তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব তীব্র আকার নিল খড়গপুর ২ নম্বর ব্লকের চাঙ্গুয়াল অঞ্চলে। গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের দিপালী সিংকে তাঁরই অফিস ঘরে হামলা চালিয়ে চুলের মুঠি ধরে জুতোপেটা করে মুখে কালি ছিটিয়ে দিলেন তাঁরই দলের মহিলা কর্মীরা। এক মহিলা পঞ্চায়েত সদস্যকে হেনস্থা করার অভিযোগেই এই হামলা। ওই মহিলা তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যের নাম সুজাতা দে। প্রধান এই গন্ডগোলের পিছনে বিজেপির মদত রয়েছে বলে অভিযোগ করেন। ঘটনার খবর পেয়ে গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে পৌঁছান খড়গপুর-২ নং ব্লকের জয়েন্ট বিডিও।
এদিন চাংগোয়াল গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে পঞ্চায়েতের কাজকর্ম নিয়ে একটি বৈঠকে গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যরা উপস্থিত হয়েছিলেন। সেই বৈঠক চলাকালীন আচমকাই উত্তর আড়াসিনি পঞ্চায়েতের সদস্য সুজাতা দে, প্রধানের চেয়ারের দিকে এগিয়ে যান। প্রধানের অভিযোগ, তিনি সঙ্গে দোয়াত ভরা কালি নিয়ে এসেছিলেন। সেই কালি দুহাতে মেখে তিনি প্রধানের গালে লাগিয়ে দেন। কালি প্রধানের টেবিলেও ছড়িয়ে যায়। সেই সময় প্রধান দোয়াত ভরা কালি ছিনিয়ে নিয়ে দূরে ছুঁড়ে ফেলে দেন। পিছু হটেননি সুজাতা দেবী। তিনি টেবিলের ওপর রাখা ফুলের টব নিয়ে প্রধানকে মারতে উদ্যত হন।
প্রধান আত্মরক্ষার খাতিরে বাধা দিলে টবটি পড়ে ভেঙে যায়। সুজাতা দেবীর অভিযোগ, তিনি একটি কাজ নিয়ে প্রধানকে বলতে গিয়েছিলেন তখন সিসিটিভি ক্যামেরা বন্ধ করে হাসতে হাসতে এসে প্রধান তাঁকে ফুলের টব দিয়ে আঘাত করেন। তাঁকে মারধর করা হয়। তাঁর হেনস্থা হওয়ার খবর পেয়েই তাঁর এলাকার মহিলারা অঞ্চল অফিসে পৌঁছে পাল্টা প্রধানকে হেনস্থা করেন। প্রধানের কাপড় ছিড়ে যায়। ক্ষুব্ধ কর্মীরা অঞ্চল অফিসের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেয়। প্রধানের দাবি, সিসিটিভি ফুটেজ দেখলেই আমার ঘরের ঘটনা বোঝা যাবে।
ঘটনার পর কান্নায় ভেঙে পড়ে প্রধান বলেন, একজন অন্ত্যজ সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি হিসেবে প্রতি পদে আমাকে অনেক বাধার মুখে পড়তে হয়েছে। আমি মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির কাছে অনুরোধ করছি আমাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হোক। আমি আর পারছি না। অনৈতিক দাবি মেনে নিইনি বলেই আমাকে টার্গেট করা হচ্ছে।
পঞ্চায়েত সদস্য সুজাতা দে বলেন, আমাকে পরিকল্পনা করে এই কাজ করতে পাঠানো হয়েছে। তিনি উত্তর আড়াসিনি বুথের তৃণমূল নেতা রাজেশ ভট্টাচার্যের নাম করেন। ফোনে তৃণমূল নেতা রাজেশ ভট্টাচার্যের সঙ্গে যোগাযোগেরও চেষ্টা করেন। কিন্তু রাজেশ ফোনে কোনও জবাব দেননি। সুজাতাদেবীকে পঞ্চায়েত অফিসে আটকে রাখা হয়েছে। পরে প্রধানের পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়ে তিনি ছাড়া পান।
ঘাটাল সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি অজিত মাইতি বৈঠকে ব্যস্ত থাকায় তাঁর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি।
খড়গপুর দুই নং ব্লকের বিডিও সুব্রত ঘোষ বলেন, আমার জয়েন্ট বিডিও ঘটনাস্থলে গিয়েছেন। তাঁর মাধ্যমে প্রধানকে বলেছি কারো নামে অভিযোগ জানালে তিনি পুলিশে অভিযোগ জানাতে পারেন। আমাদের তদন্ত চলছে। আমরা সমস্ত দিক খতিয়ে দেখছি।