ফাঁসিদেওয়ার তিস্তা ক্যানেলে ভেসে উঠল মৃতদেহ, ধসে মৃত্যু বলে সন্দেহ, খোঁজ পুলিশের...
আজকাল | ১১ অক্টোবর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: গত কয়েকদিন আগে একটানা বৃষ্টি ও ধসে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে উত্তরবঙ্গের প্রায় প্রতিটি জেলা। যদিও সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় দার্জিলিং, মিরিক, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার-সহ অন্যান্য এলাকা। বানভাসি ডুয়ার্স ও পাহাড়ে জায়গায় জায়গায় নেমেছে ধস। নতুন করে বৃষ্টি না হওয়ায় আপাতত জল কমেছে।
সেইসঙ্গে ধসে বিদ্ধস্ত রাস্তাঘাট সারিয়ে তোলা হচ্ছে। ভয়াবহ এই বন্যায় প্রাণ হারিয়েছে মানুষ, গবাদি পশু ও বন্যপ্রাণী। এরই মাঝে শনিবার শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের অন্তর্গত ফাঁসিদেওয়া ব্লকের ফাঁসিদেওয়ার তিস্তা ক্যানেলে ভেসে উঠল এক ব্যক্তির মৃতদেহ। যা নিয়ে ফের চাঞ্চল্য গোটা এলাকা জুড়ে।
জানা গিয়েছে, শনিবার সকালে হাইড্রাল প্রজেক্টে কর্মরত নিরাপত্তারক্ষীরা দেখতে পান ক্যানেল দিয়ে একটি মৃতদেহ ভেসে আসছে। এই দেখে তড়িঘড়ি নিরাপত্তারক্ষীরা খবর দেন তিস্তা ক্যানেল হাইড্রাল প্রোজেক্টের আধিকারিক ও ফাঁসিদেওয়া থানার পুলিশ কর্মীদের। আসে ফাঁসি দেওয়া থানার পুলিশ।
এরপর পুলিশ পৌঁছে মৃতদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালে পাঠায়। তবে কীভাবে মৃত্যু হল তা নিয়ে ধন্দ্ব তৈরি হয়েছে। ফাঁসিদেওয়া থানার পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কীভাবে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হল তা ময়নাতদন্তের পরে জানা যাবে। পাশাপাশি এই মৃতদেহটি পাহাড়ের কোনও নিখোঁজ ব্যক্তির কিনা তা জানতে ইতিমধ্যে মৃতের ছবি সমস্ত থানায় পাঠানো হয়েছে।
এর পাশাপাশি ওই ব্যক্তির নাম ও পরিচয় জানার চেষ্টা শুরু করা হয়েছে। সূত্রের খবর মৃতদেহটি পাহাড় থেকেও ভেসে আসতে পারে। বন্যা শুরু হওয়ার পরেই জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার-সহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় খোলা হয়েছে অস্থায়ী একাধিক ত্রাণ শিবির। স্থানীয় পুলিশ ও অন্যদের সহযোগিতায় এই শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বানভাসি জনগণকে।
এর পাশাপাশি বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরফেও বিলি করা হচ্ছে ত্রাণ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। মানুষ ও গবাদি পশুর সঙ্গে বন্যায় বাস্তুচ্যুত হয়েছে ডুয়ার্সের বিভিন্ন বনাঞ্চলের প্রাণীরা। জঙ্গল লাগোয়া এলাকায় কোথাও কোথাও তাদের আক্রমণে প্রাণ হারাতে হয়েছে মানুষকেও।
সেইসঙ্গে আহত হয়েছেন একাধিক মানুষ। শুক্রবার কোচবিহারে একটি গন্ডারের আক্রমণে গুরুতর জখম হন দুই ব্যক্তি। দ্রুত তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। বনদপ্তরে খবর দেওয়া হলে দপ্তরের কর্মীরা কুনকি হাতির সাহায্যে গন্ডারটি ঘিরে তাকে ঘুমপাড়ানি গুলি করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে ওই গন্ডারটি ফের জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত শনিবার থেকে দার্জিলিং সহ উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে অবিরাম বৃষ্টিতে পার্বত্য অঞ্চলে নেমে আসে ভয়াবহ বিপর্যয়। শনিবার রাতভর ভারী বর্ষণ ও ধসের ফলে ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের বিভিন্ন অংশে রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে, সিকিম ও উত্তরবঙ্গের সঙ্গে যোগাযোগ প্রায় সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
জানা যায়, মিরিক ও দুধিয়া সংযোগকারী লোহার সেতুও ভেঙে পড়ে অবিরাম বৃষ্টিতে। এই সেতু দার্জিলিং বিভাগের রাজ্য সড়কের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সেনা নিয়ন্ত্রিত সেতু ভেঙে যাওয়ার ফলে শিলিগুড়ি শহর থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে ওপারে থাকা প্রায় ৩০টি গ্রাম। ফলে মিরিক থেকে শিলিগুড়ির মধ্যে কোনও সরাসরি যোগাযোগ সম্ভব হচ্ছিল না।
পর্যটকদের ফেরার জন্য বিশেষ বাসের ব্যবস্থা করো হয় উত্তরবঙ্গ পরিবহণ সংস্থার তরফে। রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী নিজে সেকথা ঘোষণা করেন। সোমবার উত্তরবঙ্গের পরিস্থিতি পরিদর্শনে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে নিহতদের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করেন তিনি।