• ‘এআই’ যুদ্ধে এগিয়ে কোন কোন দেশ, ভারতের স্থান কোথায়
    আজকাল | ১১ অক্টোবর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিশ্বজুড়ে এখন শুরু হয়েছে এক নতুন অস্ত্র প্রতিযোগিতা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই–চালিত যুদ্ধ প্রযুক্তি তৈরির দৌড়। দেশগুলো বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করছে এমন অস্ত্র নির্মাণে, যা লক্ষ্য শনাক্ত করতে, সিদ্ধান্ত নিতে এবং যুদ্ধক্ষেত্রে মানুষের চেয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে সক্ষম। সামরিক কৌশল, গোয়েন্দা তৎপরতা ও সাইবার নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই এআই এখন হয়ে উঠছে ভবিষ্যতের প্রধান শক্তি।

    চীন: চীন ২০৩০ সালের মধ্যে ১৫০ বিলিয়ন ডলারের এআই শিল্প গড়ে তুলতে চায়, যার একটি বড় অংশ সামরিক ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত। চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি ইতিমধ্যেই এআই ব্যবহার করছে ড্রোন, যুদ্ধক্ষেত্রের সিদ্ধান্ত–সহায়ক সিস্টেম এবং সাইবার যুদ্ধের কৌশল উন্নয়নে।বেইজিং বেসরকারি খাতের উদ্ভাবনকে সামরিক প্রয়োজনে মিশিয়ে দ্রুত অগ্রগতি অর্জন করছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, চীনের এআই–চালিত ড্রোন স্কোয়াড, মুখ শনাক্তকরণ ব্যবস্থা এবং স্বয়ংক্রিয় প্রতিরক্ষা সিস্টেম, যা ভবিষ্যতের “স্মার্ট ওয়ারফেয়ার” ধারণাকে বাস্তবে রূপ দিচ্ছে।

    মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এআই–চালিত প্রতিরক্ষায় বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে। ‘সি হান্টার’ নামের স্বয়ংক্রিয় যুদ্ধজাহাজ, এআই–চালিত নজরদারি ব্যবস্থা এবং বাস্তবসময়ে তথ্য–নির্ভর যুদ্ধকৌশল প্রমাণ করছে যে মার্কিন সামরিক প্রযুক্তি কতটা এগিয়ে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতি অনুসারে যুদ্ধক্ষেত্রে সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে এখনও “মানুষ থাকবে নিয়ন্ত্রণে” । তবে প্রযুক্তির দ্রুত উন্নয়ন সেই সীমারেখাকে ক্রমেই অস্পষ্ট করে তুলছে। প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের মতে, আগামী দশকের মধ্যে এআই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ পরিচালনার প্রতিটি স্তরে অপরিহার্য উপাদান হয়ে উঠবে।

    রাশিয়া:  রাশিয়া বাজেট সীমাবদ্ধতা ও প্রযুক্তিগত পিছিয়ে থাকা সত্ত্বেও সামরিক এআই উন্নয়নে জোর দিচ্ছে। ইউক্রেন যুদ্ধ রাশিয়ার জন্য পরীক্ষাগার হয়ে উঠেছে, যেখানে ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার, ড্রোন প্রতিরোধ ব্যবস্থা ও বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা এআই ব্যবহার করা হয়েছে।তবে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে প্রযুক্তি ঘাটতি দেখা দিয়েছে, যা পূরণে মস্কো এখন চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার পথে হাঁটছে। বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়া যদি চীনের এআই গবেষণা অবকাঠামো কাজে লাগাতে পারে, তবে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে তাদের সামরিক প্রযুক্তি পুনরুজ্জীবিত হতে পারে।

    ভারত: ভারতও দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় Defense AI Council গঠন করেছে, যা বিভিন্ন প্রকল্প সমন্বয় করছে—যেমন ড্রোন স্বার্ম প্রযুক্তি, স্বয়ংক্রিয় যুদ্ধযান, নজরদারি ব্যবস্থা এবং সীমান্ত নিরাপত্তা প্ল্যাটফর্ম। ভারতীয় সেনাবাহিনী দেশীয় প্রযুক্তি সংস্থা ও স্টার্ট–আপগুলোর সঙ্গে অংশীদারিত্ব করছে, যাতে সীমান্ত অঞ্চলে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও শত্রুর গতিবিধি পর্যবেক্ষণে এআই কাজে লাগানো যায়। ভারতের লক্ষ্য হলো, “Atmanirbhar Bharat” নীতির আওতায় নিজস্ব সামরিক এআই ইকোসিস্টেম গড়ে তোলা।

    দক্ষিণ কোরিয়া:  দক্ষিণ কোরিয়া ইতিমধ্যেই Super aEgis II নামের এক উন্নত স্বয়ংক্রিয় বন্দুক পরীক্ষায় ব্যবহার করছে, যা রাতে ৪ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত লক্ষ্য শনাক্ত ও আঘাত করতে পারে। কোরীয় প্রতিরক্ষা গবেষণায় এআই ব্যবহৃত হচ্ছে কম্যান্ড–অ্যান্ড–কন্ট্রোল সিস্টেম উন্নয়নে, যা যুদ্ধক্ষেত্রে দ্রুত সমন্বয় ও তথ্য আদানপ্রদান নিশ্চিত করে। এছাড়াও দেশটি যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের সঙ্গে যৌথ সামরিক মহড়ায় এআই–ভিত্তিক কৌশলগত পরিকল্পনা যাচাই করছে, যা ভবিষ্যতের হাই–টেক যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি বাড়াচ্ছে।

    স্পষ্টতই, সামরিক এআই এখন আর ভবিষ্যতের বিষয় নয়—এটি বর্তমানের বাস্তবতা। যুদ্ধক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যতই দক্ষ হোক, মানবিক নিয়ন্ত্রণ ও নৈতিক সীমারেখা বজায় রাখা হবে আগামী দশকের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
  • Link to this news (আজকাল)