• গায়ে মানুষের গন্ধ কেন? 'অভিযোগ' তুলে ১৫ দিনের শাবককে দলছাড়া করল হাতির দল ...
    আজকাল | ১২ অক্টোবর ২০২৫
  • প্রকাশ মণ্ডল, আলিপুরদুয়ার: গায়ে মানুষের ছোঁয়া লেগেছে। ফলে আর জায়গা নেই। ১৫ দিন বয়সি হস্তি শাবককে দল থেকে বের করে দিল হাতির দল। আপাতত বনকর্মীরা উদ্ধার করে তাকে নিয়ে এসেছে জলদাপাড়ায়। সেখানে হাতি পুনর্বাসন কেন্দ্রে ঠাঁই হয়েছে তার। পশু চিকিৎসক ও বনদপ্তরের কর্মীরা তার নিরন্তর খেয়াল রেখে চলেছেন। 

    সম্প্রতি তুমুল বৃষ্টি এবং সেইসঙ্গে পার্শ্ববর্তী রাজ্য সিকিম এবং ভুটান থেকে আসা জলে প্লাবিত হয় প্রায় গোটা উত্তরবঙ্গ। বিপর্যস্ত হয়েছে জনজীবন। মানুষের সঙ্গে এই দুর্যোগ ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে বনাঞ্চলেও। ক্ষতি হয়েছে বন ও বন্যপ্রাণের। জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে গণ্ডার, হাতি, হরিণ-সহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী। পাশাপাশি প্রাণহানিও হয়েছে বন্যপ্রাণীদের। 

    বনদপ্তরের একটি সূত্র জানায়, কার্শিয়াংয়ের মেচি নদীর তীব্র স্রোতে ভেসে আসে ১৫ দিনের একটি হস্তি শাবক। শাবকটি ভাসতে ভাসতে নেপাল সীমান্তে ভারতের তারাবাড়ি এলাকায় পৌঁছে যায়। শাবককে উদ্ধার করতে মা হাতি নদীর ধার দিয়ে পাশে পাশে ছুটলেও নদীতে প্রবল জলস্রোতের জন্য উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়। শেষপর্যন্ত ভারত ও নেপাল সীমান্তের সাধারণ বাসিন্দাদের সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করে বনদপ্তর। 

    জানা গিয়েছে, উদ্ধার করার পর শাবকটিকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিতে কার্শিয়াং বিভাগের পানিঘাটা রেঞ্জের কোলাবাড়ি বিটের অন্তর্গত বনে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে দেখা যায় শাবকটি তার মায়ের কাছে আর যেতে পারছে না। একা একাই বনের মধ্যে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে। বনকর্মীদের অনুমান, উদ্ধারের সময় তার গায়ে মানুষের ছোঁয়া লাগায় যে গন্ধ তৈরি হয়েছে তার জেরেই তাকে আর ফিরিয়ে নিতে চাইছে না হাতিরা। দীর্ঘ সময় প্রতিক্ষার পর শাবকটিকে বন থেকে শেষপর্যন্ত জলদাপাড়া হস্তি পুনর্বাসন কেন্দ্রে ফিরিয়ে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেন বনকর্মীরা। 

    গত ৮ অক্টোবর চিকিৎসা ও দেখভালের জন্য শাবকটিকে জলদাপাড়ায় হস্তান্তর করা হয়। আপাতত সে অভিজ্ঞ পশু চিকিৎসক ও মাহুতদের তত্বাবধানে আছে। জানা গিয়েছে, মা ছাড়া অবস্থায় প্রথম প্রথম শাবকটি খুবই মনমরা অবস্থায় ছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সে ধীরে ধীরে মানিয়ে নিচ্ছে। তার নাম দেওয়া হয়েছে 'মায়া'। এবিষয়ে জলদাপাড়ার ডিএফও প্রবীণ কাশোয়ান জানান, 'পরিবার হারানোর বেদনা ভুলে আপাতত মায়া ভালো আছে। খুব দ্রুত তাকে হাতিদের 'পাঠশালা'য় শিক্ষা দেওয়া হবে।' ফলে কয়েকদিন পরেই মায়া তিস্তা, রাণী, গজরাজদের সঙ্গে পাঠ নেবে। 

    জানা গিয়েছে, বিগত বেশ কয়েকবছর ধরে বিভিন্ন এলাকা থেকে উদ্ধার হওয়া হস্তি শাবকদের জলদাপাড়ায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণ শেষে তাদের বিভিন্ন কাজে মোতায়েন করা হয়। তার মধ্যে যেমন পাহারা দেওয়ার কাজ আছে তেমনি আছে সাফারির কাজ। প্রশিক্ষণ শেষে মায়াও লেগে পড়বে কাজে।
  • Link to this news (আজকাল)