• কারও কাছে দুটোর বেশি থাকলেই জমা দিতে হবে একটা! লাদাখে নতুন নিয়ম ...
    আজকাল | ১২ অক্টোবর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: লাদাখের প্রশাসন হিংসা-পীড়িত লেহ জেলায় অস্ত্র লাইসেন্সগুলির পুনঃসমীক্ষা শুরু করার নির্দেশ দিয়েছে। যাদের কাছে দুইটির বেশি আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে, তাদের অতিরিক্ত অস্ত্র এক মাসের মধ্যে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ১০ অক্টোবর (শুক্রবার) প্রকাশিত এক সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে লেহর অতিরিক্ত জেলা শাসক (ADC) গুলাম মহম্মদ জানিয়েছেন, যেসব লাইসেন্সধারীর কাছে দুইটির বেশি অস্ত্র রয়েছে, তাদের ওই অতিরিক্ত অস্ত্র লেহ জেলা শাসকের (DM) বিচার বিভাগীয় শাখায় জমা দিতে হবে।

    ‘Surrender of Arms Weapon who possess more than Two Firearms’ শিরোনামে প্রকাশিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এটি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশ অনুসারে জারি করা হয়েছে (F. No. V-11026/41/2025-Arms, তারিখ ২৯ আগস্ট ২০২৫)। একই সঙ্গে লাদাখ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের স্বরাষ্ট্র দপ্তরের সার্কুলার (Home/UTL(18)82025-2885-86, তারিখ ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫) ও ১৯৫৯ সালের অস্ত্র আইন (Arms Act)-এর ৩ নম্বর ধারা উল্লেখ করা হয়েছে।

    অস্ত্র আইন অনুযায়ী, কোনও ব্যক্তি সর্বাধিক তিনটি আগ্নেয়াস্ত্র রাখতে পারেন—যার মধ্যে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত অস্ত্রও অন্তর্ভুক্ত। আইনটির ৩(১) ধারায় লাইসেন্সবিহীন অস্ত্র রাখা এবং তিনটির বেশি অস্ত্র রাখাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। ৩(২) উপধারায় বলা হয়েছে, যাদের কাছে তিনটির বেশি অস্ত্র আছে, তাদের নিকটস্থ থানায় বা নির্দিষ্ট স্থানে অতিরিক্ত অস্ত্র জমা দিতে হবে।

    ADC লেহের একপাতার ওই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, লাইসেন্সধারীদের “এক মাসের মধ্যে মূল লাইসেন্সসহ জেলা শাসকের দপ্তরে হাজির হয়ে অস্ত্র লাইসেন্স পুনঃসমীক্ষায় অংশ নিতে হবে।” তবে বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট করে বলা হয়নি যে, এই পুনঃসমীক্ষা সব অস্ত্র লাইসেন্সের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য কি না, নাকি শুধুমাত্র দুইটির বেশি অস্ত্রধারীদের ক্ষেত্রেই তা কার্যকর হবে।

    লেহর উপকমিশনার (DC) রোমিল সিং দঙ্ক জানিয়েছেন, “এই নির্দেশ শুধুমাত্র লাদাখের জন্য নয়, এটি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সার্বিক নির্দেশ অনুসারে সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পাঠানো হয়েছে।” অস্ত্র আইনে সর্বাধিক তিনটি অস্ত্র রাখার অনুমতি থাকলেও বিজ্ঞপ্তিতে দুইটি অস্ত্রের সীমা নির্ধারণের কারণ জানতে চাইলে দঙ্ক বলেন, “এটি একটি আনুষ্ঠানিক পর্যালোচনার পর করা হয়েছে।” তবে তিনি স্পষ্ট করে জানাননি কোন কোন লাইসেন্স এই পর্যালোচনার আওতায় পড়ছে।

    প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই পদক্ষেপটি “অস্ত্র আইন কার্যকর করার একীকৃত প্রক্রিয়ার অংশ, যা অস্ত্র মালিকানার রেকর্ড সঠিকভাবে সংরক্ষণ, তদারকি জোরদার এবং জননিরাপত্তা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে গৃহীত হয়েছে।” ২০২৩ সালে এক তথ্য অধিকার (RTI) আবেদনে জানা গিয়েছিল, লাদাখে মোট ৪৯২ জন অস্ত্র লাইসেন্সধারী আছেন, যার মধ্যে কারগিল অঞ্চলের বাসিন্দারাও অন্তর্ভুক্ত।

    এই নির্দেশ জারির সময় লেহ এখনো ২৪ সেপ্টেম্বরের ভয়াবহ হিংসার পরবর্তী মানসিক আঘাত থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে। লাদাখের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এমন সহিংসতায় চারজন বিক্ষোভকারী নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে নিহত হন। লাদাখ স্বায়ত্তশাসিত পাহাড়ি উন্নয়ন পরিষদ (LAHDC)-এর আসন্ন নির্বাচন—যা এই বছরের শেষের দিকে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা—এই হিংসার  কারণে অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।

    সংবিধানিক সুরক্ষা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবিতে চলমান শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ওইদিন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে পরিণত হয়। অন্তত ৯০ জন বিক্ষোভকারী, যাদের অধিকাংশই নাবালক, গুলিবিদ্ধ হন। এই ঘটনার পর লেহ অ্যাপেক্স বডি ও কারগিল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স একটি অবসরপ্রাপ্ত সুপ্রিম কোর্ট বিচারপতির নেতৃত্বে বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছে। তারা জানিয়েছে, তদন্ত শুরু না হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সঙ্গে চলমান অনানুষ্ঠানিক আলোচনাও স্থগিত থাকবে।

    শাসক দল বিজেপি, যা বর্তমানে LAHDC-লেহ পরিষদে ক্ষমতায় আছে, তারাও এই বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবিকে সমর্থন জানিয়েছে। যদিও লাদাখ একটি জনবিরল অঞ্চল, তবুও অস্ত্রের সঙ্গে এই অঞ্চলের ঐতিহাসিক সম্পর্ক নতুন নয়। পাকিস্তান ও চিনের সীমান্তের নিকটে অবস্থিত হওয়ায় এবং অধিকাংশ পরিবারের সদস্য সেনাবাহিনীতে কর্মরত থাকায় এখানকার সমাজে অস্ত্র এক পরিচিত বাস্তবতা।

    বিশেষত লাদাখ স্কাউটস রেজিমেন্ট, যা ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি উচ্চতর পর্বতযোদ্ধা ইউনিট, ১৯৪৮, ১৯৬২, ১৯৬৫, ১৯৭১ ও ১৯৯৯ সালের যুদ্ধগুলিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। সিয়াচেন হিমবাহে ১৯৮৪ সালে প্রথম চেকপোস্ট স্থাপনকারী ইউনিটও ছিল এই রেজিমেন্ট। এখন পর্যন্ত তারা ৮৫০টিরও বেশি বীরত্ব পদক অর্জন করেছে।

    ২০১৮ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশে লেহ প্রশাসন অস্ত্র লাইসেন্সের ডিজিটালাইজেশন শুরু করে। ‘ন্যাশনাল ডাটাবেস অফ আর্মস লাইসেন্স’-এর অংশ হিসেবে প্রতিটি লাইসেন্সধারীকে একটি অনন্য আইডি দেওয়া হয়। যারা এই প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে অস্বীকার করেছিলেন, তাদের লাইসেন্স বাতিলের হুমকি দেওয়া হয়েছিল।

    বর্তমান পরিস্থিতিতে অস্ত্র লাইসেন্স পুনঃসমীক্ষা ও অতিরিক্ত অস্ত্র জমা দেওয়ার এই নির্দেশকে প্রশাসনের নিরাপত্তা জোরদারের পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যদিও অনেকের আশঙ্কা—এটি সহিংসতার পর প্রশাসনিক অতিসতর্কতার ফল, যা সাধারণ নাগরিকদের উপরও চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
  • Link to this news (আজকাল)