেন, "আমি হতবাক যে, আফগানিস্তানের মন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির সংবাদ বৈঠক থেকে মহিলা সাংবাদিকদের বাদ দেওয়া হয়েছিল। আমার ব্যক্তিগত দৃষ্টিতে, পুরুষ সাংবাদিকদের যখন জানতে পেরেছিলেন যে, তাঁদের মহিলা সহকর্মীদের সেখানে ঢুকতে বাধা দেওয়া হচ্ছে (অথবা আমন্ত্রণ জানানো হয়নি), তখন তাঁদের ওয়াক আউট করা উচিত ছিল।"
মুত্তাকি বৃহস্পতিবার ভারতে আসেন এবং বৃহস্পতিবার বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈছক করেন। এই বৈঠক ভারত-আফগান সম্পর্কের ক্ষেত্রে নয়া মোড় বলে মনে করা হচ্ছে। নয়াদিল্লি ঘোষণা করেছিল যে, কাবুলে অবস্থিত ভারতীয় কারিগরি মিশনকে দূতাবাসে উন্নীত করা হবে। ভারতের এই পদক্ষেপ আফগানিস্তানের বিদেশমন্ত্রী স্বাগত জানিয়েছেন।
ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ঘোষণার সময় বলেন, "ভারত আফগানিস্তানের সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং স্বাধীনতার প্রতি সম্পূর্ণরূপে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ভারতের কারিগরি মিশনকে দূতাবাসের মর্যাদায় উন্নীত করার ঘোষণা করতে পেরে আমি আনন্দিত।" তিনি আফগানিস্তানের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে "গভীর আগ্রহ" সম্পর্কেও কথা বলেন, সেই দেশে চলমান অনেক ভারত-সমর্থিত প্রকল্পের দিকে ইঙ্গিত করেন এবং আরও ছয়টি প্রকল্পের প্রতিশ্রুতি দেন।